পর্যন্ত অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের নামে সবচেয়ে বেশি যে প্রশ্নটি করা হয় সেটা হল-
তিনি কি ধর্ম বা ঈশ্বরে বিশ্বাস করতেন ? তিনি কি নাস্তিক ছিলেন ? নাকি আস্তিক
ছিলেন ? প্রশ্নটি যে শুধুমাত্র আমাদের বর্তমানের মানুষদের মনেই সারা ফেলেছে তা
কিন্তু নয় । বরং যখন তিনি বেঁচে ছিলেন তখনও মানুষের মনে তার ঈশ্বরে বিশ্বাস নিয়ে
আগ্রহ ছিল । আর ছিল বলেই তার গড লেটার কয়েকগুণ দামে বিক্রি হয় । কারণ সেই গড
লেটারেই লেখা ছিল তার ধর্মে এবং ঈশ্বরে বিশ্বাসের ইতিকথা । এখন পর্যন্ত সবচেয়ে
প্রতিভাধর এবং সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী বলেই যে এই প্রশ্নটি করা হয় তা
কিন্তু নয় । বরং প্রশ্নটা এ জন্যও বেশি করা হয়, কারণ তার কথায় এবং কর্মে কখনও তাকে
আস্তিক এবং কখনও তাকে নাস্তিক বলেই মনে হয় ।

তিনি
একদিকে যেমন বলেছিলেন- “বিজ্ঞান ছাড়া ধর্ম অন্ধ, ধর্ম ছাড়া বিজ্ঞান পঙ্গু ।”এটা
শুনে অনেকেরই মনে হয়েছিল, আইনস্টাইন ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন । কিন্তু তার গড লেটারে
তিনি উল্লেখ করেন- “ঈশ্বর শব্দটি আমার কাছে আর কিছুই না, এটা শুধু মানুষের
দূর্বলতার একটি বহিঃপ্রকাশ মাত্র ।” আর এ উক্তির মাধ্যমে তিনি ঈশ্বরের অস্তিত্বকে
নাকচ করে দিয়েছেন । যেখান থেকে এটা জানা যায়, তিনি ঈশ্বরকে মানুষের মাঝে শুধু ভীতি
বজায় রাখার একটা মাধ্যম হিসেবে মনে করতেন । যাতে মানুষ নিজেকে সর্বশক্তিমান মনে করে
বেপরোয়া হয়ে না যায় । শুধু তাই নয়, তিনি মনে করতেন- ঈশ্বরের দেয়া শাস্তি এবং
পুরষ্কারের লোভ মানুষকে নৈতিক এবং মানবিক হতে বাধ্য করবে । এর বাইরে ঈশ্বরের
অস্তিত্বে তার বিশ্বাস ছিলনা ।

তবে
নিজের জ্ঞানে তিনি নিজের অজ্ঞতাকে অকপটে স্বীকার করেছেন । তিনি বলতেন, আমাদের এই
মহাবিশ্বকে বোঝা মানুষের সীমাবদ্ধ জ্ঞানে সম্ভব নয় । মানুষের কাছে মহাবিশ্ব একটা
শিশুর সামনে বিভিন্ন ভাষায় লেখা অসংখ্য সাজানো বইয়ে ভরা লাইব্রেরীর মত । সে মনে
করতে পারে, বইগুলো কেউ লিখেছে এবং সাজিয়েছে । কিন্তু বইগুলো কে লিখেছে এবং
সাজিয়েছে, সেটা সে জানতে পারেনা । এখানে আবার মনে হয়, তিনি স্রষ্টার বিশ্বাসকে
সরাসরি নাকোচ করে দেন নি । এখানে জানা যায়, তিনি স্ফিনোজার ঈশ্বর ধারণার প্রতি
আকৃষ্ট ছিলেন এবং স্ফিনোজাকে আধুনিকতম বিজ্ঞানের মহানতম দার্শনিক মনে করতেন ।

আইনস্টাইন
মনে করতেন, ঈশ্বরের মিথ্যে ভয় নয় বরং মানুষের মাঝে নৈতিকতা উৎসরিত করতে হবে । কারণ
কোন ব্যাক্তিকে ঈশ্বরের শাস্তির ভয় দেখিয়ে বা পুরষ্কারের লোভ দেখিয়ে তাকে
নিয়ন্ত্রণ করা যায় না । তবে ব্যাক্তি জীবনে সকল ধরণের বিশ্বাসের প্রতি তিনি সর্বদা
মানবিক ছিলেন । আর সে জন্যই তিনি কারও ধর্মানুভুতি সহ কোন বিশ্বাসের প্রতি কটু কথা
ছোড়েন নি ।

তবে
এটা মানতেই হবে, তার কথায় জটিলতা আছে । একবার ১৯৩১ সালে কৌতুক অভিনেতা চার্লি
চ্যাপলিন তার একটা শো দেখার জন্য আইনস্টাইনকে আমন্ত্রণ জানালেন । তখন চ্যাপলিনের “সিটি
লাইটস” সিনেমার প্রদর্শনী চলছিল । শো শেষে তারা দুজন যখন শহরের পথ ধরে হাঁটছিলেন
তখন চ্যাপলিন আইনস্টাইনকে জিজ্ঞেস করলেন, সবাই আমাকে বোঝে, সেজন্য আমার এত
জনপ্রিয়তা । কিন্তু মানুষ আপনাকে এত পছন্দ করে কেন ? তখন আইনস্টাইন জবাবে
বলেছিলেন, “কেউ আমাকে সহজে বুঝতে পারেনা বলেই আমার এত জনপ্রিয়তা ।” জটিলতা থাকাই
স্বাভাবিক । কারণ তিনিই তো আমাদেরকে এই জগতকে নতুন করে ভিন্নভাবে ভাবতে শিখিয়েছেন
। যা আগে কেউ ভাবেনি ।

জিওন আহমেদ

This Post Has 2 Comments

  1. Arean

    ভালো লিখেছেন ভাই!

Leave a Reply