ব্যাপন কি ?

কোন মাধ্যমে কঠিন, তরল এবং গ্যাসীয় পদার্থের স্বতঃস্ফূর্ত ও সমানভাবে ছড়িয়ে পড়ার প্রক্রিয়াকে ব্যাপন বলে ।

ব্যাপন প্রক্রিয়ায় কঠিন, তরল কিংবা গ্যাসীয় পদার্থ উচ্চ ঘনমাত্রার স্থান থেকে নিম্ন ঘনমাত্রার স্থানের দিকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ছড়িয়ে পড়ে । যেমনঃ ঘরের এক কোণে সুগন্ধি ছড়িয়ে দিলে কিছুক্ষণের মধ্যে সারা ঘরে সুগন্ধ ছড়িয়ে পড়ে । এটি ব্যাপন প্রক্রিয়ার উদাহরণ । কোনো পদার্থ ছড়িয়ে পড়তে সময় কম লাগলে ঐ পদার্থের ব্যাপন হার বেশি এবং কোনো পদার্থ ছড়িয়ে পড়তে বেশি সময় লাগলে ঐ পদার্থের ব্যাপন হার কম ।

ব্যাপন
ব্যাপন

একইভাবে এক গ্লাস পানিতে একফোঁটা নীল রঙ ঢেলে দিলে কিছুক্ষনের মধ্যেই তা পুরো গ্লাসের পানিকে নীল করে দেয় । যা ব্যাপনের উদাহরণ ।  

নিঃসরণ কি ?

সরু ছিদ্রপথে উচ্চচাপ থেকে কোনো গ্যাস নিম্নচাপের দিকে দ্রূত গতিতে বেরিয়ে আসার প্রক্রিয়াকে নিঃসরণ বলে ।

একটি বেলুনকে ফুঁ দিয়ে ফুলিয়ে এবার এর গায়ে এক টুকরা স্কচটেপ লাগিয়ে দিয়ে একটি আলপিন দিয়ে স্কচটেপের উপর দিয়ে বেলুনটিকে ছিদ্র করলে দেখা যাবে, বেলুনের ভিতরের সমস্ত বাতাস ছিদ্রপথ দিয়ে সজোরে বেরিয়ে গিয়ে বেলুনটি চুপসে গেছে । বেলুনের ভেতরে বাতাসের চাপ বেশি ছিল এবং বেলুনের বাইরে বাতাসের চাপ কম ছিল। তাই উচ্চচাপের প্রভাবে ছিদ্রপথ পাওয়ার সাথে সাথে বেলুনের বাতাস নিম্নচাপের স্থানের দিকে ধাবিত হয়েছে। এটি মূলত নিঃসরণ। এখানে স্কচটেপ না লাগিয়ে বেলুনটা ফুটো করার চেষ্টা করলে সেটি সশব্দে ফেটে যাবে ।

নিঃসরণ
নিঃসরণ

আবার সাইকেল কিংবা ট্রাকের চাকা ফুটো হয়ে চাকার মধ্যে থাকা গ্যাস সশব্দে দ্রুত গতিতে বেড়িয়ে যায়, যা একটি ব্যাপনের উদাহরণ । তাপ প্রয়োগ করলে ব্যাপন এবং নিঃসরণ উভয়ের হার বৃদ্ধি পায় । তাই ট্রাকটি যদি চলন্ত অবস্থায় চাকা ফুটো হতো, তবে শব্দ বেশি হত । কারণ সেক্ষেত্রে গ্যাসের তাপমাত্রা বেশি থাকায় গ্যাস বেশি বেগে বেড়িয়ে যেত । আর স্থির অবস্থায় ফুটো হলে শব্দ কম হত কারণ সেক্ষেত্রে গ্যাসের তাপমাত্রা কম থাকায় গ্যাস কম বেগে বেড়িয়ে যেত ।

ব্যাপন এবং নিঃসরণের মধ্যে পার্থক্য

ব্যাপনঃ কোন মাধ্যমে কঠিন, তরল এবং গ্যাসীয় পদার্থের স্বতঃস্ফূর্ত ও সমানভাবে ছড়িয়ে পড়ার প্রক্রিয়াকে ব্যাপন বলে ।

নিঃসরণঃ সরু ছিদ্রপথে উচ্চচাপ থেকে কোনো গ্যাস নিম্নচাপের দিকে দ্রূত গতিতে বেরিয়ে আসার প্রক্রিয়াকে নিঃসরণ বলে ।

ব্যাপনঃ ব্যাপন একটি সময়বহুল প্রক্রিয়া ।

নিঃসরণঃ এটির গতি বেশি থাকায় খুব স্বল্প সময়ের প্রক্রিয়া ।

ব্যাপনঃ ব্যাপনে চাপের পার্থক্য অনেক কম কিংবা নগণ্য থাকে ।

নিঃসরণঃ নিঃসরণে চাপের পার্থক্য অনেক বেশি থাকে ।

ব্যাপনঃ ব্যাপনে কণাগুলো ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পরে, তাই শব্দ তৈরি হয়না ।

নিঃসরণঃ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নিঃসরণে শব্দ তৈরি হয় ।

ব্যাপন ও নিঃসরণের মধ্যে কোনটি আগে ঘটে ? 

আমরা দেখেছি, ব্যাপন এবং নিঃসরণ দুইটিই ছড়িয়ে পড়ার পদ্ধতি । এখন প্রশ্ন কোনটি আগে ঘটে ? আপনি যখন বডি স্প্রের মুখে চাপ দেন তখন ভিতর থেকে গ্যাস বাইরে দ্রুত গতিতে বেড়িয়ে আসে । যা একটি নিঃসরণের উদাহরণ । বেড়িয়ে আসার পর তা ব্যাপনের মাধ্যমে সারা রুমে ছড়িয়ে পরে । কাজেই আমরা বলতে পারি- ব্যাপন এবং নিঃসরণের মধ্যে নিঃসরণ আগে ঘটে, ব্যাপন পরে ঘটে । 

ব্যাপন অপেক্ষা নিঃসরণ দ্রুত হয় কেন ? 

আমরা দেখেছি, ব্যাপন অপেক্ষা নিঃসরণ একটি দ্রুত গতির প্রক্রিয়া । ব্যাপনে চাপের পার্থক্য থাকে সামান্য, আবার কখনও কখনও থাকে না বললেই চলে । কিন্তু নিঃসরণের ক্ষেত্রে অনেক বেশি পরিমাণ চাপের পার্থক্য থাকে । অতিরিক্ত চাপের পার্থক্যের কারণে উচ্চ চাপ থেকে গ্যাস নিম্নচাপে বেড়িয়ে যাওয়ার বেগ অনেক বেশি থাকে । 

ব্যাপন ও নিঃসরণের গুরুত্ব

আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে গ্যাস বা গ্যাসীয় উপাদান নিয়ে যেসব কাজই করে থাকি, তার সবকিছুর সাথে মোটামুটিভাবে ব্যাপন এবং নিঃসরণ জড়িত । সাইকেলের চাকায় পাম্প করি যা নিঃসরণ, পানিতে লেবুর রস মেশাই যা ব্যাপন, খাবারের ঘ্রাণ নেই যা ব্যাপন ছাড়া অসম্ভব ইত্যাদি । কাজেই ব্যাপন আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলো মধ্যে একটি । 

Leave a Reply