কম্পিউটার শব্দটির
সাথে আমরা খুব বেশি পরিচিত হলেও
সুপারকম্পিউটারশব্দটি
আমরা খুব কমই শুনেছি
অথবা খুব বেশি কিছুই জানি নাচলুন জেনে নেওয়া যাক অতিমাত্রায় শক্তিশালী এই
কম্পিউটার সম্পর্কে

সাধারণভাবে আমাদের বাসা বাড়িতে বা অফিস আদালতে ব্যবহৃত ছোট কম্পিউটারগুলো
থেকে অনেক বেশি ক্ষমতা সম্পন্ন এবং বৃহৎ আকারের কম্পিউটারকে সুপারকম্পিউটার বলা হয়
এরা সাধারণ কম্পিউটার গুলো থেকে অত্যন্ত ক্ষমতাসম্পন্ন এবং এদের
আকৃতিও অনেক অনেক বড়
গড়ে একেকটি সুপারকম্পিউটার নির্মাণে খরচ পড়ে প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলার এবং এক বছরের
রক্ষণাবেক্ষণ খরচ ৯ মিলিয়ন ডলার
! “টাইটাননামের বিশ্বের
অন্যতম বড় একটি সুপারকম্পিউটারের আকার প্রায় একটি বাস্কেটবল কোর্টের সমান
সাধারণ কম্পিউটারগুলো যেমন
বাজারে কিনতে পাওয়া যায় এগুলো তেমন কিনতে পাওয়া যায় না এবং বিশ্বের খুব কম প্রতিষ্ঠানের
কাছেই সুপারকম্পিউটার রয়েছে
বেশির ভাগই সরকার ভিত্তিক এবং বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানে বৃহৎ
হিসাব নিকাশে ব্যবহৃত হয়
এগুলো রক্ষণাবেক্ষণেও প্রচুর খরচের প্রয়োজন পড়ে
সুপারকম্পিউটার সাধারণ কম্পিউটার গুলোর থেকে অতিমাত্রায় শক্তিশালী
হয়ে থাকে
আমরা সাধারণত কোনো
কম্পিউটারের গতি মাপার জন্য তাদের প্রসেসর কত হার্ট্জের এবং এটি প্রতি সেকেন্ডে কত
মেগাবাইট
/গিগাবাইট তথ্য প্রসেস করতে পারে তা নির্ণয় করিকিন্তু সুপারকম্পিউটারদের
গতি বা ক্ষমতা মাপার জন্য সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি একক ব্যবহার করা হয়
এককটি হলো FLOPS ( Floating Point
Operation Per Second)
এটি প্রচলিত হিসাব পদ্ধতি থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন এবং কেবলমাত্র বড় বড় প্রসেসিং মেশিন
সমূহের গতি মাপার জন্যই ব্যবহৃত হয়
চলুনFLOPS একক সম্পর্কে আপনাকে একটু ধারণা দেই-1gigaPLOPS
মানে হলো আপনাকে প্রায় ৩২ বছর ধরে প্রতি সেকেন্ডে একটি করে হিসাব করে
যেতে হবে
!! কোনো সুপারকম্পিউটার যদি এই কাজটি এক সেকেন্ডে করতে
পারে তাহলে তার ক্ষমতা হবে
1gigaFLOPS.এরকমভাবে
TeraFLOPS, petaFLOPS এককগুলো ব্যবহার হয়
প্রতি সেকেন্ডে ১টি করে হিসাব
করলেও
1 পেটাফ্লপস যেতে আপনার ৩ কোটি বছর লাগবে!! এপর্যন্ত সবচেয়ে
শক্তিশালী সুপারকম্পিউটার টি হলো
Sunway TaihuLight এটি চীনে
তৈরি এবং এর ক্ষমতা আশ্চর্যজনকভাবে প্রায় ৯৩ পেটাফ্লাপস
যেটি এর আগের সবচেয়ে শক্তিশালী
সুপারকম্পিউটারটির থেকেও প্রায় তিনগুণ বেশি
এখনো এর থেকেও বেশি শক্তিশালী সুপারকম্পিউটার তৈরির চেষ্টা চালানো
হচ্ছে
Sunway TaihuLight সুপারকম্পিউটার
সুপারকম্পিউটারের ক্ষমতা সম্পর্কে ভালোই জানা হলো,এবার মনের
মধ্যে প্রশ্ন জাগতেই পারে যে এত শক্তিশালী কম্পিউটার দিয়ে কি করা হয়
? এদের প্রয়োজনই বা কি? আসলে প্রয়োজন ছাড়া পৃথিবীতে কোন
জিনিসই তৈরি হয়না
যেখানে এত ব্যয়বহুল কম্পিউটারগুলোর কথা আসে তখন এদের প্রয়োগক্ষেত্রও
কিন্তু বড় বড় জায়গাতেই
সাধারণত গাণিতিক বিজ্ঞানে সবচেয়ে বেশি সুপারকম্পিউটার ব্যবহৃত হয়গণিতের অনেক নড় বড় হিসাবনিকাশ, বৃহত্তম
মৌলিক সংখ্যা বের করা
, অনেক বড় এবং সময় সাপেক্ষ অংক খুব কম সময়ের
মধ্যে করা ইত্যাদি কাজে সুপারকম্পিউটার ব্যবহৃত হয়
ল্যাবরেটরিতে
গবেষণার কাজে
, পদার্থবিজ্ঞানে কোয়ান্টাম মেকানিক্সে, আবহাওয়ার পূর্বাভাস, জলবায়ু গবেষণা, এটমিক পদার্থবিজ্ঞান ইত্যাদি কাজে সুপারকম্পিউটার ব্যবহৃত হয়
নাসা,সার্ন (CERN) এর মতো বড় বড় গবেষণা প্রতিষ্ঠান জ্যোতির্বিজ্ঞান এবং MolicularPhysics এ খুব সুক্ষ্ম হিসাব
নিকাশের
জন্যও সুপার কম্পিউটার
ব্যবহার করে
পৃথিবীতে কোন দেশেকতটি সুপারকম্পিউটার আছে তা ওই দেশের প্রযুক্তিগত উন্নয়ন নির্দেশ
করে
এক্ষেত্রে আমেরিকা, জাপান,এবং চায়না অনেক এগিয়ে আছে আমাদের পাশ্ববর্তী
দেশ ভারত ও এগিয়ে যাচ্ছে
। 
পৃথিবীর প্রথম সুপারকম্পিউটার তৈরি করা হয় ১৯৬০ সালে ইউনিভার্সিটি
অফ ম্যানচেস্টারে
IBM 7030 Stretch এবংCDC(Control Data Corporation) এর কয়েকটি কম্পিউটার দ্বারা যার নাম ছিল অ্যাটলাস (Atlas) এবং এটি নির্মিত হয়েছিল সাইমর ক্রে নামের এক ব্যক্তির দ্বারা  IBM 7030 Stretch হলো ট্রান্সজিস্টর
ব্যবহার করা প্রথম কম্পিউটার
১৯৬৪ সালে ক্রেCDC -6600 নামের একটি সুপারকম্পিউটার ডিজাইন করেন
যা সিলিকম নির্মিত ট্রান্সজিস্টর ব্যবহার করতো
প্রতিটি কম্পিউটার
৮ মিলিয়ন ডলার করে বিক্রি হয়েছিলো
১৯৭৬ সালে ক্রে তা নিজের কোম্পানিক্রে রিসার্চ
থেকে  Cray – 1 নামের 80 MHz ক্ষমতাসম্পন্ন একটি কম্পিউটার তৈরি করেন

Cray -1 মডেলের একটি সুপারকম্পিউটার

ILLIAC
IV
মডেলটি ক্রে ১ কে টেক্কা দেয় যার সর্বোচ্চ পিক পারফরম্যান্স ছিল 1gigaFLOPS. ১৯৮৫ সালে ক্রে ২ নামের আরেকটি কম্পিউটার আসে যা সর্বোচ্চ1.9
gigaFLOPS গতিতে প্রসেসিং করতো কিন্তু এটি মস্কোতে অবস্থিতM-
13 সুপারকম্পিউটারকে পেছনে ফেলতে পারেনি
মাইক্রোপ্রসেসর আবিষ্কৃত
হওয়ায় কম্পিউটার নির্মাণে এবং এর গতি বৃদ্ধিতে বিপ্লব সৃষ্টি হয়
১৯৮২ সালে
জাপানে
LINKS – 1 নামের একটি সুপার কম্পিউটার সাধারণত গ্রাফিক্সের
কাজে ব্যবহার করার জন্য তৈরি করা হয় যাতে একসাথে ৫১৪ টি মাইক্রোপ্রসেসর ব্যবহৃত হয়েছিল
 ১৯৯০ এী দিকে জাপান এবং আমেরিকায় হাজার
বা এর অধিক মাইক্রোপ্রসেসর যুক্ত সুপারকম্পিউটার নির্মাণ শুরু হয়
১৯৯৬ সালে Hitachi SR2201 নামের ২০৪৮ টি প্রসেসর যুক্ত একটি সুপারকম্পিউটার ৬০০ gigaFLOPS গতি তুলতে সক্ষম হয় এরপর থেকে অতিমাত্রায় সমান্তরাল প্রসেসর যুক্ত
সুপারকম্পিউটার নির্মাণ হতে থাকে
চায়না, জাপান, রাশিয়া ইত্যাদি দেশ তাদের নিজেদের জন্য শক্তিশালী সুপারকম্পিউটার নির্মাণে
আগ্রহী হয়ে উঠে
 বর্তমানে বিশ্বের সেরা দশটি সুপারকম্পিউটারের
মধ্যে ৫ টি আমেরিকার
, ২ টি চীনের, ১ টি
জাপানের এবং
  ১ টি সুইজারল্যান্ডে
অবস্থিত
অবশ্য  প্রথম তিনটির মধ্যে  দুইটিই হলো চীনের  এবং তৃতীয়টি সুইজারল্যান্ডের

গড়ে একেকটি
সুপারকম্পিউটার নির্মাণে খরচ পড়ে প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলার এবং এর এক বছরের রক্ষণাবেক্ষণ
খরচ
  ৯ মিলিয়ন ডলার এবং এদের চালু রাখতেও
কিন্তু ব্যাপক পরিমাণে বিদ্যুৎ শক্তির প্রয়োজন পড়ে
 Tianhe -1A যেটি কিনা বিশ্বের দ্বিতীয়
বৃহত্তম সুপারকম্পিউটার
, এটি চালু রাখার জন্য ৪ মেগাওয়াট বিদ্যুতের
প্রয়োজন পড়ে
সুপারকম্পিউটার
গুলো রক্ষণাবেক্ষণে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো এদের ব্যাপকহারে তাপ নিঃসরণ
একটি কম্পিউটার চালু অবস্থায় প্রচুর
তাপ উৎপন্ন করে যা ঠান্ডা করার জন্য ও প্রচুর ফ্যান
/এসির প্রয়োজন হয়
এবং এতে প্রচুর বিদ্যুৎ শক্তির অপচয় ও হয়
যদিও এখন কম । 

তথ্য সংগ্রহ এবং সম্পাদনা
জিওন আহমেদ
ইইই চুয়েট

Leave a Reply