প্রবাদ আছে, যেমন কর্ম তেমন ফল । এই কথাটিকে
পরিবর্তন করে আমি যদি এভাবে লিখি, যত কর্ম তত ফল । সে কর্ম এবং ফল ভাল বা খারাপ
যেকোন কিছুই হতে পারে । তাহলে কেউ অস্বীকার করবেনা । সত্যিই তো, মানুষ ভাল কাজের
ফল ভাল এবং খারাপ কাজের ফল খারাপ পায় । আবার ফলের পরিমাণ ততটুকুই হয়, কাজের পরিমাণ
যত হয় ।

তাপগতিবিদ্যার প্রথম সূত্রটি এমনই ।
বিজ্ঞানী জেমস প্রেসকট জুলের বিবৃতি অনুসারে, আমরা কোন একটি তাপীয় ইঞ্জিনে যত বেশি
তাপ দেব, ইঞ্জিনটি তত বেশি কাজ করবে । অর্থাৎ কাজ হবে আমাদের দেয়া তাপের
সমানুপাতিক । বলে রাখি, যেসকল যন্ত্র তাপশক্তির মাধ্যমে চলে তাদেরকে আমরা তাপীয়
ইঞ্জিন বলে থাকি । আর একটু কঠিন ভাষায় বললে, যেসকল যন্ত্র তাপশক্তিকে যান্ত্রিক
শক্তিতে রুপান্তরিত করে তাদেরকে তাপীয় ইঞ্জিন বলে ।

কিন্তু জুলের বিবৃতিতে আপত্তিকর কিছু আছে ।
জুলের বিবৃতিটি কিছু ক্ষেত্রে সত্য হলেও, সামগ্রিক দিক থেকে চিন্তা করলে এতে ত্রুটি
আছে । জুলের সূত্রানুসারে আমরা যদি কোন একটা ইঞ্জিনে তাপ দেই, সেটা সাথে সাথে
তাপের সমানুপাতিক হারে কাজ শুরু করার কথা । কিন্তু বাস্তবিক দিক থেকে কোন একটা
ইঞ্জিনে তাপ দেয়ার সাথে সাথে সেটা কাজ করতে সক্ষম হয় না । প্রথমে ইঞ্জিনটি উত্তপ্ত
হয় এবং কিছুক্ষণ পর কাজ শুরু করে । বিজ্ঞানী জুল যেহেতু সামানুপাতিকের কথা উল্লেখ
করেছেন, তাই এমনটা কখনই হওয়া উচিত নয়, আমি তাপ দিচ্ছি কিন্তু কাজ শূন্য । তাই আমরা
এক্ষেত্রে জুলের সূত্র মানতে পারিনা । এখন তাহলে বাস্তব ঘটনাটিকে ব্যাখ্যা করা যাক

আসলে আমরা যখন কোন তাপীয় ইঞ্জিনে তাপ দেই,
সেটা আমাদের দেয়া তাপ থেকে প্রথমে কিছুটা তাপ নিজে গ্রহণ করে উত্তপ্ত হয় । একটা
নির্দিষ্ট পরিমাণ তাপ শোষণ করার পর এটি কাজ করতে শুরু করে । যেমন আমি যদি ১০
ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রার কোন ইঞ্জিনকে ৯০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় তাপ
দিতে শুরু করি, তবে ইঞ্জিনটি প্রথমে আমার দেয়া তাপ থেকে কিছুটা তাপ গ্রহণ করে
নিজের তাপমাত্রা বাড়িয়ে ৯০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড করে নেবে । এরপর সেটি কাজ শুরু করবে
। এখন আমি এই তাপমাত্রায় যত তাপ দিতে থাকবো, তত কাজ পাব । তাই তাপ শোষণ করার পর
ইঞ্জিনটি জুলের সূত্রকে সমর্থন করে, এমনটা বলা ঠিক না হলেও খুব বেশি ভুল হবেনা ।

আবার আমরা যদি আমাদের এই ৯০ ডিগ্রি
সেন্টিগ্রেডের ইঞ্জিনটিকে যে তাপ দিচ্ছি, তার তাপমাত্রা বাড়িয়ে ১০০ করি তবে আবারো
আমাদের ইঞ্জিনটি কিছুটা তাপ শোষণ করবে । শোষণ করে নিজের তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি
বাড়িয়ে ১০০ ডিগ্রি করবে এবং কাজ করবে । এক্ষেত্রে ইঞ্জিন যে কিছুটা তাপ গ্রহণ করে
নিজের তাপমাত্রা বাড়াচ্ছে, এটাকে আমরা বলি- অভ্যন্তরীণ শক্তির পরিবর্তন । অর্থাৎ
ইঞ্জিনটি নিজের অভ্যন্তরিত শক্তি বাড়িয়ে নিচ্ছে ।

কাজেই আমরা তাপগতিবিদ্যার প্রথম সূত্রটিকে
এভাবে পড়ি, কোন একটা ইঞ্জিনে আমরা যে পরিমাণ তাপ দেব, তার কিছুটা অংশ ইঞ্জিন
অভ্যন্তরিণ শক্তি বাড়াতে ব্যয় করবে এবং বাকি অংশ দিয়ে কাজ করবে ।

জিওন আহমেদ

Leave a Reply