কোন একটি মাধ্যমে একটি তরঙ্গ অগ্রসর হলে তাকে আমরা অগ্রগামী তরঙ্গ বলি । ওই মাধ্যমে একটি মাত্র তরঙ্গের আচরণ কেমন হবে তা আমাদের সকলেরই জানা । নিম্ন মাধ্যমিক থেকেই পুকুরের পানিতে ঢিল ছোড়ার উদাহরণ দিয়ে আমরা অনেক বার এ তরঙ্গ সম্পর্কে জেনেছি । একই  মাধ্যমের মধ্য দিয়ে দুই বা ততোধিক তরঙ্গ একই সঙ্গে চলতে থাকলে কি ঘটবে
বা তাদের গতিবিধি কেমন হবে

পুকুরের পানিতে না নেমে, দুই হাত একটু প্রসারিত করে, দুই হাত দিয়ে দুইটি
স্থানে ঢেউ তৈরি করতে থাকো । চেষ্টা করবে যেন উভয় ঢেউয়ের বিস্তার একই বা কাছাকাছি
হয় । যেহেতু ঢেউ দুটি খুব বেশি দূরে দূরে অবস্থান করছেনা, তাই এরা যখন একটি অপরটির
সাথে ধাক্কা খাবে বা একে উপরের উপর উপরিপাতিত হবে তখন ছেদকৃত স্থানে কি ঘটে লক্ষ
কর ।

দুই বা ততোধিক তরঙ্গ কোন মাধ্যমের মধ্যদিয়ে একই সাথে চলতে থাকলে আমরাযে
ভিন্নতা দেখতে পাই । এ নিয়ে বিজ্ঞানী হাইগেনস একটি সূত্র প্রদান করেন । তা হল-

যখন দুই বা ততোধিক তরঙ্গ একই মাধ্যমের মধ্যদিয়ে
সঞ্চালিত হতে থাকে তখন এরা একটি অপরটি সাপেক্ষে স্বাধীনভাবে সঞ্চালিত হয় । আবার
মাধ্যমের যে স্থানে তরঙ্গগুলো উপরিপাতিত হয়, সেই স্থানে যেকোন কণার লব্ধি সরণ,
প্রতিটি তরঙ্গ পৃথকভাবে ওই কণার যে সরণ সৃষ্টি করে তাদের ভেক্টর যোগফলের সমান হয় ।
এই সূত্রকে আমরা তরঙ্গের উপরিপাতনের সূত্র বা উপরিপাতন নীতি বলে থাকি ।

অর্থাৎ কোন একটি কণার উপর একই সময়ে দুটি তরঙ্গ উপরিপাতিত হলে, সাম্যবস্থান
হতে কণাটির লব্ধি সরণ হবে তরঙ্গটির দুইটির প্রত্যেকটির জন্য কণাটির আলাদা আলাদা
সরণের ভেক্টর যোগফলের সমান ।

একই মাধ্যমের মধ্যদিয়ে বিভিন্ন তরঙ্গ যে স্বাধীনভাবে সঞ্চালিত হয়, আমাদের
দৈনন্দিন জীবনে তার কিছু বাস্তব উদাহরণ রয়েছে । যেমনঃ একই সাথে দুইজন লোক কথা বললে
আমরা তাদের দুইজনের কথা অবিকৃতভাবে শুনতে পাই, ছবি তোলার সময় বিভিন্ন বস্তু হতে
আগত আলোগুলো ক্যামেরার সাটারের ছিদ্রের মধ্যদিয়ে একই সঙ্গে ভিতরে ঢোকে কিন্তু এরা
একে অপরকে প্রভাবিত করেনা, এমনকি একটি ক্যামেরা অপর একটি ক্যামেরাকেও নয় ।

 তবে এই উপরিপাতনের জন্য কিছু শর্তও রয়েছে । যথা-

  • মাধ্যমের
    মধ্যদিয়ে সঞ্চালিত তরঙ্গগুলোর বিস্তার খুব বেশি হলে উপরিপাতনের সূত্রটি প্রযোজ্য
    হবেনা ।
  • কম্পাঙ্কের
    পার্থক্য খুব বেশি হলে উপরিপাতনের সূত্রে জটিলতা দেখা যায় । তবে সেক্ষেত্রেও এই
    সূত্রটি গ্রহনযোগ্যতা হারাবেনা ।


Jeion Ahmed 

Leave a Reply