কৃত্রিম
বুদ্ধিমত্তার কথা বললেই আমাদের চোখের সামনে ভসে ওঠে একটা কম্পিউটার কিংবা রোবটের
চিত্র । যাকে যেকোন প্রশ্ন করলে মানুষের মতই উত্তর দিচ্ছে, যেকোন কাজ করতে বললে
মানুষের মতই করে ফেলছে । ঠিক যেন, এর মধ্যে
আগে থেকেই কোন মানুষ ঢুকে আছে । আর সে
আমাদের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে কিংবা কাজ করে দিচ্ছে । কিন্তু তা তো সম্ভব নয় ।
তাহলে কিভাবে সম্ভব ?

রাস্তা
দিয়ে মুহুর্তের মধ্যে একটা গাড়ি আপনাকে অতিক্রম করে চলে গেল । মাঝে মাঝে মনের
মধ্যে প্রশ্ন জাগতেই পারে- গাড়িটিকে তেল বা গ্যাস দিচ্ছি, তা দিয়ে এটি কিভাবে চাকা
ঘুড়িয়ে চলে যাচ্ছে ? ঠিক যেমন আমরা খাই এবং তা থেকে যে শক্তি পাই, যার সাহায্যে
আমরা দিয়ে হাটা চলা করি । কিন্তু গাড়ির তো আমাদের মত প্রাণ নেই । তাহলে তেল বা
গ্যাসের বিনিময়ে কিভাবে গাড়ি চলে ?

মাঝে
মধ্যেই আপনার মনের মধ্যে এমন প্রশ্নের উদয় হতেই পারে । আপনি যদি এর পিছনের
বিজ্ঞানটা জানেন এবং বোঝেন, তবে আপনার জন্য পৃথিবী জয় করাটা কঠিন কিছু নয় । কিন্তু
আপনি যদি সেটা বুঝতে না পারেন, তবে আপনাকে আজীবন গাড়ির ভিতর মানুষ বা কোন ভূতুরে
আত্না লুকিয়ে থাকে, এমন অসম্ভব বিশ্বাস করেই থাকতে হবে ।

তবে
একটু চিন্তা করলেই এর পিছনের বিজ্ঞানটা আপনি জানতে পারেন ।
গাড়িতে তেমন কোন জটিলতা কিংবা প্রাণের অস্তিত্ব থাকা
জরুরী নয় । এর মধ্যে এমন এক যান্ত্রিক সমন্বয় তৈরি করা হয়েছে, যাতে জ্বালানীকে
পুড়িয়ে এর মধ্যকার শক্তিকে যান্ত্রিক শক্তিতে পরিণত করছে ।

ঠিক তেমনি রোবট কিংবা কম্পিউটারের মধ্যে রয়েছে ইলেকট্রনিক্সের অনেকগুলো
জটিল আবিষ্কারের সমন্বয় । প্রোগ্রামিং করে একবার শুধু নির্দেশনাগুলো দিয়ে রাখছি,
তাদের কি করতে হবে । এরপর বিদ্যুতের সংযোগ দেয়ার সংযোগ দেয়ার সাথে সাথে সেই
নির্দেশনা অনুসারে কাজ শুরু হয়ে যায় । কথাগুলো শুনে খুব জটিল মনে হলেও এটা কৃত্রিম
বুদ্ধিমত্তার প্রাথমিক ধাপ । শুধুমাত্র গবেষণাই প্রোগ্রামিং এবং ইলেকট্রনিক্সকে
এমন একটি ধাপে নিয়ে এসেছে, এখানে এই কম্পিউটার কিংবা রোবটগুলো আমাদের অনুভূতি
কিংবা ইচ্ছা জানতে সক্ষম হচ্ছে । তারা প্রতিটা মূহুর্ত গুগলের মত এক বিশাল ভার্চুয়াল
জ্ঞানের জগতে সংযুক্ত থেকে আমাদের যেকোন প্রশ্নের উত্তর দিতে তারা সর্বদা প্রস্তুত
। আমাদের প্রশ্ন পেলে এই তথ্যের ভান্ডার থেকে প্রয়োজনীয় তথ্যটি আমাদের সামনে হাজির
করছে । আর এ কাজটি বাস্তবায়ন করতে আমাদের সবার আগে যা প্রয়োজন হয়েছিল, আমাদের
বাস্তব জগতকে ইলেকট্রনিক্সের কাছে বোধগম্য করা তোলা ।
ইলেকট্রনিক্সের কাছে আমাদের বাহ্যিক জগতকে বোধগম্য করে তোলার এই কাজটি করতে এক
বিস্তির্ণ পথ পাড়ি দিতে হয়েছে আমাদের ।

প্রথমত
ইলেকট্রনিক্স আসলে প্রোগ্রামিং বলতেও কিছু বোঝেনা । সে শুধু বোঝে কারেন্ট এবং
ভোল্টেজ । যদি তাকে ভোল্টেজ দেয়া হয়, তবে সে চালু হয় আবার যদি কেউ তাকে ভোল্টেজ না
দেয়, তবে সে বন্ধ হয়ে যায় । এই বন্ধ এবং চালু হওয়ার উপরই দাঁড়িয়ে আছে আমাদের এই
বিশাল ভার্চুয়াল জগত । কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যার থেকে অবিচ্ছিন্ন একটি বিষয় । আর এই
অন এবং অফ অবস্থাকে আমরা বলি ১ এবং ০ অবস্থা । যা বাইনারি নামেও পরিচিত । এই
পৃথিবী সৃষ্টির পর থেকে একটি জিনিস ধ্রুবক ছিল । যা হল-পরিবর্তন । সবকিছুতেই
পরিবর্তন আসবেই এবং আস্তেই থাকবে । এই পরিবর্তনকে যেদিন থেকে আমরা ইলেকট্রনিক্সে
কারেন্ট এবং ভোল্টেজে রূপান্তরিত করতে সক্ষম হয়েছি, সেদিন থেকেই আমাদের মধ্যে তৈরি
হয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নামক নতুন চাহিদার ।

বাহ্যিক চলককে বৈদ্যুতিক কারেন্ট বা
ভোল্টেজে রুপান্তর (
Transducer)

বাহ্যিক জগতের কোন পরিবর্তনই বা তাদের
সিগনাল তড়িৎ সিগনাল নয় । সেগুলো সাধারণত ধারাবাহিক বা অ্যানালগ পরিবর্তন । তাই
বাহ্যিক চলকের মানও একটি অ্যানালগ সিগনাল যা অ্যানালগ । যেহেতু আমাদের ডিভাইস তড়িৎ
সিগনাল ছাড়া অন্য কোন সিগনাল বুঝতে পারেনা তাই শুরুতে বাহ্যিক পরিবর্তনের বিভিন্ন
মানগুলোকে সমতুল্য তড়িৎ সিগনালে তথা কারেন্ট কিংবা ভোল্টেজে রুপান্তর করতে হবে ।
এর জন্য আমরা তৈরি করলাম ট্রান্সডিউসার
যা বাহ্যিক আচরণকে সমতুল্য তড়িৎ সিগনালে রুপান্তর করতে ।
পরিচিত কিছু ট্রান্সডিউসার যেমন-

  • এলডিআর বা লাইট ডিপেন্ডেন্ট রেসিস্টরঃ এটি এর উপর আপতিত আলোর তীব্রতার বিভিন্ন মানের জন্য ভিন্নও
    ভিন্নও পাঠ দেয় ।
  • থার্মোমিটারঃএটি তাপমাত্রার বিভিন্ন মানের জন্য ভিন্নও ভিন্নও পাঠ দেয় ।
  • আইআর সেন্সরঃএমন কোন বস্তু, যার উপর আলো
    প্রতিফলিত হয় এমন কোন বস্তু বিভিন্ন দূরত্বে অবস্থানের জন্য এটি ভিন্নও ভিন্নও পাঠ
    দেয় ।

এরূপ ট্রান্সডিউসারের মাধ্যমে আমরা যে তড়িৎ
সিগনাল পাই তা একটি অ্যানালগ সিগনাল । কারণ বাহ্যিক চলকের প্রতিটি পরিবর্তনের জন্য
এটি নিরবচ্ছিন্ন পাঠ দিয়েছে । তবে ট্রান্সডিউসারের পাঠ বাহ্যিক চলকের মানের
সমানুপাতিক ।
আর এভাবেই ট্রান্সডিউসার গুলো
বাইরের জগতের সাথে ইলেকট্রনিক্সের জগতের মিল বন্ধন তৈরি করে দেয় ।

 

জিওন আহমেদ

Leave a Reply