আমরা জানি, ডায়োড হল এমন একটি ইলেকট্রনিক ডিভাইস, যা একটি নির্দিষ্ট ধর্মের চার্জকে বা তড়িতকে শুধু একটি নির্দিষ্ট দিকে যেতে অনুমতি দেয় ।

PN জাংশন এবং বায়াসিং

ডায়োডে মূলত দুইটি সেকশন থাকে । যদি আমরা একে মাঝামাঝি দুইটা অংশে ভাগ করি, তবে একপাশে কিছু ধনাত্মক এবং অপর পাশে কিছু ঋণাত্মক চার্জ রাখা থাকে । যদি আমরা নিচের প্রথম চিত্রের ন্যায় ডায়োডের ধনাত্মক চার্জযুক্ত প্রান্তের সাথে ব্যাটারির ঋণাত্মক এবং ডায়োডের ঋণাত্মক প্রান্তের সাথে ব্যাটারির ধনাত্মক প্রান্ত যুক্ত করি, তবে ব্যাটারির ধনাত্মক প্রান্ত ব্যাটারির ঋণাত্মক চার্জগুলোকে এবং ব্যাটারির ঋণাত্মক প্রান্ত ব্যাটারির ধনাত্মক চার্জগুলোকে নিজের দিকে টেনে নেবে । ফলে ডায়োডের উভয় প্রান্তের মাঝখানের লেয়ারটি বেড়ে যাবে এবং কারেন্ট প্রবাহিত হবে না । কিন্তু আমরা যদি দ্বিতীয় চিত্রের ন্যায় ডায়োডের ধনাত্মক চার্জযুক্ত প্রান্তের সাথে ব্যাটারির ধনাত্মক প্রান্ত এবং ডায়োডের ঋণাত্মক চার্জযুক্ত প্রান্তের সাথে ব্যাটারির ঋণাত্মক প্রান্ত যুক্ত করি, তবে সমধর্মী চার্জের সাথে সংযুক্ত থাকার ফলে ব্যাটারিতে জমে থাকা বিপুল পরিমাণ ধনাত্মক এবং ঋণাত্মক চার্জগুলো ডায়োডের ধনাত্মক এবং ঋণাত্মক চার্জগুলোকে ধাক্কা দেবে । ফলে এই চার্জগুলো একে অপরের দিকে আসতে শুরু করবে এবং ডায়োডের ধনাত্মক এবং ঋণাত্মক চার্জের মাঝখানের লেয়ারটির প্রশস্ততা কমতে থাকবে ।


এভাবে এক সময় এটির প্রশস্ততা বিলুপ্ত হবে এবং ডায়োডের মধ্যদিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হবে । এতে কারেন্ট প্রবাহিত হতে পারে বিধায় আমরা একে ফরোয়ার্ড বায়াস বলে থাকি । আর না পারলে সেই সংযোগকে রিভার্স বায়াস বলি ।

ডায়োডের যে প্রান্তে ধনাত্মক চার্জ থাকে তাকে আমরা এবং যে প্রান্তে ঋণাত্মক চার্জ থাকে, তাকে আমরা বলি । তবে বর্তনি আঁকার সময় এই PN জাংশনকে আমরা চিত্রের ন্যায় করে উপাস্থাপন করি ।


তাহলে দাঁড়াল, ডায়োডের প্রান্তের সাথে ব্যাটারির ধনাত্মক প্রান্ত যুক্ত থাকলে এবং ডায়োডের প্রান্তের সাথে ব্যাটারির ঋণাত্মক প্রান্ত যুক্ত থাকলে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হতে পারে । যাকে আমরা ফরওয়ার্ড বায়াস বলি । আর ডায়োডের প্রান্তের সাথে ব্যাটারির ঋণাত্মক প্রান্ত যুক্ত থাকলে এবং ডায়োডের প্রান্তের সাথে ব্যাটারির ধনাত্মক প্রান্ত যুক্ত থাকলে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হতে পারেনা । যাকে আমরা রিভার্স বায়াস বলি । এই জ্ঞান দিয়ে আমরা খুব সহজেই এসি কারেন্টকে ডিসিতে রূপান্তরিত করতে পারি । কিন্তু তার আগে এসি এবং ডিসি কারেন্ট সম্পর্কে জানা প্রয়োজন ।

এসি এবং ডিসি কারেন্ট

আমরা জানি যেকোন ইলেকট্রনিক সংযোজনে সর্বনিম্ন দুইটি সংযোগ থাকে । যার একটাকে আমরা ধনাত্মক এবং অপরটিকে আমরা ঋণাত্মক নামে চিনি । কিন্তু এসি কারেন্টের ক্ষেত্রে এমনটা ঘটেনা । এসি কারেন্টের ক্ষেত্রে তারদুটি পর্যায়ক্রমিকভাবে ধনাত্মক এবং ঋণাত্মকে পরিণত হয় । কখনও একটি তার ধনাত্মক তো অপরটি ঋণাত্মক, আবার কখনও একটি টার ঋণাত্মক তো অপরটি ধনাত্মক । এভাবেই চলতে থাকে ।


কিন্তু ডিসি কারেন্টের ক্ষেত্রে এমনটা ঘটেনা । এখানে একটি তার সর্বদা ধনাত্মক এবং অপরটি সর্বদা ঋণাত্মক হিসেবে বিরাজমান থাকে । পরিবর্তন ঘটেনা । বাস্তব জীবনে আমাদের দুইটি কারেন্টই প্রয়োজন । তাই কখনও এসিকে ডিসি, আবার ডিসিকে এসি করার প্রয়োজন হয় । যেমন কম অপচয়ে বিদ্যুৎ পরিবহনের জন্য ডিসি এর চেয়ে এসি কারেন্ট ভাল এবং আমরা এটি ব্যবহার করছি । যদিও আধুনিক বিজ্ঞানীরা বলছেন, হাই ভোল্টেজ ডিসি পরিবহণ এসির চেয়ে ভাল ।

এসি কারেন্ট চিত্রের তরঙ্গের ন্যায় হয় ধনাত্মক এবং ঋণাত্মক পথে অগ্রসর হয় । সম্পূর্ণ একটি ধনাত্মক এবং একটি ঋণাত্মক পথ অতিক্রম করতে তাকে আমরা বলি একটি পূর্ণ তরঙ্গ । আমরা এই এসি তরঙ্গ বা কারেন্টকে দুইভাবে এক মুখী করব ।

  • অর্ধ-তরঙ্গ একমুখী করণ ।
  • পূর্ণ তরঙ্গ একমুখী করণ ।

অর্ধ-তরঙ্গ একমুখী করণ

যেহেতু সোর্সটি একটি এসি ভোল্টেজ সোর্স, তাই চিত্রে এই তরঙ্গটির তারটি ধনাত্মক হলে, তারটি ঋণাত্মক হবে । কিন্তু একটি পূর্ণ তরঙ্গে ধনাত্মক এবং ঋণাত্মক উভয়ই থাকে বিধায় একটি পূর্ণ তরঙ্গে একবার তারটি ধনাত্মক, তারটি ঋণাত্মক হবে এবং আর একবার Q তারটি ধনাত্মক এবং P তারটি ঋণাত্মক হবে ।


চিত্রে লক্ষ করুণ, যখন শুধুমাত্র তারটি ধনাত্মক এবং তারটি ঋণাত্মক তখন ডায়োডটি ফরওয়ার্ড বায়াসে থাকছে এবং তরঙ্গের সেই অংশটি অতিক্রম করছে । কিন্তু যখন তারটি ঋণাত্মক এবং তারটি ধনাত্মক তখন ডায়োডটি রিভার্স বায়াসে থাকছে এবং তরঙ্গের সেই অংশটি অতিক্রম করতে পারছেনা । তাহলে আমরা বিন্দু থেকে সর্বদা ধনাত্মক এবং B বিন্দু থেকে সর্বদা ঋণাত্মক কারেন্ট পাচ্ছি । তাহলে আমরা এসি থেকে ডিসি পাচ্ছি । কিন্তু এতে প্রতিটি পূর্ণ তরঙ্গের মধ্যে শুধু অর্ধেকটি পাচ্ছি বিধায় আমরা একে অর্ধ-তরঙ্গ একমুখী করণ বলে থাকি । আবার এটি কিন্তু পিওর ডিসি নয় । ধনাত্মক এবং ঋণাত্মক প্রান্ত আলাদা থাকলেও এতে ভোল্টেজ কিন্তু কম বেশি হচ্ছেই । তাই আমরা একে পালসেটিং ডিসি বলে থাকি ।
 

পূর্ণ তরঙ্গ একমুখী করণ

এবার যদি আমরা নিচের চিত্রের মত করে বর্তনি সংযুক্ত করি, তবে যখন প্রান্ত ধনাত্মক এবং প্রান্ত ঋণাত্মক তখন ডায়োড চারটির মধ্যে D1 এবং D2 ফরওয়ার্ড বায়াসে থাকছে । ফলে তড়িৎ প্রবাহিত হচ্ছে এবং রোধটির A প্রান্তে ধনাত্মক এবং B প্রান্তে ঋণাত্মক কারেন্ট পাচ্ছি । একইভাবে যখন প্রান্ত ঋণাত্মক এবং প্রান্ত ধনাত্মক তখন ডায়োড চারটির মধ্যে D3 এবং D4 ফরওয়ার্ড বায়াসে থাকছে । ফলে তড়িৎ প্রবাহিত হচ্ছে এবং এবারও রোধটির A প্রান্তে ধনাত্মক এবং B প্রান্তে ঋণাত্মক কারেন্ট পাচ্ছি ।


তাহলে পূর্ণ তরঙ্গের উভয় পাশের জন্য আমরা A প্রান্তে ধনাত্মক এবং B প্রান্তে ঋণাত্মক কারেন্ট পাচ্ছি । অর্থাৎ আমরা পালসেটিং ডিসি ভোল্টেজ পাচ্ছি ।

এভাবে ডায়োড ব্যবহার করে আমরা এসি কারেন্টকে ডিসিতে পরিণত করতে পারি । তবে আমরা যে ডিসি পেয়েছি, তা পিওর ডিসি নয় । আমরা পালসেটিং ডিসি পেয়েছি । পরবর্তী কোন আর্টিকেলে আমরা এই পালসেটিং ডিসিকে পিওর ডিসি বানাবো ।

Jeion Ahmed

B.Sc. in EEE CUET

Leave a Reply