এই পৃথিবীতে
আমরা যেভাবে প্রজন্মের পর প্রজন্ম টিকে আছি, সেভাবেই কি আমরা ঠিকে থাকবো ? নাকি
আমাদের অস্তিত্ব একদিন বিলিন হয়ে যাবে ? প্রশ্নটা যুগান্তকারী হলেও উত্তরটা কিন্তু
খুব বেশি কঠিন নয় । আমাদের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয়তা খুব বেশি নয় । কিন্তু
আমাদের অতিরিক্ত চাহিদা অনেক বেশি । আমরা বাড়ি চাই, গাড়ি চাই, ভ্রমণ করতে চাই,
উন্নত মানদণ্ডের জীবন চাই । এই চাই শব্দটা আমাদের এই পৃথিবীটাতে যে কি ঘটিয়ে চলেছে
মানুষ যখন সেটা বুঝতে পারবে, সেদিন হয়তো অনেক দেরি হয়ে যাবে ।

জলবায়ু
পরিবর্তনের মত মানবসৃষ্ট জলজ্যান্ত বাস্তবতাকে আমরা অস্বীকার করছি । যা পরিনতিতে
গ্রিনহাউজ ইফেক্টের মত ভয়াবহ প্রভাবগুলো বেড়েই চলেছে । নিজেদেরকে সামরিক শক্তিকে
প্রমাণ করতে আমরা কি না করছি । আমাদের এই বিশ্বে এখন যে পরিমাণ পারমাণবিক অস্ত্র
আছে, তা দিয়ে আমাদেরকে কয়েকবার ধ্বংস করে ফেলা যাবে । আমাদের এই অসুস্থ
প্রতিযোগিতা কিন্তু কমার কোন সম্ভবনা নেই । বরং আমরা নিজেদের সামরিক শক্তি তুলে
ধরা আর অন্যকে ভয় দেখানোর জন্য চাঁদে পর্যন্ত বিস্ফোরণ ঘটানোর স্বপ্ন দেখেছি ।

কখনও
কি ভেবে দেখেছি, আমাদের এই মানসিকতা আমাদেরকে ঠিক কোথায় নিয়ে যাবে ? আমাদের এই
বাসভূমিকে যদি আমরা এভাবে বিপদের মধ্যে ঠেলে দেই, এর ভয়াবহ বাস্তবতা যখন আমাদের
সামনে চলে আসবে আমরা তখন কোথায় পালাবো । যেখানে আমাদের এই মহাকাশটাই নিরাপদ নয় ।
প্রতিনিয়ত নক্ষত্ররা গ্রহদের গিলে খাচ্ছে, সুপারনোভার আগুনের ভয়াবহ রশ্মি ছড়িয়ে
আছে আমাদের এই মহাবিশ্বে, ব্ল্যাক হোল কখন কাকে টেনে নিজের পেটে চালিয়ে দিচ্ছে,
ব্ল্যাক হোলগুলো একে অপরের সাথে দুম করে ধাক্কা খাচ্ছে । এখনই যদি অন্য একটা গ্রহ
আমাদের এই গ্রহকে ধাক্কা দিতেও উদ্যত হয়, কিংবা কোন ব্ল্যাক হোল আমাদের এই গ্রহটাকে
গ্রাস করতে উদ্যত হয়, আমাদের সেখানে নিরব দর্শক ছাড়া আর কোন ভূমিকা থাকবেনা । এখানে
আমাদের সামরিক শক্তি আমাদের প্রয়োজন । যাতে অন্য সকল গ্রহ নক্ষত্রের আক্রমণ থেকে
আমরা আমাদের এই গ্রহটাকে বাঁচাতে পারি । কিন্তু সেটা আমরা করছিনা । বরং নিজেদের
মধ্যেই যারা কিনা আমরা একই এক গ্রহের বাসিন্দা, তারা একে অপরকে টপকানোর, উড়িয়ে
দেয়ার অসুস্থ প্রতিযোগিতায় মেতে আছি । যার পরিনতি আমাদের সকলকেই ভোগ করতে হবে ।

আর
এভাবেই যদি চলতে থাকে, ৬৬ মিলিয়ন বছর আগে গ্রহাণুর ধাক্কায় যেভাবে শক্তিশালী
ডাইনোসর ধ্বংস হয়েছিল, আমাদের অস্তিত্বও সেভাবেই ধ্বংস হয়ে যাবে । এটা কোন বিজ্ঞান
কল্পকাহিনী নয়, এটা পদার্থবিজ্ঞানে প্রমাণিত ।

১৯৪৫
সালের জুলাইয়ের দুই বছর আগে ম্যানহাটান প্রজেক্টের প্রধান বিজ্ঞানী রবার্ট
ওপেনহাইমার প্রথম পারমাণবিক বিস্ফোরণের সময় বলেছিলেন, ‘আমরা জানি পৃথিবী এখন আর
আগের মত নেই । কেউ কেউ হেসেছে, কেউ কেউ কেঁদেছে, কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ নিরব হয়ে
গেছে । হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থ ভগবত গীতা থেকে একটি লাইন এখন আমার মনে পড়ছে, “এখন আমিই
মৃত্যু, আমিই বিশ্বের ধ্বংসকারী ।”’

এখন
যদি আমি প্রশ্ন করি, আমাদের অস্তিত্ব কেন বিলিন হবেনা বা হওয়া উচিত হবেনা, তাহলে
কি কোন উত্তর আছে ? হয়তো না, অথবা সম্মতির করুন বাস্তবতা হল- নিরবতা । অনেকেই হয়তো
বলবেন, আমাদের অন্য গ্রহে বাসস্থান গড়ার একটা স্বপ্ন তো আছে । তাতে আমাদের
অস্তিত্ব একটা গ্রহ থেকে বিলিন হয়ে গেলেও অন্য গ্রহে থেকে যাবে । কিন্তু সেটার
কতটা বাস্তবায়ন সম্ভব ?

জিওনআহমেদ

Leave a Reply