পুরো প্রশ্নটি ঠিক এরকম, আলবার্ট আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্বের E=m2 সূত্রের মাধ্যমে ভর এবং শক্তিতে এক সূত্রে গেথে দিয়েছিলেন । যার অর্থ দাঁড়ায়, বস্তুর ভর থাকতে তবেই তার শক্তি থাকবে । আবার শক্তি থাকলে তার ভর থাকবে । কিন্তু ফোটনের ক্ষেত্রে আমরা যা দেখি, এর শক্তি আছে কিন্তু ভর নেই । এটি কিভাবে সম্ভব ?

যারা ফোটনকে নিয়ে কিছুটা হলেও ভেবেছেন, তারা কোন না কোন একবার এটা নিয়ে দ্বিধায় পড়েছেন । এর উত্তরটা অনেক সহজ কিন্তু সেটা বোঝা এবং স্বীকার করা কিছুটা কঠিন । যার জন্য, আমাকে এই প্রশ্নের উত্তর নিয়ে অনেকগুলো আর্টিকেল পড়তে হয়েছে । উত্তরটা আমার কাছে ছিল, কিন্তু সেটা আমি ঠিকভাবে না বুঝে ওঠার কারণে স্বীকার করতে পারিনি । যাই হোক প্রশ্নটার উত্তরে আসা যাক ।

ফোটনের এই উত্তরটি পাওয়ার জন্য আমাদের একই আপেক্ষিক তত্ত্বের অন্য একটি সূত্রকে নিয়ে ভাবতে হবে । সেটা হল, E2 = p2c2 + m2c4 । 

যেখানে m হল বস্তুর নিশ্চল ভর । p হল ভরবেগ এবং c হল সর্বোচ্চ অর্জিত বেগ বা সোজা কথায় আলোর বেগ । এই সমীকরণে ভর যদি শূন্য হয় (m = 0), তবে E = pc । অর্থাৎ এমনটাও সম্ভব, বস্তুর শক্তি আসে তার ভর নয় বরং ভরবেগ থেকে । এখন হয়তো আপনারা ভাবছেন, বস্তুর ভর না থাকলে ভরবেগ এলো কোথা থেকে ? আমরা তো জানি, ভরবেগ হল ভর এবং বেগের গুণফল । ভর এবং বেগের কোন একটি তো শূন্য হয়ে গেলে এর ভরবেগ শূন্য হয়ে যায় । আইনস্টাইনের বিশেষ আপেক্ষিক তত্ত্বের মাধ্যমেও আমরা জেনেছি, বস্তুর বেগ আলোর বেগের সমান হলে এর ভর শূন্য হয়ে যায় । কাজেই যেহেতু ফোটনের বেগ আলোর বেগের সমান তাই এর বেগ থাকলেও ভর তো শূন্য হওয়ার কথা । আর ভর শূন্য হয়ে গেলে যতই বেগ থাকুক না কেন, বস্তুর ভরবেগ শূন্য হবেই । এদিক থেকেও অনেকের মনে হচ্ছে, ভর বিহীন ভরবেগ সম্ভব নয় । এটা একদম সোজা কথা ।

কিন্তু ফোটনের ভর ছাড়াও ভরবেগ সম্ভব । কারণ এতক্ষণ আমরা যতগুলো যুক্তি দিচ্ছিলাম, সবগুলো ফোটনকে কণা হিসেবে চিন্তা করে । কিন্তু ফোটনের তো আরও একটি ধর্ম রয়েছে । সেটা তো তাকে ছেড়ে যায়নি । সেটা হল- তরঙ্গ ধর্ম । যেখান থেকে আমরা এমন উত্তর পাই, এর ভর না থেকেও ভরবেগ থাকা সম্ভব । যা আসে ফোটনের ডিগ্রি অফ ফ্রিডম বা স্বাধীনতার মাত্রা থেকে । স্বাধীনতার মাত্রা কি সে সম্পর্কে না হয় অন্য কোন একদিন লেখা যাবে ।

ঠিক আছে, আমরা না হয় তাত্ত্বিকভাবে মেনে নিলাম, ফোটনের ভর নেই কিন্তু ভরবেগ আছে । যা থেকে ফোটন শক্তি পায় । কিন্তু শুধু তত্ত্ব দিলেই তো হবেনা । প্রমাণও দিতে হবে । শুরুতে একটা প্রমাণ দেই, ভর না থেকেও শক্তি থাকা সম্ভব ।

ছোটবেলায় মেয়েদের একটা বিশেষ দড়ি নাচ খেলা দেখেছিলাম । লেখাটা অনেকটা এরকম, দুজন মেয়ে পাশাপাশি কিছুটা দূরত্বে দাঁড়িয়ে একটা রশির দুই প্রান্ত ধরে রশিটিতে ঢেউ তৈরি করত । এরপর মাঝখানে তৃতীয় মেয়েটি রশির সেই ঢেউয়ের তালে তালে লাফাতো । সে এমনভাবে লাফাতো, যাতে রশি তাকে স্পর্শ না করে । এই খেলায় মাঝে মধ্যে এমনটাও দেখেছি, দুইপাশে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়ে দুজনের মধ্যে একজন হাত না নাড়িয়ে দাঁড়িয়ে থাকতো, আর অপর পাশের মেয়েটি একাই ঢেউ তৈরি করত । তার তৈরি করা প্রত্যেক ঢেউ বা তরঙ্গ স্থির থাকা মেয়েটির হাতে টান সৃষ্টি করত।

এখানে যে মেয়েটি ঢেউ সৃষ্টি করছিল, তার হাতের শক্তি ঢেউ বা তরঙ্গ আকাড়ে স্থির থাকা মেয়েটির হাতে চলে যেত । এতে ভরের কোন স্থানান্তর, সৃষ্টি বা ধ্বংস হত না ছাড়াই শক্তি একজনের হাত থেকে অন্যজনের হাতে যেত । কাজেই ভর ছাড়াও শক্তির অস্তিত্ব সম্ভব ।

কম্পটন ক্রিয়া
কম্পটন ক্রিয়া

ফোটনের যে ভরবেগ আছে, তার একটি প্রমাণও আছে । কম্পটন ইফেক্ট সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি । যেখানে ফোটন এসে একটা স্থির ইলেকট্রনকে ধাক্কা দেয় এবং সেটা ভরবেগ লাভ করে, গতিশীল হয় । ফোটনের ধাক্কাতেই এখানে ইলেকট্রনটি ভরবেগ লাগ করেছে । ফোটনের যদি ভরবেগ না থাকতো, তাহলে ইলেকট্রন কখনই ভরবেগ পেত না । তাই ফোটনের অবশ্যই ভরবেগ ধর্ম রয়েছে ।

কাজেই আমরা এটা মেনে নিতে পারি, ফোটনের শক্তি থাকার রহস্য তার ভরের মধ্যে নয় বরং ভরবেগের মধ্যে লুকায়িত আছে । যেখানে ভরবেগ আর ভর দুইটা আলাদা আলাদা ভাবে নিজেদের অস্তিত্ব দিতে পারে ।

This Post Has One Comment

  1. নামহীন

    যদিও ভালো হয়েছে তবে, আরো নিশ্চিত করতে গানিতিক ব্যাখ্যার প্রয়োজন ছিল।

Leave a Reply