সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন হোয়াইট হাউসে দাঁড়িয়ে মহাকাশের একটি ছবি প্রকাশ করেছেন । যেটিকে ৪৬০ কোটি বছর আগের ছবি বলে দাবী করা হয়েছে । এখন বিজ্ঞান মনস্ক অনেকের মনে প্রশ্ন জেগেছে, আজকে প্রকাশিত এই ঐতিহাসিক ছবিটি ৪.৬ বিলিয়ন বা ৪৬০ কোটি বছরের আগের হওয়া কিভাবে সম্ভব ?

এই বিষয়টি বুঝতে হলে আমাদের আলোক সময় সম্পর্কে জানতে হবে । আমরা জানি, মহাবিশ্বের এই বিশাল থেকে বিশালতর দূরত্বকে আলোকবর্ষ দিয়ে প্রকাশ করা হয় ।

এখন বলি আলোক সময় আসলে কি ? সূর্য থেকে পৃথিবীতে আলো আসতে সময় নেয় ৮ মিনিট ১৯ সেকেন্ড । আলোক সময়ের হিসেবে পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব ৮.৩১ মিনিট আলোক সময়। আলোর গতির সাথে এই দূরত্ব হিসেব করা হয় । তাহলে পৃথিবী থেকে এই মুহুর্তে আমরা সূর্যের যে অবস্থা দেখছি তা সূর্যে ঘটে গেছে ৮ মিনিট ১৯ সেকেন্ড আগে । সূর্যে ঘটে যাওয়া ঘটনা পৃথিবীতে আসতে সময় নেয় ৮ মিনিট ১৯ সেকেন্ড।  মূলত আমরা অতীত দেখতে পাই ।

এখন আসি আলোক বর্ষে । আলো এক বছর সময়ে যতটুকু পথ অতিক্রম করতে পারে তাকে বলা হয় ১ আলোক বর্ষ । ১ আলোক বর্ষ = ৯.৪৬১×১০^১২ কিলোমিটার । এই বিশাল মহাবিশ্বের দূরত্ব যদি আমরা সাধারণ কি.মি. প্রকাশ করতে যাই তাহলে অনেক ঝামেলা পোহাতে হবে ।

জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ

আমাদের সৌর জগতের সবচেয়ে কাছে নক্ষত্র প্রক্সিমা সেন্টোরি । পৃথিবী থেকে এর দূরত্ব ৪.২৪ আলোক বর্ষ । অর্থাৎ এই তারার আলো পৃথিবীতে আসতে সময় নেয় ৪ বছর ৩ মাস প্রায় । আমরা মূলত পৃথিবী থেকে যখন এই নক্ষত্রকে দেখতে পাই সেটা মূলত তার আরো ৪ বছর ৩ মাস আগের অবস্থা । সেই হিসেবে মহাকাশের সকল কিছুরই অতীত দেখতে পাই আমরা ।

জেমস ওয়েভ স্পেস টেলিস্কোপের যে ছবিটা প্রকাশ পেয়েছে তার দূরত্ব পৃথিবী থেকে ৪.৬ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে । অর্থাৎ এই ছবিতে আমরা গ্যালাক্সিগুলোর যে অবস্থান দেখছি তা মূলত ৪.৬ বিলিয়ন বছরের পুরনো ।

তাহলে ধরুন ছবিতে প্রকাশিত কোনো গ্যালাক্সির কোনো একটি গ্রহ থেকে এই মুহুর্তে আমাদের চেয়েও উন্নত মস্তিষ্কের কোন প্রাণী আছে । তারা যদি আরো উন্নত কোন টেলিস্কোপ দিয়ে আমাদের পৃথিবীতে নজর দেয় তাহলে তারা এই মুহুর্তে পৃথিবীতে ডাইনোসরের বিচরণ বা তারও পূর্বের অবস্থান দেখতে পাবে । আর সেই হাইপোথেসিস অনুসারেই এটি ৪৬০ কোটি বছর আগের ছবি হওয়া সম্ভব ।

Leave a Reply