ওয়ার্ম হোল সম্পর্কে জানতে সবার আগে আমাদের হোয়াইট হোল সম্পর্কে বুঝতে হবে ।

হোয়াইট হোল

ব্ল্যাকহোল তার নিজস্ব ক্ষেত্রের মধ্যে কোন বস্তু এমনকি আলো আসলে মুহুর্তের মধ্যে তা নিজের মধ্যে টেনে নেয় । মাঝে মাঝেই আমরা প্রশ্ন করে থাকি, ব্ল্যাকহোল যদি সবকিছুকে নিজের মধ্যে টেনে নিয়ে গায়েব করে দেয় তাহলে তো এই মহাবিশ্বের ভর ধীরে ধীরে কমে যাওয়ার কথা । কিন্তু তা কি করে সম্ভব । এই সমস্যার সমাধানের লক্ষ্যেই আবিষ্কার হয় হোয়াইট হোলের । বিজ্ঞানীরা উল্লেখ করেন, প্রতিটি ব্ল্যাকহোলের একটা শেষ সীমা আছে । একটা ব্ল্যাকহোল যখন নিঃশেষ হয়ে যেতে থাকে, তখন সে তার ভিতর থাকা বস্তুগুলো বের করে দিতে থাকে । এভাবেই জন্ম হয় হোয়াইট হোলের । ব্ল্যাকহোল যেমন সবকিছুকে নিজের দিকে টেনে নেয়, হোয়াইট হোল তেমনি সবকিছুকে বাইরে বের করে দেয় । যার জন্য একে উজ্জ্বল ধরা হয় । ব্ল্যাকহোল যেমন টেনে নেয়া ছাড়া কোনকিছুকে বের করে দিতে পারেনা, তেমনি হোয়াইট হোল সবকিছুকে বের করে দেয়া ছাড়া টেনে নিতে পারেনা ।

হোয়াইট হোল মূলত সাধারণ তত্ত্বের এবং ব্ল্যাকহোলের একটি সাধারণ সমাধান । এই তত্ত্ব অনুযায়ী, যদি মহাবিশ্বে ব্ল্যাকহোলের অস্তিত্ব থাকে তবে হোয়াইট হোলের অস্তিত্বও থাকা উচিত । ক্যালিফোর্নিয়া ইন্সটিটিউট অব টেকনলোজির পদার্থবিজ্ঞানী সিন ক্যারল (Sean Carrol) হোয়াইট হোলকে এভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন, “ব্ল্যাক হোল হলো এমন একটি জায়গা যেখানে কেউ একবার গেলে আর ফিরে আসতে পারবে না । আর হোয়াইট হোল হলো এমন একটি জায়গা যেখান থেকে কেউ একবার বের হলে আর সেখানে ফিরে যেতে পারেনা।”   ব্ল্যাক হোলের ক্ষেত্রে ঘটনা দিগন্ত (Event Horizon) দিয়ে কেবল কোনো কিছু প্রবেশ করে কিন্তু হোয়াইট হোলের ক্ষেত্রে ঘটনা দিগন্ত দিয়ে সবকিছু বের হয়ে যায়।  ব্ল্যাকহোল এবং হোয়াইট হোল উভয়ের রয়েছে ভর, চার্জ, কৌণিক ভরবেগ।

আমরা জানি একটি বিন্দু থেকে বৃহৎ বিস্ফোরণের মাধ্যমেই জন্ম এ মহাবিশ্বের। যাকে আমরা বিগব্যাং বলে থাকি । বিজ্ঞানীরা মনে করেন বিগ ব্যাঙের সময়  এত বিশাল পরিমাণ শক্তি  এবং পদার্থ  উদয় হওয়ার পেছনে রয়েছে হোয়াইট হোলের অবদান।

ওয়ার্ম হোল

ব্ল্যাকহোল এবং হোয়াইট হোলের এই ধারণা থেকে জন্ম হয় ওয়ার্ম হোলের । ব্ল্যাকহোল এবং হোয়াইট হোলের সংযোগ স্থানকে বলা হয় ওয়ার্মহোল । অস্ট্রিয়ার বিজ্ঞানী  লুডউইগ ফ্লেম উল্লেখ করেন,  মহাবিশ্বের যে কোনো দুই প্রান্তের মধ্যে সংযোগ ঘটাতে পারে ব্ল্যাক হোল আর হোয়াইট হোল। যেখানে ব্ল্যাক হোল হল  “প্রবেশ পথ” আর হোয়াইট হোল হল “বাহির হওয়ার পথ” । ব্ল্যাক হোল যে সমস্ত পদার্থ শোষণ করে হোয়াইট হোল দিয়ে সেগুলো অন্য কোথাও বের হয়ে যায়।  এই ব্ল্যাক হোল আর হোয়াইট হোলকে যুক্ত করে যেটি সেটি হচ্ছে ওয়ার্মহোল।  যা এক প্রকার  সুড়ঙ্গ বা ব্ল্যাকহোল থেকে হোয়াইট হোলের পথও বলা যেতে পারে।

Leave a Reply