পদার্থবিজ্ঞানের যে শাখায় তাপ এবং যান্ত্রিক শক্তির পরষ্পর রূপান্তর ও পরষ্পর সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করে, তাকে তাপগতিবিদ্যা বলে । �

তাপগতিবিদ্যার শূন্যতম সূত্র

তাপগতিবিদ্যার শূন্যতম সূত্র অনুসারে- তিনটি বস্তুর মধ্যে প্রথম প্রথম এবং দ্বিতীয় বস্তু যদি তাপীয় সাম্যবস্থায় থাকে অর্থাৎ তাপমাত্রা সমান হয়, একইভাবে দ্বিতীয় ও তৃতীয় বস্তু যদি তাপীয় সাম্যবস্থায় থাকে তবে প্রথম ও তৃতীয় বস্তু তাপীয় সাম্যবস্থায় থাকবে ।

তাপগতিবিদ্যার শূন্যতম সূত্রের উপর কিভাবে থার্মোমিটার কাজ করে?�

মূলত তাপগতিবিদ্যার প্রথম সূত্রের উপর থার্মোমিটার নীতি কাজ করে । থার্মোমিটারে ব্যবহৃত পারদ বা ব্যবহৃত পদার্থকে মূলত আমরা একটি স্কেলের সাথে এমনভাবে জুড়ে দেই, যাতে সেই পদার্থ বা পারদ নিজের তাপমাত্রা পরিমাপ করতে পারে ।

এখানে

  • আমাদের বডিঃ প্রথম বস্তু
  • থার্মোমিটারঃ দ্বিতীয় বস্তু
  • থার্মোমিটারে ব্যবহৃত পারদঃ তৃতীয় বস্তু

প্রথম ও দ্বিতীয় বস্তুর তাপমাত্রা সমান করতে আমরা আমাদেরশরীরের সাথে থার্মোমিটারের ভাল্ভ স্পর্শ করে রাখি । এতে আমাদের বডির তাপমাত্রার সাথে থার্মোমিটারের ভাল্ভের তাপমাত্রা সমান হয় । এখানে থার্মোমিটারের ভাল্ভের সাথে স্পর্শরত অবস্থায় থাকে পারদ । কাজেই পারদের তাপমাত্রা ভাল্ভের তাপমাত্রার সমান হয় । অর্থাৎ দ্বিতীয় ও তৃতীয় বস্তুর তাপমাত্রা সমান হয় ।

তাহলে আমরা বলতে পারি- তাপগতিবিদ্যার শূন্যতম সূত্রের আলোকে প্রথম ও তৃতীয় বস্তুর তাপমাত্রা সমান । অর্থাৎ আমাদের বডির তাপমাত্রা এবং পারদেরতাপমাত্রা সমান । আগেই বলেছি- পারদের তাপমাত্রাই থার্মোমিটারের স্কেলে আমরা দেখতেপাই । এক্ষেত্রেও আমরা তাই দেখতে পাবো । যেহেতু পারদের তাপমাত্রা আমাদের বডির তাপমাত্রার সমান । তাই বলতে থার্মোমিটারে প্রদর্শিত তাপমাত্রাই আমাদের বডির তাপমাত্রা । এভাবেই থার্মোমিটার আমাদের বডির তাপমাত্রা মেপে থাকে ।

তাপগতিবিদ্যার প্রথম সূত্র

তাপগতিবিদ্যার প্রথম সূত্রে দুইজনের বিবৃতি উল্লেখযোগ্য । এনারা হলেন জুল এবং ক্লসিয়াস ।

তাপগতিবিদ্যার প্রথম সূত্রে জুলের বিবৃতি

কোন ইঞ্জিন কতৃক কৃত কাজ ইঞ্জিনে প্রদত্ত তাপের সমানুপাতিক । অর্থাৎ জুলের বিবৃতি অনুসারে ইঞ্জিনে যে পরিমাণ তাপ দেওয়া হবে, ইঞ্জিন তার অনুপাতেই কাজ করবে ।

তাপগতিবিদ্যার প্রথম সূত্রে ক্লসিয়াসের বিবৃতি

কোন ইঞ্জিনে যে পরিমাণ তাপ দেওয়া হবে, সেই তাপ দুইটা ক্ষেত্রে ব্যয় হবে । প্রদত্ত তাপের কিছু অংশ দিয়ে ইঞ্জিন উত্তপ্ত হবে তথা ইঞ্জিনের অভ্যন্তরীণ শক্তি বৃদ্ধি পাবে এবং বাকি অংশ দিয়ে ইঞ্জিন কাজ সম্পাদন করবে ।

অর্থাৎ ইঞ্জিনে দেওয়া তাপ = ইঞ্জিনের অভ্যন্তরীণ শক্তি বৃদ্ধি + ইঞ্জিন কতৃক কৃত কাজ

তাপগতিবিদ্যার দ্বিতীয় সূত্র

ইঞ্জিনের উপর বিভিন্ন গবেষণার ফলাফল থেকে বিখ্যাত প্রকৌশলী সাদি কার্নো এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, তাপশক্তিকে কখনই সম্পূর্ণরূপে কাজে পরিণত করা যায় না। তার এই বক্তব্যই তাপগতিবিদ্যার দ্বিতীয় সূত্রের ভিত্তি। তবে এখানেও বেশ কয়েকজন বিজ্ঞানীর বিবৃতি রয়েছে ।

ক্লসিয়াসের বিবৃতি

বাইরে থেকে কোনো শক্তির সাহায্যে ছাড়া কোনো স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের পক্ষে নিম্ন তাপমাত্রার কোনো বস্তু হতে উচ্চ তাপমাত্রার কোনো বস্তুতে তাপের স্থানান্তর সম্ভব নয়।

অর্থাৎ বাইরের কোনো ইঞ্জিন দিয়ে কাজ করানো ছাড়া শীতল বস্তু হতে উষ্ণ বস্তুতে তাপ নিজে প্রবাহিত হতে পারে না।

কেলভিনের বিবৃতি

কোনো বস্তুকে তার পরিপার্শ্বের শীতলতম অংশ হতে অধিকতর শীতল করে শক্তির অবিরাম সরবরাহ পাওয়া সম্ভব নয়। অর্থাৎ একটি বস্তু যে পরিবেশে রয়েছে, বস্তুর তাপমাত্রা সেই পরিবেশের তাপমাত্রার চেয়ে কম হওয়া সম্ভব নয় ।

প্ল্যাংক এর বিবৃতি

কোনো তাপ উৎস হতে অনবরত তাপ শোষণ করবে এবং তা সম্পূর্ণরূপে কাজে রূপান্তরিত হবে এরূপ একটি তাপ ইঞ্জিন তৈরি করা সম্ভব নয়। অর্থাৎ এমন কোন ইঞ্জিন তৈরি করা সম্ভব নয়, তার কর্মদক্ষতা শতভাগ ।

কার্নোর বিবৃতি

কোনো নির্দিষ্ট পরিমাণ তাপশক্তি সম্পূর্ণ বা পুরোপুরিভাবে যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তর করার মতো যন্ত্র তৈরি করা সম্ভব নয়। অর্থাৎ তুমি যে পরিমাণ খাবার খাও, সেই পরিমাণ কাজ করতে পারবেনা ।

Leave a Reply