অনেকেই বলে থাকে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ফলে আমাদের ভবিষ্যৎ ধ্বংসের মুখে পড়বে, মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়বে ইত্যাদি । আবার অনেকে ভাবছে, এমনটা হবেনা বরং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাই মানুষের নতুন কর্মসংস্থান তৈরি করে দেবে । কিন্তু আমরা যদি ইতিহাসের দিকে তাকাই তাহলে দেখবো, অষ্টাদশ-উনবিংশ শতাব্দীতে শিল্প বিপ্লবের সময় কর্মসংস্থানের জন্য মানুষকে যন্ত্রের সাথে পাল্লা দিতে হয়েছিলো। কিন্তু সেই সময় পরিস্থিতি ছিল ভিন্ন। শিল্প বিপ্লবের ফলে নতুন নতুন শিল্পকারখানা স্থাপিত হয়েছিলো। তার ফলে মানুষের জন্য নতুন কর্মসংস্থানেরও সুযোগ হয়েছিলো। শিল্প বিপ্লবের সময় মানুষ কর্মহীন হয়নি, বরং তার জীবনের মান উন্নত হয়েছিলো।

কিন্তু বর্তমানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাথে যোগ হয়েছে রোবটিক্স। মানুষের দৈহিক এবং মানসিক সব ধরনের কাজই করতে পারবে কৃত্রিমবুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন রোবট। এর ফলে অদূর ভবিষ্যতে অনেক শিল্প-কারখানায় কাজ করার জন্য মানুষের প্রয়োজন হবে না। চাকরি হারাবে কোটি কোটি শিল্প শ্রমিক। শুধু তাই নয়, এর ফলে চিকিৎসক, প্রকৌশলী সহ বিভিন্ন দক্ষ পেশার লক্ষ লক্ষ মানুষও তাঁদের কাজ হারাবেন। অনেকের মতে, আর মাত্র দুই দশকের মধ্যেই পৃথিবীর দুই বিলিয়ন মানুষ কর্মক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়বেন। ভয়াবহ বেকারত্ব দেখা দিবে সারা পৃথিবীতে। তখন সামাজিক এবং রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে এর মারাত্মক প্রভাব পড়াটাই স্বাভাবিক।

প্রফেসর স্টিফেন ডব্লিউ হকিং অবশ্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে আরেকটি মারাত্মক বিপদের কথা বলেছেন। তাঁর মতে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এক সময় এমন একটি পর্যায়ে পৌঁছে যাবে তখন এটি মানুষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। এটি আগামী শতাব্দীর মধ্যেই ঘটতে পারে। একে বলে, টেকনোলজিক্যাল সিঙ্গুলারিটি। ‌ কৃত্রিমবুদ্ধিমত্তা তখন নিজে নিজেই আরও উন্নত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সৃষ্টি করবে। এটি হবে মানব সভ্যতার অস্তিত্বের জন্য সরাসরি হুমকি। অতএব সাধু সাবধান। প্রফেসর হকিং বলেছেন, ভবিষ্যতে বিভিন্ন কারণে মানব সভ্যতার অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখীন হতে পারে। তার মধ্যে একটি হলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অনিয়ন্ত্রিত বিস্তার এবং ব্যবহার। তিনি মনে করেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দ্রুত উন্নয়নের ফলে ভবিষ্যতের মানব সমাজের উপর এর কি ধরনের প্রভাব পড়বে তা নিয়ে এখনই জোর গবেষণা হওয়া উচিত। এ সব গবেষণার উপর ভিত্তি করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের জন্য আগেভাগেই ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। আগুন জ্বালানোর পাশাপাশি আগুন নেভানোর ব্যবস্থাটিও যেন মানুষের হাতেই থাকে। তা না হলে মহাবিপদের আশঙ্কা রয়েছে।

Leave a Reply