আমার সেদিনই সন্দেহ হয়েছিল যেদিন গ্যালিলিও
প্রথম বলেছিল পৃথিবী গোল । এই গোল, আহ্নিক গতি আর বার্ষিক গতির সমন্বয় টাও আমি
এতদিনে কিছুটা বুঝতে শেখেছি । কিন্তু এদের সাথে জন্ম-মৃত্যুর সমন্বয়টা করতে গিয়েই সমস্যাটা
এতো সহজে সে
তো আর মাথায় আসে না । কিন্তু যখন আসলো তখন সেটার সাথে এতদিন না আসার কারণটাও জানতে
পারলাম । নলকূপের পানি না দেখেই যখন বুড়িগঙ্গার জ্বলে ডুবে থাকি তখন এর গুণগান না
করতে পারলেও বিদ্বেষ তো পোষণ করতে পারিনা । আমার জন্মের আগেই যেদিন আমার জাইগোট
তৈরি হইছিল সেইদিন এ আমি এই বিষের সাগরে দুব দিয়েছিলাম । ধীরে ধীরে আমি যখন মাতৃ
গর্ভেই বড় হতে থাকলাম, আমার সেই সাগরের বিষ পানের চাহিদাও বাড়তে থাকল । আমি এর উপর
নির্ভরশীল হয়ে পড়লাম । আমার জন্মের পর আমি বুঝতেই পারলাম না যে, আমার এমন একটা
বিষের সাগরে জন্ম হয়েছে । ততদিনে আমি সেটার উপর আসক্ত হয়ে পরেছি । এখন এটাতে
আক্রান্ত হয়ে শেষ নিশ্বাসটা ত্যাগ করা ছাড়া আমার আর কোন উপায় নেই । আমি জানি
মৃত্যুর পরও এই বিষ আমার দেহটাকে জর্জরিত করবে । আমার শরীরের যতটুকু অংশ ও ভাল ছিল
সেটুকুকেও পচিয়ে ফেলবে । আমাকে মাটির সাথে মিশিয়ে ফেলবে । ধীরে ধীরে সেটাকে খনিজ
বানিয়ে ফেলবে । আমার পূর্বপুরুষের বংশধররা সেগুলো পুরাবে । এরপর এগুলোকে আবার সেই
বিষের সাগরেই ফেলে দেবে ।  আমি জানি যেকোনো
ভাবেই হোক এই বিষের কবল থেকে আমার এই দেহটাকে রক্ষা করতেই হবে । আমি ছুটে চলছি এবং
এক গ্রহের অনুসন্ধানে যেখানে এই অক্সিজেন নামের এই বিষের নেশা থেকে আমি নিজেকে মুক্ত
করতে পারব । আমার অনন্তকাল বাঁচার স্বপ্নটাকে বাস্তবে রূপায়িত করা বা রোগ মুক্তির
প্রয়াসেই আমার এই ছুটে চলা ।


নীল রঙের এই ক্ষুধার্ত যন্ত্রটা টাইম
মেশিনের থেকে কোন অংশে কম নয় । তাতে যার রোগ মুক্তির পথে ছুটে চলা তাকে পর্যটকই
বলব । আমাদের সবার সামনে দাঁড়িয়ে ভদ্রলোক আঙ্গুল নেড়ে নেড়ে তাঁর অসম্ভব থিওরির
দুর্বোধ্য পয়েন্ট গুলো আমাদেরকে বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন ।

“আমার কথাগুলো অবিশ্বাস্য মনে হলেও একটু
ভেবে দেখুন । আমরা যা ভাবি তা কখনও সত্যি নাও হতে পারে, আবার যার উপর আমরা অটল
বিশ্বাস স্থাপন করছি তাও মিথ্যা হতে পারে । আমি আজ আমার কিছু যুক্তি প্রমাণ দিয়ে সব
সন্দেহের দার ভেঙ্গে দেব । আমাদের দেহ যে কোষ দিয়ে গঠিত তা আমাদের কারই অজানা নয় ।
সেই কোষের প্রোটোপ্লাজমটুকু শুঁকিয়ে গেলে আমরা তাকে মৃত কোষ বলি । আমরা এও জানি
নির্ধারিত সময়ের পূর্বে বিনা কারণে সে কোষের সজীবতা কখনই নষ্ট হবে না । তাহলে
প্রশ্ন হল, আমরা কেন মারা যাচ্ছি ?” পর্যটকের এই কথায় আমার সবার টনক নরল । আমাদের
সবার চোখের চাহনি মলিন হয়ে গেল । এ কি কথা বলছেন তিনি । জন্ম হলে মৃত্যু বরন কেন আমার
প্রশ্নে কারও কারও হাসি পাওয়াটা দুর্বোধ্য নয় । প্রশ্ন আর উত্তরের মাঝে এইযে
সংক্ষিপ্ত ছুটে চলা তার সংক্ষিপ্ত নামই হয়তো জীবন ।

লেখক

জিওন আহমেদ

সিইও ব্যাসেট

Leave a Reply