দীর্ঘ অপেক্ষা আর হাজার হাজার অনুসন্ধানমূলক প্রশ্নের মাঝে
কিছুটা আশা জাগালো বিজ্ঞান । ব্ল্যাকহোলের ইমেজ অবটেইন করাকে মডার্ন সাইন্স “ব্রেকথ্রু
ডিসকভারি অফ অ্যাস্ট্রোনমি” ঘোষণা দিয়েছে । আমাদের মিল্কওয়ে গ্যালাক্সির সেন্টারে
আছে একটি সুপার ম্যাসিভ ব্ল্যাকহোল(
Sagittarius A) যা সূর্যের চেয়েও ৪ মিলিয়ন গুণ বড় । অ্যাস্ট্রোনমারদের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন,
একটি ব্ল্যাকহোলের ইমেজ পাওয়া । ইভেন্ট হরাইজন টেলিস্কোপের মাধ্যমে তাদের স্বপ্ন
পূরণ হল ।
আমরা ক্যামেরা দিয়ে বায়ুমণ্ডলের ছবি তুলতে পারিনা কারণ,
বায়ুমণ্ডলে আলোর প্রতিফলন তৈরি হয় না ফলে আমরা বায়ু দেখতে পারিনা এবং ছবিও তুলতে
পারিনা । আর এটা সত্যই যে, কোন প্রতিফলন না হলে তার ছবি তোলা অসম্ভব । কিন্তু এর
ঠিক প্রতিপক্ষ হিসেবে উল্লেখ্য এই ইভেন্ট হরাইজন টেলিস্কোপ । এর মাধ্যমে বা রেডিও
টেলিস্কোপের মাধ্যমে ছবি তোলা আর নরমাল ক্যামেরার মাধ্যমে ছবি তোলা সম্পূর্ণ ভিন্ন
। ইভেন্ট হরাইজন টেলিস্কোপ হচ্ছে গ্রুপ অফ রেডিও টেলিস্কোপ হচ্ছে, যেটা সারা
পৃথিবীতে বিভিন্ন লোকেশনে সেট করা আছে । আর এ সবগুলো টেলিস্কোপের ডেটা প্রসেস করে
সমন্বিত ভাবে ব্ল্যাকহোলের ইমেজ তৈরি করা হয় ।
আর এই বিশেষভাব নির্মিত ইভেন্ট হরাইজন টেলিস্কপ কত্রিক
ধারণকৃত প্রথম ছবি জ্যোতির্বিদরা একযোগে ছয়টি প্রধান সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ
সম্মেলনের মাধ্যমে প্রকাশ করলেন ।
ডার্ক
এনার্জি বা গুপ্তশক্তি এবং ডার্ক ম্যাটার সবখানেই আমাদের ঘিরে রেখেছে
অথচ আমরা এর কোন অস্তিত্বইটের পাই নাকারণ, ডার্ক
ম্যাটার থেকে আলোর বিচ্ছুরণ, প্রতিফলন হয় না

অপরদিকে কৃষ্ণগহ্বর মহাকাশের এমন একটি বিশেষ স্থান যেখান থেকে কোনো কিছু বের হয়ে আসতে
পারে না
এখানে একবার যা পড়ে তা চিরতরে হারিয়ে যায়ডার্ক এনার্জি,
ডার্ক ম্যাটার সহ মহাবিশ্বের অন্য কোনো অদৃশ্য শক্তি না বস্তু ব্ল্যাকহোলের মতো একটা
কৌতুহলের সৃষ্টি করতে পারে নি
ব্ল্যাকহোলের গর্ভে বিশালাকার সব গ্রহ,তারকা,নক্ষত্র চূর্ণ-বিচূর্ণ
হয়ে ধূলিকণার মতো গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে হারিয়ে যায়
জ্যোতির্বিদরা সেই অষ্টাদশ শতকের শুরু থেকে সর্বগ্রাসী
‘গুপ্ত তারকাদের ‘নিয়ে গবেষণা শুরু করেছেন
তখন থেকে ধীরে ধীরে অসংখ্য পরোক্ষ প্রমাণের মাধ্যমে পুঞ্জিভূত
হয়েছে তাদের অস্তিত্বের প্রতি বিশ্বাস
। ইউরোপিয়ান
স্পেস এজেন্সির ব্ল্যাকহোল বিশেষজ্ঞ পল ম্যাকনামারা বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘আজ
থেকে অন্তত ৫০ বছর আগে আমাদের ছায়াপথে ভীষণ উজ্জ্বল কিছু একটা চোখে পড়ে বিজ্ঞানী
দেরএর
যথেষ্ট শক্তিশালী মহাকর্ষীয় টান তারকাদের নিজ কক্ষপথে খুব দ্রুত ঘুরতে বাধ্য করে
সে বেগ এতই
দ্রুতগামী যে মাত্র
২০বছরেই কক্ষপথ
পাড়ি দেওয়া সম্ভব হয়
যেখানে মিল্কিওয়ে না আকাশগঙ্গার কেন্দ্রে চক্রাকারে
এই একই রকমের কক্ষপথ পার হতে আমাদের সৌরমণ্ডলের সময় লাগে প্রায় ২৩০ মিলিয়ন বছর
পরবর্তী সময়ে বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেন, এই উজ্জ্বল বস্তুগুলোইব্ল্যাকহোলযুক্তরাষ্ট্রের পদার্থবিদ জন আর্কিবল্ড হুইলার ষাটের দশকের মাঝামাঝি সময়ে এই নামটি
উদ্ভাবন করেন
ঘূর্ণমান উত্তপ্ত সফেদ গ্যাস এবং প্লাজমা ব্যান্ড ঘিরে রাখে ব্ল্যাকহোলদীপ্তিমান অঞ্চলটির ভিতরের প্রান্তে কোন জিনিস প্রবেশ করলে তাৎক্ষণিকভাবে গায়েব
হয়ে যায়
ম্যাকনামারা ব্যাখ্যা দেন, ‘পয়েন্ট অব
নো রিটার্ন
বা যেখান থেকে আর ফিরে আসা যায় না, সেখানে কোনো শারীরিক বাঁধা কাজ করে না
এর মোকাবিলা
করার কোনো উপায় নেই
একবার যদি আপনি কৃষ্ণগহ্বরের ভিতরে ঢুকে পড়েন,তাহলে বের হওয়ার জন্য অসীম শক্তি অর্জন করতে হবে,যা কোনোভাবেই সম্ভব নয়
চাঁদের বুকে একটি গলফ বল এত দিনের সব জল্পনা
কল্পনার সাথে ইএইচটির ধারণ করা ব্ল্যাকহোলের প্রথম ছবির কোনো মিল নেই
গ্রিনোবলের ইনিস্টিউট
ফর মিলিমেট্রিক রেডিও অ্যাসট্রোনমির জ্যোর্তিবিদ মাইকেল ব্রিমার এএফপিকে বলেন
, ‘দৈত্যকার টেলিস্কোপ বানানোর ঝামেলায় আমরা জড়াইনিনিজের ওজনে নিজেই বিধ্বস্ত হওয়ার উপক্রম হয় এগুলোআমরা বরং আলাদা আলাদা কয়েকটি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের
সমন্বয়ে একটি বিশাল আয়না তৈরি করেছি
২০১৭ সালের এপ্রিলে বিশ্বজুড়ে আটটি এরকম রেডিও টেলিস্কোপ বিক্ষিপ্তভাবে
স্থাপন করা হয়
হাওয়াই, অ্যারিজোনা,স্পেন, মেক্সিকো,
চিলি ও দক্ষিণ মেরুতে অবস্থিত এই টেলিস্কোপ গুলো ভিন্ন দিক থেকে দুটি
ব্ল্যাকহোলের তথ্য সংগ্রহের জন্য বিশেষভাবে নির্মাণ করা হয়েছে
আগামী সপ্তাহে
প্রকাশিতব্য দুটি ব্ল্যাকহোলের যেকোনো একটি ছবিতে জুম করা হতে পারে
ফলাফল প্রকাশিরা
চাইছেন ধনু রাশির এ ছবিটি প্রকাশিত হোক
আমাদের নিজস্ব উপবৃত্তাকার সৌরমণ্ডলের কেন্দ্রে অবস্থিত এই ব্ল্যাকটি
প্রথম জ্যোতির্বিদদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে
ধনু রাশির ভর আমাদের সূর্যের ভরের ৪ কোটি গুণ বেশিতার মানে এই ব্ল্যাকহোলটি
প্রায় ৪৪ কোটি কিলোমিটার জুড়ে অবস্থিত ।
শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও, পৃথিবী থেকে প্রায় ২৬ হাজার আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত অত্যাধুনিক
প্রযুক্তির টেলিস্কোপ টি যেন চাঁদের বুকে একটি গলফ বলের ছবি তোলার চেষ্টা করছে

আইনস্টাইনের পরীক্ষাঃ
ব্ল্যাকহোলের কথা হবে আর সেখানে রিলেটিভিটি থাকবেনা এমনটা সম্ভব নয় । ব্ল্যাকহোলের অপর নাম দানব বললেও ভুল
হবে না 
ধনু রাশির
এর চেয়ে দেড় হাজার গুণ বেশি ভরের কৃষ্ণগহ্বর টি এম
৮৭ নামক একটি উপবৃত্তাকার সৌরমণ্ডলে অবস্থিতপৃথিবী থেকে এর দূরত্ব যথেষ্ট বেশি হলেও দূরত্ব
আর আকারের ভারসাম্য একে গবেষণার কাজে ব্যবহারযোগ্য করে তুলেছে
ম্যাকনামারা বলেন, “নিজেদের সৌরমণ্ডলে আয়েশ করে বসে আছে আমরাএর কেন্দ্রে পৌঁছাতে
হলে একগাদা তারকা আর ধূলিকণা ভেদ করতে হবে ।“
 টেলিস্কোপটির সংগৃহীত তথ্যের সঙ্গে এখনো তথ্য সংগ্রহ ও মিলিয়ে দেখার কাজ
চালিয়ে যেতে হবে
দলটি তার ওয়েবসাইট এ জানান, ‘ ব্ল্যাকহোলের
পূর্ণাঙ্গ ছবি তৈরির জন্য ইমেজিং অ্যালগোরিদমের মাধ্যমে যে তথ্য গুলো মেলানো
যাচ্ছিল না
, তার শূন্যস্থান পূরণের কাজ চলছে
ম্যাকনামারাসহ
এই প্রকল্পে অংশ না নেওয়া জ্যোতিঃপদার্থবিদরা অধীর আগ্রহে
, কিছুটা
উদ্বিগ্ন হয়ে অপেক্ষা করছেন
সাম্প্রতিক তথ্য আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার সাধারণ তত্ত্ব কে
চ্যালেন্ঞ্জ করে
কি না,তা জানতে চান তারাএ রকম বৃহত্তর পরিসরে কখনই তত্ত্ব টি পরীক্ষা করে দেখা হয় নি২০১৫ সালে এক সাথে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাওয়া দুটি ব্ল্যাকহোলের হদিস পেতে তরঙ্গ
সনাক্তকরণ পন্থা অবলম্বন করা হয়
এ কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট
বিজ্ঞানীরা নোবেল পুরষ্কার অর্জন করেন
ম্যাকনামারা বলেন, “আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতার তত্ত্ব অনুযায়ী ঠিক এমনই হওয়ার কথাতবে
সেগুলো ছিল একেবারেই ছোট ব্ল্যাকহোল
,সূর্যের চেয়ে যার ভর মাত্র ৬০ গুণ বেশি ছিলইভেন্ট হরাইজন টেলিস্কোপের পর্যবেক্ষণ
করা ব্ল্যাকহোলগুলোর সঙ্গে এর কোনো তুলনায় চলে না
আশাবাদী ম্যাকনামারা জানান, হতে পারে কোটি কোটি গুণ বড় ব্ল্যাকহোলের ক্ষেত্রে ভিন্ন কোনো
ফলাফল আসবে
আমরা আসলে কোনো কিছু জানি না
সম্পাদনা এবং তথ্য সংগ্রহ
ইয়াছিন আরাফাত তপু
ইইই চুয়েট
জিওন আহমেদ
ইইই চুয়েট

Leave a Reply