জ্বলন্ত চুলায় এক বাটি কেরোসিন তেল ঢেলে দিলে দাউদাউ করে আগুন জ্বলতে শুরু করে । কিন্তু তেলের পরিবর্তে পানি ঢাললে সাথে সাথে আগুন নিভে যায় । এটি প্রকৃতির নিতান্তই একটি সাধারণ ঘটনা । কিন্তু এই সাধারণ ঘটনাটি একজন চিন্তাশীল মানুষকে অসাধারনভাবে ভাবিয়ে তোলে । কেরোসিন তেল দিলে আগুন বাড়লেও পানিতে কেন আগুন নিভে গেল ? উভয়ই তরল পদার্থ হওয়া সত্ত্বেও কেন তাদের সাথে এই ভিন্ন ভিন্ন আচরণ ?

বিজ্ঞান কাকে বলে ?

আমাদের চারপাশে কিংবা প্রকৃতিতে ঘটে যাওয়া প্রত্যহিক ঘটনা এবং সেসব ঘটনার কারণ ব্যাখ্যা দেয় বিজ্ঞান । তাই সহজভাবে বিজ্ঞানের সংজ্ঞা হবে- বিজ্ঞান হল জ্ঞান বিজ্ঞানের এমন একটি শাখা যা ভৌত জগতের সমস্ত ঘটনা এবং সেসব ঘটনার কারণ ব্যাখ্যা করে । সেই সাথে ভৌত বিশ্বের যা কিছু পর্যবেক্ষণযোগ্য, পরীক্ষণযোগ্য ও যাচাইযোগ্য, তার সুশৃঙ্খল, নিয়মতান্ত্রিক গবেষণা ও সেই গবেষণালব্ধ জ্ঞানভাণ্ডারের নাম বিজ্ঞান ।

ভৌত বিজ্ঞান কাকে বলে ?

ভৌত বিজ্ঞান হল বিজ্ঞানের একটি শাখা যেখানে ভৌত বা জড় ব্যবস্থাসমূহ নিয়ে আলোচনা করা হয় । তবে বিজ্ঞানের আলোচনার বেশিরভাগ অংশই ভৌত জগতকে নিয়ে । পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণা পরমাণু কিংবা ইলেকট্রন থেকে শুরু করে অসীম মহাকাশ পর্যন্ত এসবই এই ভৌত বিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত।

বিজ্ঞানের উপকারিতা

বিজ্ঞানীরা বিশেষ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করে জ্ঞান অর্জন করেন এবং প্রকৃতির নানা মৌলিক বিধি ও সাধারণ সত্য আবিষ্কারের চেষ্টা করেন । এরপর সেগুলোর উৎপত্তি এবং কারণ ব্যাখ্যার পাশাপাশি সেগুলোর যৌক্তিকতা ব্যবহার করে প্রকৃতির আচরনের আগাম সম্ভবনা করেন । ভৌত জগতের প্রাকৃতিক আচরণ ব্যবহার নতুন নতুন প্রযুক্তি তৈরি করেন । যার ফলাফল আমাদের আজকের এই আধুনিক বিজ্ঞান । যেখানে পুরো পৃথিবী এখন চলে এসেছে মানুষের হাতের নাগালে । আমাদের জীবনের যে দিকটিতেই আপনি তাকাবেন, সেখানেই অবদান এই বিজ্ঞানের । বিজ্ঞান মানুষকে দিয়েছে অভাবনীয় বেগ, সভ্যতার অগ্রযাত্রাকে করেছে দ্রুততর ও বহুমাত্রিক । দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞানের যে অবদান তা যেমন আকর্ষণীয় তেমনি বৈচিত্রপূর্ণ। অর্থাৎ আদিম যুগ থেকে আরম্ভ করে বর্তমান যুগ পর্যন্ত মানব সভ্যতার যে বিকাশ ঘটেছে তার মূলে রয়েছে বিজ্ঞান ।

বিজ্ঞানের অপকারিতা

সবকিছুর ভালো খারাপ দুটা দিক থাকে । বিজ্ঞানের ও আছে । আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে অনেক সহজ করে তুললেও  বিজ্ঞানের অভিশপ্ত দিকগুলোকে অবহেলা করার উপায় নাই। বিজ্ঞান যেখানে আমাদের প্রতিদিনের সময় বাঁচিয়ে যাচ্ছে সেখানে বিজ্ঞান আবার আমাদেরকে করে তুলছে পর নির্ভরশীল । আমরা এখন জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রযুক্তি নির্ভর । ছোটো শিশু থেকে নিয়ে বড় সবাই এখন স্মার্টফোনপ্রেমী। এই স্মার্টফোন শিশুর মেধা বিকাশে কতটা বাধা দেয় তা কেউ ভেবে দেখি না । শিশুর মানসিক ও শারীরিক অনেক ক্ষতি সাধন করে এই স্মার্টফোন । যখন এতটা প্রযুক্তি ছিলো না তখন শিশুরা ঘরের বাইরে খেলতে যেতো । সেই সময় শিশুদের মধ্যে তৈরি হতো বন্ধুত্বপূর্ন আচরণ, একে অপরের সাথে মিলে মিশে থাকার মানসিকতা যা বর্তমানে রীতিমত দেখায় যায় না।

বিজ্ঞানের প্রথম আবিষ্কার কি ?

পৃথিবীর প্রথম বিজ্ঞানী হিসেবে পাশ্চাত্যে গ্রিক পন্ডিত থেলিসকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে । তিনি খৃষ্টপূর্ব ৫৮৫ অব্দে পূর্ব ঘোষণা মোতাবেক সূর্যগ্রহণ দেখিয়েছিলেন । তবে প্রাচীন ভারতীয়, মিশরীয় প্রভৃতি সভ্যতায়ও কিছু বৈজ্ঞানিক নিদর্শন দেখা যায় । সেখানেও নিশ্চয়ই কোন না কোন বিজ্ঞানী ছিলেন । তাই প্রথম বিজ্ঞানী কে তা ঠিকভাবে বলা সম্ভব নয় । সে পর্যন্ত থেলিসকেই বিশ্বের প্রথম বিজ্ঞানী বলা হয় ।

Leave a Reply