যারা বিজ্ঞানে নিউটনের সূত্র পেড়িয়ে আইনস্টাইনের সূত্র পর্যন্ত এসেছে, তাদের
মধ্যে হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তা নীতির নাম শোনেনি এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবেনা ।
১৯২৭ সালে জার্মান পদার্থবিদ ওয়ার্নার হাইজেনবার্গ উল্লেখ করেছিলেন, “কোন কণার
অবস্থান এবং ভরবেগ একইসাথে নির্ভূলভাবে নির্ণয় করা সম্ভব নয় । এদের একটিকে যতটা
নিখুঁত করা হবে, অন্যটি তত অনিশ্চিত হবে ।” কথাগুলো সহজ হলেও অনেকের এটা বুঝতে জটিলতা
থাকে । অথবা কেন এমনটা হয়, সেটা জানা থাকেনা । কোন উদাহরণ না টেনে প্রকৃত বিষয়টি
তুলে ধরছি ।

পদার্থের কোন একটি কণা যেকোন মূহুর্তে ঠিক কোথায় আছে, তা জানার জন্য আমাদেরকে
কণাটির উপর আলো ফেলতে হবে । যার সাহায্যে আমরা এর অবস্থান নির্ণয় করতে পারবো । কিন্তু
দেখতে হলে কি পরিমাণ আলো ফেলতে হবে ? ইচ্ছেমত কোন ক্ষুদ্র পরিমাণ আলো ফেললেই হবেনা
। কারণ ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক তার কোয়ান্টামের ধারণাতে আগেই বলে দিয়েছেন, ইচ্ছেমত বা
ক্ষুদ্র পরিমাণ আলো ফেললেই হবেনা । অন্তত এক কোয়ান্টাম পরিমাণ আলো ফেলতে হবে । ঠিক
যেন এমন, সুপার শপ থেকে চিনি কিনতে গেলে চাইলেই যেকোন পরিমাণ চিনি কিনতে পারবেন না
। এক কেজি বা আধা কেজির প্যাকেটই নিতে হবে । অনেকটা সে রকম । অর্থাৎ আলো ফেললে
সেখানে সর্বনিম্ন এক কোয়ান্টাম পরিমাণ আলো ফেলতেই হবে ।

কোয়ান্টাম পরিমাণ আলো ফেলে অবস্থান সঠিকভাবে মাপা গেল, তাতে কোন সমস্যা নেই ।
কিন্ত সেই অবস্থাতে কণাটির উপর আলো পড়ায় কণাটি উত্তেজিত হবে । ফলে কণাটির গতিপথ
এমনভাবে পাল্টে যাবে যে, সেটা ভালভাবে দেখাও যাবেনা । এতে করে আমরা সঠিকভাবে তার
ভরবেগ নির্ণয় করতে পারবোনা ।

যদি আলো না ফেলে চেষ্টা করি, সেক্ষেত্রে এর গতিপথ পরিবর্তন না ঘটার কারণে এর
ভরবেগ সঠিকভাবে মাপা যাবে । কিন্তু সেক্ষেত্রে কণাটি স্পষ্টভাবে দেখা যাবেনা
বিধায়, এর অবস্থান নির্ণয় করা সঠিক হবেনা ।

তাহলে এই ভুলের পরিমাণ কত ? কণার অবস্থান এবং ভরবেগ নির্ণয়ের এই ত্রুটির সর্বনিম্ন
পরিমাণ হবে, প্ল্যাঙ্কের ধ্রুবকের মানকে ঐ কণার ভরের দিগুণ দিয়ে ভাগ করলে যে মান
পাওয়া যায়, তার মানের সমান ।

ল্যাপ্লাসের লক্ষ ছিল, যেকোন একটি তাতক্ষনিক সময়ে মহাবিশ্বের কণাদের অবস্থান
এবং ভরবেগ জানা । কিন্তু হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তা নীতির মাধ্যমে তার এই ইচ্ছের পতন
ঘটেছিল ।

জিওন আহমেদ

This Post Has One Comment

Leave a Reply