রাতের আকাশে যখন চাঁদের
পাশেই যে বড় আলোক বিন্দু উজ্জ্বল হয়ে দেখা দিচ্ছে সেদিকে টেলিস্কোপে চোখ রাখলে দেখা
যাবে চারটি বিন্দু
একটি বড় আর তিনটি  ছোট

বড়
বিন্দুটিই হচ্ছে বৃহস্পতি গ্রহ
আর ছোট তিনটি বিন্দু হচ্ছে বৃহস্পতির তিনটি বৃহৎ উপগ্রহআসুন সামান্য কিছু জানি
বৃহস্পতি গ্রহ সম্পর্কে
। 

পৃথিবী এবং বৃহস্পতির
তুলনামূলক চিত্র
 গ্রহরাজ
বৃহষ্পতিকে প্রকৃত পক্ষেই গ্রহদের রাজা বলা চলে
 বৃহস্পতি গ্রহকে ইংরেজিতে বলা হয় Jupiter (জুপিটার)রোমানরা গ্রহটির নাম রেখেছিল পৌরাণিক চরিত্র জুপিটারের নামে
জুপিটার রোমান পুরাণের প্রধান দেবতাজুপিটার
অর্থ হচ্ছে
আকাশের পিতা
সূর্য থেকে দূরত্বের দিক থেকে পঞ্চম এবং আকার
আয়তনের দিক দিয়ে সৌরজগতের বৃহত্তম গ্রহ হচ্ছে
 আমার বৃহস্পতিবৃহস্পতি ব্যতিত সৌর জগতের বাকি সবগুলো গ্রহের ভরকে একত্র করলেও বৃহস্পতির ভর তা থেকে প্রায় আড়াই গুণ বেশি হবেসূর্য্যের
সবকটি গ্রহের ভর সমষ্টির প্রায় শতকরা ৭০ভাগ ভরই হচ্ছে বৃহস্পতির
বৃহস্পতিসহ
আরও তিনটি গ্রহ শনি
, ইউরেনাস এবং
নেপচুনকে একসাথে গ্যাস দানবগ্রহ বলা হয়
বৃহস্পতি
গ্রহ এতোই বড় যে এর ভিতরে চাইলেই ১০০০ টি পৃথিবী অনায়াসে পুরে রাখা যাবে
বৃহস্পতি সূর্য থেকে ৭৭.৮৪ কোটি কিলোমিটার দূরে অবস্থিত
আর পৃথিবী থেকে এর দূরত্ব
 প্রায় ৮০ কোটি কিলোমিটার
এর ভর পৃথিবীর ভরের ৩১৭.৮ গুণ আর ব্যাস ১১.২ গুণ
 এর গড় ঘনত্ব পানির ঘনত্বের ১.৩ গুণনিজ অক্ষের  চারপাশে
এর ঘূর্ণন কাল ৯
.৮ ঘন্টা আর সূর্যের চারপাশে আবর্তন করতে এর
সময় লাগে ১১
.৮৬ বছর
অর্থাৎ পৃথিবীর হিসেবে মাত্র ৯.৮ ঘন্টায় বৃহস্পতিতে এক দিন হয়,
কিন্তু বৃহস্পতির এক বছর হতে সময় লাগে পৃথিবীর হিসেবে মাত্র ১১.৮৬
বছর
এতো বেশি সময় লাগার একমাত্র কারণ হচ্ছে সূর্য থেকে এর দূরত্ব
জনিত বিশাল  বড় অরবিট বা কক্ষ পথ
বিশাল
বর্তুলাকার বা ডিম্বাকার কক্ষপথে ঘুরতে ঘুরতে এক সময়
 বৃহস্পতি পৃথিবীর অনেকটা কাছে চলে আসেগত বছর সেপ্টেম্বর মাসের ২১ তারিখ ৪৭ বছর পর পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে আসে বৃহস্পতি
এর আগে সর্বশেষ ১৯৬৩ সালে পৃথিবীর
সবচেয়ে কাছাকাছি এসেছিল আর আবার ২০২২ সালের পর পুনরায় একে একই অবস্থানে পাওয়া যাবে
বৃহস্পতি গ্রহের বায়ুমন্ডল গ্যাসের মেঘে ছাওয়া
মেঘ ছাড়া বৃহস্পতির আর কিছুই বাইরে থেকে দেখা
যায় না
, কারণ এই মেঘ
প্রায় ১০০ কি
.মি পুরু
এই
মেঘের তাপমাত্রা ১২০ডিগ্রি সেলসিয়াস এরও কম
পৃথিবী থেকে দেখলে
বৃহস্পতির আপাত উজ্জ্বলতার মান পাওয়া যায় ২
.
 এটি পৃথিবীর আকাশে দৃশ্যমান তৃতীয় উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক
কেবল চাঁদ
 এবং শুক্র গ্রহের উজ্জ্বলতা এর থেকে
বেশি
অবশ্য কক্ষপথের কিছু বিন্দুতে মঙ্গল গ্রহের উজ্জ্বলতা
বৃহস্পতির চেয়ে বেশি হয়ে থাকে

যদিও বৃহস্পতি গ্যাসীয় গ্রহ তবুও ধারণা করা হয়
গলিত সিলিকেট ও ধাতুর
 দ্বারা বৃহস্পতির একটি কঠিন কেন্দ্রকণা গঠিত
হয়েছে
এই কেন্দ্র কণার আকার প্রায় পৃথিবীর আকারের সমান এ ছাড়া বৃহস্পতি, সূর্যেরই মতো হাইড্রোজেন ও হিলিয়ামে
গঠিত
বৃহস্পতির মেঘের উপরি ভাগের তাপমাত্রা ১২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এরও
কম হলে কি হবে
, এর কেন্দ্রের
তাপমাত্রা ৩০০০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস
অর্থাৎ
এই তাপমাত্রা সূর্যের পৃষ্ঠদেশের প্রায় ৫ গুণ বেশি
তাই বলা যায় বৃহস্পতির অভ্যন্তরে নিজস্ব তেজের
উৎস রয়েছে

আগেই বলেছি বৃহস্পতি গ্রহের প্রাথমিক উপাদান হচ্ছে
হাইড্রোজেন এবং সামান্য পরিমাণ হিলিয়াম
খুব
দ্রুত
 ঘূর্ণনের কারণে এর আকৃতি হয়েছে কমলাকৃতির
গোলকের মত
এই বিশাল গ্রহের বাইরের বায়ুমন্ডলের বিভিন্ন অক্ষাংশে ঝড়-ঝঞ্ঝাপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করেএ ধরনের পরিবেশের একটি অন্যতম ফলাফল হচ্ছে মহা লাল
দাগ
( great red spot)
 
মহা
লাল দাগ
( great red spot)
এটি মূলত একটি অতি শক্তিশালী ঝড় যা সপ্তদশ শতাব্দী
থেকে একটানা বয়ে চলেছে বলে ধারণা করা হয়
এটি গ্রহটিকে ঘিরে একটি দূর্বল বা ক্ষীণ বলয় এবং শক্তিশালী চৌম্বকক্ষেত্র রয়েছে
উপগ্রহ
বৃহস্পতির ৬৩ টি নামকরণকৃত উপগ্রহ বা চাঁদ রয়েছেএদের
মধ্যে ৪৭ টির ব্যাস ১০ কিলোমিটারের চেয়েও কম এবং ১৯৭৫ সালের পর আবিষ্কৃত
বৃহস্পতির
সবচেয়ে বড় চারটি উপগ্রহ হল আয়ো
,
ইউরোপা, গ্যানিমেড এবং ক্যালিস্টো,এদেরকে গ্যালিলীয় উপগ্রহ বলা হয়
কারণ
১৬১০ সালে
 গ্যালিলিও প্রথম এই চারটি উপগ্রহ
আবিষ্কার করেছিলেন

বৃহস্পতির উপগ্রহগুলি
1. Lo
2  2. Europa
3.   Ganymede
4.   Callisto
5.   Amalthea
6.   Himalia
7.   Elara
8.   Pasiphae
9.   Sinope
10.Lysithea
11.Caeme
12.Ananke
13.Leda
14.Thebe
15.Adrastea
16.Metis
17.Callirrahoe
18.Themisto
19.Megaclite
20.Taygete
21.Chaladene
22.Harapalyke
23.Kalyke
24.Locaste
25.Erinime
26.Isonoe
27.Praxidike
28.Autonoe
29.Thyone
30.Hermippe
31.Aitne
32.Eurydome
33.Euanthe
34.Euporie
35.Orthosie
36.Sponde
37.Kale
38.Pasithee
39.Hegemone
40.Mneme
41.Aoede
42.Thelxinoe
43.Arche
44.Kallichore
45.Helike
46.Carpo
47.Eukelade
48.Cyllene
49.Kore
50.
Herse
সংখ্যা দ্বারা পরিচিত উপগ্রহ গুলি
1.   S/2003 J2
2.   S/2003 J3
3.   S/2003 J4
4.   S/2003 J5
5.   S/2003 J9
6.   S/2003 J10
7.   S/2003 J12
8.   S/2003 J15
9.   S/2003 J16
10.S/2003
11. S/2003 J19
12.S/2003 J23
বৃহস্পতির কিছু গুরুত্বপূর্ণ অভিযান
পাইওনিয়ার-১০: যুক্তরাষ্ট্র ১৯৭২ সালের ৩ মার্চ বৃহস্পতির উদ্দেশ্যে পাইওনিয়ার ১০ উৎক্ষেপণ
করে
এটি বৃহস্পতির উদ্দেশ্যে প্রথম মনুষ্য বিহীন মহাশূন্যযান১৯৭৩ সালের ৩ ডিসেম্বর পাইওনিয়ার১০ বৃহস্পতির কক্ষে প্রবেশ করে
প্রায় ১৩০
.০০০ কিলোমিটার দূরত্বে বৃহস্পতিকে পরিক্রমণ করে
এটি বৃহস্পতির বিকিরণ বলয় নিরূপণ করে এবং হাইড্রোজেন ও হিলিয়ামের
সন্ধান লাভ করে

এছাড়া এটি বৃহস্পতির চুম্বক
ক্ষেত্র আবিষ্কার করে

 
চুম্বক ক্ষেত্র লম্বা লেজের মতো যেটি প্রায় ৮০০ কিলোমিটার লম্বা
পাইওনিয়ার১১: ১৯৭৩ সালের ৬ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্র মনুষ্য বিহীন মহাশূন্যযান
পাইওনিয়ার
১১ বৃহস্পতির
উদ্দেশ্যে
 উৎক্ষেপণ করে
 ১৯৭৪ সালের ডিসেম্বরে এটি বৃহস্পতির কক্ষপথে পরিক্রমণ
করে
পাইওনিয়ার১২:১৯৭৪ সালের মার্চ মাসে যুক্তরাষ্ট্র মনুষ্য বিহীন
মহাশূন্যযান পাইওনিয়ার
১২ বৃহস্পতির
উদ্দেশ্যে উৎক্ষেপণ করে

এটি ১৯৭৫ সালের নভেম্বর বৃহস্পতি
কক্ষপথে পৌঁছে
পাইওনিয়ার সের্টান: ১৯৭৪ সালের ২ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্র পাইওনিয়ার সের্টান নামে মনুষ্য বিহীন মহাশূন্যযান
বৃহস্পতিরউদ্দেশ্যে উৎক্ষেপণ করে
এটি
বৃহস্পতির প্রায়
 ৪২.০০০ কিলোমিটার
দূরত্বে পৌঁছাতে সক্ষম হয়
ভয়েজার: ১৯৭৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্র মনুষ্য বিহীন
মহাশূন্যযান ভয়েজার
১ বৃহস্পতির
উদ্দেশ্যে উৎক্ষেপণ করে

এটি ১৯৭৯ সালের ৫ মার্চ বৃহস্পতির কক্ষ পরিক্রমণ করে এ মহাকাশযান বৃহস্পতির চারদিকে বেষ্টনকৃত পাতলা
বলয় আবিষ্কার করে

ভয়েজার: ১৯৭৭ সালের ২০ আগষ্ট ভয়েজার
২ বৃহস্পতির উদ্দেশ্যে উৎক্ষিপ্ত হয়
যুক্তরাষ্ট্রের
এ মনুষ্য বিহীন মহাশূন্যযান ১৯৭৯ সালের ১০ জুলাই বৃহস্পতির কক্ষপথ পরিক্রমণ করে
এটি বৃহস্পতির ৪ টি বড় উপগ্রহের বিস্তারিত বিভিন্ন প্রকার
ছবি প্রেরণ করে
তত্থ্য সংগ্রহ এবং সম্পাদনায়
জিওন আহমেদ
ইইই
চুয়েট, বাংলাদেশ

Leave a Reply