সারাদিন
জ্বলন্ত সূর্য্যের আলোর পর আধার পড়লে রাতের আকাশে যে উজ্জ্বল বস্তুটা আমাদের সাদা
কালো প্রকৃতির সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় তাই চাঁদ । ছোটবেলায় মায়েরা গান শুনিয়ে দিত,
আয় আয় চাঁদ মামা টিপ দিয়ে যা । চাঁদ মামা টিপ আসলে কোনদিন দেবে কিনা সেটা বলা কঠিন
। কিন্তু আপাতত সেটা আমাদের কাছে শুধুই একটা গল্প । যা কল্পনাতেই সোভা পায় ।

রাতে
চাঁদটাকে দেখতে আমাদের যতটা সরল মনে হয়, চাঁদ কিন্তু ততটা সরল নয় । চাঁদ যেমন
আমাদের থেকে নিজেকে আড়াল করে নেয়, তেমনি এর সকল জটিলতাকে নিজের মাঝে গোপন রেখেই
আমাদেরকে রাতে শীতল আলোয় আলোকিত করে । চাঁদকে আমরা ভরা পূর্ণিমায় গোল এবং মাস শেষে
কাস্তের মত দেখে থাকি বলে অনেকের মনে এটা প্রশ্ন থাকে, চাঁদের আকৃতি আসলে কেমন ?
গোল নাকি অন্য কোন আকৃতির ?

চাঁদ
আসলে গোল নয় । এটা কিছুটা ডিম্বাকার আকৃতির । তবে এটা নিজের সবটা অংশ আমাদের চোখে
ধরা দেয়না । পুরো চাঁদের যে আকৃতি, আমরা তার মাত্র ৫৯ শতাংশ দেখতে পাই । বাকি ৪১
শতাংশ জায়গাই আমরা দেখতে পারিনা । এমনকি আপনি যদি চাঁদে গিয়ে এই ৪৯ শতাংশ জায়গার
উপর দাঁড়িয়ে পৃথিবীকে দেখার চেষ্টা করেন, আপনি কখনই আমাদের বাসভূমি পৃথিবীকে দেখতে
পারবেন না ।

চাঁদ
কিন্তু অনেক কষ্টের মূহুর্তও পার করে এসেছে । ১৮৮৩ সালে ক্রাকাতোয়া আগ্নেয়গিরি
থেকে অগ্নুৎপাতের পর বায়ুমন্ডলে এত বেশি ধুলো এবং ধোয়া ছড়িয়ে পড়েছিল যে, মানুষ তখন
অবাক হয়ে চাঁদের দিকে তাকিয়ে ছিল । আর তারা চাঁদকে নীল দেখেছিল । আর সেখান থেকেই
ব্লু মুন শব্দটার সূচনা হল । যে শব্দটা এখনও বিরল কোন ঘটনা বোঝানোর জন্য ব্যবহার
করা হয় ।

চাঁদ
কিন্তু মাঝে মধ্যে আমাদের পৃথিবীকে কিছুটা অবাক করেও দেয় । যখন এটি পৃথিবীর খুব
বেশি কাছে চলে আসে তখন যে শুধু জোয়ার ভাটাই হয়, তা কিন্তু নয় । এটা আমাদের পৃথিবীর
কাছে চলে আসলে আমাদের পৃথিবীর গতিও কিছুটা কমিয়ে দেয় । যেখানে আমাদের পৃথিবীর গতি
প্রায় ১০০ বছরে ১ দশনিক ৫ মিলি সেকেন্ড কমিয়ে দেয় ।

তাহলে
এখন মনে নিশ্চয়ই প্রশ্ন জাগছে, চাঁদকে আমরা ক্ষয়ে যেতে বা অর্ধ-চন্দ্রাকৃতির কেন
দেখি ? এক্ষেত্রে আসলে আসলে আমরা চাঁদ থেকে ছিটকে আসা সূর্যের আলোকেই দেখতে পাই । চাঁদের
অদৃশ্যমান অংশ পুরোটাই অদৃশ্য হয়ে যায় । যা আবহাওয়ার উপর কিছুটা নির্ভর করে বলে
অনেকেই মনে করেন । লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চি উপলন্ধি করতে পেরেছিলেন, চাঁদ আসলে
সংকুচিত বা প্রসারিত হচ্ছেনা । বরং এর অংশগুলো লুকিয়ে যায় ।

দিনে
প্রখর আলোর পর চাঁদ আমাদেরকে প্রকৃতির সাথে নতুন রূপে পরিচয় করিয়ে দিলেও আমরা
চাঁদকে ধ্বংস করে দিতেও কম চেষ্টা করিনি । জানা যায় নিজেদের সামরিক শক্তিকে
প্রদর্শন এবং রাশিয়াকে ভয় দেখানোর উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্র চাঁদের পৃষ্ঠে পারমানবিক
বোমা বিস্ফোরণ ঘটাতে চেয়েছিল । তাদের এই ভয়াবহ মিশন “এ স্টাডি অফ লুনার রিসার্চ
ফ্লাইট” বা “প্রজেক্ট এ১১৯” নামে পরিচিত । তাদের এই মিশন সফল হলে জানিনা আমরা সেই
চাঁদ দেখতে পারতাম কিনা, যা আমরা এখন দেখছি ।

জিওনআহমেদ

Leave a Reply