আমরা প্রতিদিন যাই করিনা কেন, যা কিছুই ব্যবহার করিনা কেন তার সবকিছুর সাথেই শক্তি জড়িত । কখনও শক্তি ব্যবহার করছি, কখনও শক্তি খরচ করছি, কখনও শক্তি অর্জন করছি । প্রতিদিন খাবার খাচ্ছি, সেখান থেকে আমরা শক্তি পাচ্ছি । আবার কাজ করছি, সেখানে আমরা আমাদের সেই অর্জিত শক্তি খরচ করছি । কিন্তু আমাদের এই শক্তির উৎসে কি পরিমাণ শক্তি আছে । সেগুলো কি অসীম নাকি সীমিত ? দুই ধরণের শক্তিই প্রকৃতিতে রয়েছে । যাদেরকে আমরা নবায়নযোগ্য এবং অনবায়নযোগ্য শক্তি বলে জানি ।

নবায়নযোগ্য শক্তি কাকে বলে ?

সহজ ভাষায় শক্তির উৎস থেকে যেসব শক্তি কখনও ফুরিয়ে যাবে না বা শেষ হয়ে যাবে না সেসব শক্তিকে বলা হয় নবায়ন যোগ্য শক্তি । আমাদের এই প্রকৃতিতে খুব সীমিত পরিমাণ নবায়নযোগ্য শক্তি উৎস রয়েছে । জলবিদ্যুত, সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি, বায়োফুয়েল, ভূ-তাপীয় শক্তি যার উদাহরণ ।

অনবায়নযোগ্য শক্তি কাকে বলে ?

শক্তির উৎস থেকে যেসব শক্তি কোন এক সময় ফুরিয়ে যাবে বা শেষ হয়ে যাবে সেসব শক্তিকে বলা হয় অনবায়নযোগ্য শক্তি । আমাদের এই প্রকৃতিতে বেশিরভাগ শক্তির উৎসই অনবায়নযোগ্য । প্রাকৃতিক গ্যাস, খনিজ সম্পদ, নিউক্লিয়ার শক্তি যার উদাহরণ ।

নবায়নযোগ্য শক্তির উদাহরণ

সৌরশক্তি
সৌরশক্তি

সৌরশক্তি

শুনে অবাক হবেন যে, মাত্র এক বর্গকিলোমিটার এলাকায় সূর্য থেকে আলো এবং তাপ হিসেবে প্রায় হাজার মেগাওয়াট শক্তি পাওয়া যায় । যা একটা নিউক্লিয়ার বিদ্যুৎকেন্দ্রের শক্তির কাছাকাছি । কিন্তু সূর্য থেকে আসা আলো আর তাপের একটা বিশাল অংশ বায়ুমন্ডলে খরচ হয়ে যায় । তা ছাড়াও শক্তিটা আসে তাপ কিংবা আলো হিসেবে, বিদ্যুতে রূপান্তর করার অনেকটা ধাপ অতিক্রম করতে হয় । যেখানেও বিপুল পরিমাণ শক্তি খরচ হয়ে যায় । তারপরও এটি খুব নির্ভরযোগ্য একটা শক্তির উৎস । কারণ সূর্য্য থেকে এই শক্তি আমরা পেতেই থাকব । অর্থাৎ এই শক্তি শেষ হবেনা । এটি একটি নবায়নযোগ্য শক্তির অন্যতম উৎস ।

ভূতাপীয় শক্তি
ভূতাপীয় শক্তি

ভূতাপীয় শক্তি

নবায়নযোগ্য শক্তির আর একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হচ্ছে ভূতাপীয় বা জিওথার্মাল শক্তি । আমরা ভূ-পৃষ্ঠের যত গভীরে যাব, এর উপরের অংশের চাপের কারণে সেই স্তরের তাপমাত্রা বাড়তে থাকবে । এভাবে যেতেই থাকলে একটি গভীর স্তরে উচ্চ চাপের কারণে সেখানকার সকল উপাদান, গলিত লাভার ন্যায় উপাদানে পরিণত হয় । আমাদের পৃথিবীর ভেতরের এসব উপাদান অগ্নেয়গিরি দিয়ে যখন বের হয়ে আসে তখন আমরা এই উপাদানের অস্তিত্ব বুঝতে পারি । তাই কেউ যদি কয়েক কিলোমিটার গর্ত করে যেতে পারে তাহলেই তাপশক্তির একটা বিশাল উৎস পেয়ে যায় । প্রক্রিয়াটা এখনো সহজ নয়, তাই ব্যাপকভাবে ব্যবহার শুরু হয়নি । কোনো কোনো জায়গায় তার ভূ-প্রকৃতির কারণে যেখানে এ ধরনের শক্তি সহজেই পাওয়া যায় সেখানে সেগুলো ব্যবহার শুরু হয়েছে । এটি একটি নবায়নযোগ্য শক্তির অন্যতম উদাহরণ ।

জলবিদ্যুৎ
জলবিদ্যুৎ

জলবিদ্যুৎ

পৃথিবীর পুরো শক্তির পাঁচ ভাগের এক ভাগ হচ্ছে নবায়নযোগ্য শক্তি । সেই এক ভাগের বেশির ভাগ হচ্ছে জলবিদ্যুৎ । অর্থাৎ নদীতে বাঁধ দিয়ে বিদ্যুৎ তৈরি করা । নদীর পানি যেহেতু ফুরিয়ে যায় না তাই এ রকম বিদ্যুৎকেন্দ্রের শক্তির উৎসও ফুরিয়ে যায় না ।

তবে নদীতে বাঁধ দেওয়া হলে পরিবেশের অনেক বড় ক্ষতি হয় । সে কারণে পৃথিবীর মানুষ অনেক সতর্ক হয়ে গেছে । যাদের একটু দূরদৃষ্টি আছে তারা এ রকম জলবিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি করে না ।

অনবায়নযোগ্য শক্তির উদাহরণ

খনিজ শক্তি
খনিজ শক্তি

খনিজ শক্তি

পৃথিবীতে শক্তির সবচেয়ে বড় উৎস হচ্ছে তেল, গ্যাস বা কয়লা । লক্ষ-কোটি বছর আগে গাছপালা মাটির নিচে চাপা পড়ে দীর্ঘদিনের তাপ আর চাপে এই রূপ নিয়েছে । মাটির নিচ থেকে কয়লা, তেল আর গ্যাসকে তুলতে হয় । মাটির নিচ থেকে যে তেল পাওয়া যায়, তাদেরকে ক্রুড অয়েল বলা হয় । প্রাথমিক অবস্থায় ক্রুড অয়েল অনেক ঘন থাকে । রিফাইনারিতে সেগুলো পরিশোধন করে পেট্রল, ডিজেল বা কেরোসিনে রূপান্তর করা হয় এবং সাথে সাথে আরো ব্যবহারযোগ্য পদার্থ বের হয়ে আসে । আমরা প্রতিনিয়ত খনিজ তেল পেয়ে আসছি বলে মনে হতে পারে, এভাবে আমরা এসব শক্তি পেতেই থাকবো । কিন্তু এই শক্তি একদিন শেষ হয়ে যাবে । তাই খনিজ শক্তি একটি অনবায়নযোগ্য শক্তি ।

নিউক্লিয়ার শক্তি
নিউক্লিয়ার শক্তি

নিউক্লিয়ার শক্তি

অনেক দেশ নিউক্লিয়ার শক্তিকে ব্যবহার করছে, সেখানেও এক ধরনের জ্বালানির দরকার হয়, সেই জ্বালানি হচ্ছে ইউরেনিয়াম । তেল, গ্যাস, কয়লা বা ইউরেনিয়াম, এই শক্তিগুলোর মাঝে একটা মিল রয়েছে, এগুলো ব্যবহার করলে খরচ হয়ে যায় । মাটির নিচে কতটুকু তেল, গ্যাস, কয়লা আছে কিংবা পৃথিবীতে কী পরিমাণ ইউরেনিয়াম আছে মানুষ এর মাঝে সেটা অনুমান করে বের করে ফেলেছে । দেখা গেছে পৃথিবীর মানুষ যে হারে শক্তি ব্যবহার করছে যদি সেই হারে শক্তি ব্যবহার করতে থাকে তাহলে পৃথিবীর শক্তির উৎস তেল, গ্যাস, কয়লা বা ইউরেনিয়াম দিয়ে টেনেটুনে বড়জোর দুই শত বছর চলবে । তারপর আমাদের পরিচিত উৎস যাবে ফুরিয়ে । তখন কী হবে পৃথিবীর মানুষ সেটা নিয়ে খুব বেশি দুর্ভাবনায় নেই, তার কারণ মানুষ মোটামুটি নিশ্চিতভাবেই জানে বিজ্ঞান আর প্রযুক্তি ব্যবহার করে এর মাঝে অন্য কিছু বের করে ফেলা হবে ।

Leave a Reply