জড়তার ভ্রামক

জড়তার ভ্রামককে অনেক ভাবে সঙ্গায়িত করা যায়৷ যেমন-

একটি কণার ভর ও ঘূর্ণন অক্ষ হতে এর লম্ব দূরত্বের বর্গের গুণফলকে উক্ত কণার জড়তার ভ্রামক বলে। এভাবে বস্তুর মধ্যস্থিত সবগুলো কণার জড়তার ভ্রামকের সমষ্টিকে পুরো বস্তুটির জড়তার ভ্রামক বলে।

অন্যভাবে বলতে গেলে- কোন অক্ষের চারদিকে ঘূর্ণায়মান কোন বস্তুর ওপর যে টর্ক প্রয়োগ করলে তাতে একক কৌণিক ত্বরণের সৃষ্টি হয় তাকে ওই অক্ষের সাপেক্ষে তার জড়তার ভ্রামক বলে।

সহজভাবে বলতে গেলে- আমরা জানি বস্তুর রৈখিক গতীয় রাশিগুলো কৌণিক গতির ক্ষেত্রে ভিন্নরুপ হয়ে যায়৷ সেই দিক থেকে বস্তুর কৌণিক ভরকে জড়তার ভ্রামক বলতে পারি৷ অর্থাৎ একটা বস্তু সরলেরেখায় চললে ভরের যে ভূমিকা, কৌণিক গতিতে চললে জড়তার ভ্রামকের একই ভূমিকা।

চক্রগতির ব্যাসার্ধ

ঘূর্ণন অক্ষের সাপেক্ষে দৃঢ় বস্তুতে এমন একটি বিন্দু আছে, যে স্থানে বস্তর সমস্ত ভর কেন্দ্রীভূত বলে বিবেচনা করা গেলে, ঘূর্ণন অক্ষের সাপেক্ষের ঐ বিন্দুতে বস্তুর জড়তার ভ্রামক দৃঢ় বস্তুর জড়তার ভ্রামকের সমান হবে।

কোন নির্দিষ্ট অক্ষের সাপেক্ষে ঘূর্ণায়মান কোন দৃঢ় বস্তুর ক্ষেত্রে, উক্ত ঘূর্ণন-অক্ষ হতে যে দূরত্বে বস্তুর সমস্ত ভর কেন্দ্রীভূত আছে বলে মনে করলে বস্তুটির জড়তার ভ্রামকের সমান হয়, তবে ঐ নির্দিষ্ট অক্ষ থেকে কেন্দ্রীভূত বস্তুকণার লম্ব দূরত্বকে চক্রগতির ব্যাসার্ধ বলে।

অথবা, কোন দৃঢ় বস্তুর সমগ্র ভর যদি একটি নির্দিষ্ট বিন্দুতে কেন্দ্রীভূত করা যায় যাতে করে একটি নির্দিষ্ট অক্ষের সাপেক্ষে ঐ কেন্দীভূত বস্তুকণার জড়তার ভ্রামক, ঐ নির্দিষ্ট অক্ষের সাপেক্ষে সমগ্র দৃঢ় বস্তুর জড়তার ভ্রামকের সমান হয়, তাহলে ঐ নির্দিষ্ট অক্ষ থেকে কেন্দ্রীভূত বস্তুকণার লল্ব দূরত্বকে চক্রগতির ব্যাসার্ধ বলে।

চক্রগতির ব্যাসার্ধ এর ব্যাখ্যা

ধরুন আপনাকে একটা আপেল এনে দিয়ে বললাম আপেলটা খান৷ মনে করুন আপনি জীবনে আজ প্রথম আপেল খাবেন৷ এবার আপনি একটা ব্লেন্ডার একে আপেলটাকে ব্ল্যান্ড করে জুস বানালেন৷ এরপর সেটাকে গ্লাসে ঢেলে স্ট্র দিয়ে খেয়ে নিলেন৷ অনেক ঝামেলা না? মনে করুন আপনি এভাবেই আপেল খেতে শিখলেন এবং নিয়মিত এভাবেই আপেল খান৷

হঠাৎ একদিন আপনি আপেল এনে ব্ল্যান্ড না করে কামড় দিয়ে দেখলেন৷ আপনি দেখলেন আপেলটা আপনি চাইলে এভাবেও খাইতে পারতেন ব্ল্যান্ড করার ঝামেলা ছাড়া৷ এক্ষেত্রেও আপনি আপেলের একই পরিমাণ পুষ্টি পাবেন৷ তাহলে এই যে আপনি অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে আপেল খাওয়ার শর্টকাট আবিস্কার করে ফেললেন, সেটাই চক্রগতির ব্যাসার্ধের মত৷

প্রথমে একটা বস্তুকে ক্যালকুলাসের সাহায্যে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র করে কেটে সেটার জড়তার ভ্রামক বের করলেন কারন বস্তুটির প্রকৃত ভরকেন্দ্র কোথায়, আপনি সেটা জানতেন না৷ এবার আপনি কোন কারন ছাড়াই বস্তুর মাঝে যেকোন একটি বিন্দুতে বস্তুর ভরকেন্দ্র ধরে নিয়ে জড়তার ভ্রামক বের করলেন৷ এই দুইভাবে নির্ণীত জড়তার ভ্রামক যদি সমান হয়, তাহলে যে বিন্দুকে আপনি ভরকেন্দ্র ধরে নিয়েছিলেন সেই বিন্দু থেকে ঘূর্ণন অক্ষের লম্ব দূরত্বকে বলা হবে চক্রগতির ব্যাসার্ধ৷

এখানে অনেকেই মনে করতে পারেন, তাহলে যে বিন্দুকে ভরকেন্দ্র ধরে নিয়ে জড়তার ভ্রামক বের করলেন সেটি আসল ভরকেন্দ্র৷ কিন্তু না৷ সেটি ভরকেন্দ্র নয়৷ এক্ষেত্রে ঘূর্ণন অক্ষ হতে সেই বিন্দুর সমপরিমাণ দূরত্বে ভরকেন্দ্র আছে সেটা বলা যায়৷

Leave a Reply