প্রথমে আমাদেরকে দুইটা ধাতব প্লেট নিতে হবে
। এরপর প্লেটদ্বয়ের মধ্যে একটির উপর পটাশিয়াম, রুবেডিয়াম কিংবা সিজিয়াম এদের মধ্যে
যেকোন একটি ধাতুকে রঙের মত করে প্রলেপ করে দিতে হবে । শুধুমাত্র এই তিনটি ধাতুই
কেন ? অন্যরা কেন নয় ? মৌলিক পদার্থগুলোর মধ্যে পটাশিয়াম, রুবেডিয়াম এবং সিজিয়ামের
পরমাণুর সর্বশেষ শক্তিস্তরের ইলেকট্রনগুলো এদের নিউক্লিয়াসের সাথে দূর্বলভাবে আটকে
থাকে । ফলে বাহির থেকে সামান্য পরিমান শক্তি পেলেও ইলেকট্রনগুলো পরমাণুর
নিউক্লিয়াসের বন্ধন থেকে বেড়িয়ে আসতে পারে । আমরা এই ধাতুগুলোর সেই দূর্বলতাকে
কাজে লাগিয়েই বিদ্যুৎ তৈরি করব ।

প্রথমে উপরে প্রস্তুত করে নেয়া দুইটি
প্লেটকে মাঝে সামান্য ফাঁকা রেখে মুখোমুখি নিয়ে আসব । এবার এদেরকে চিত্রের মত করে
উভয়ের সাথে দুইটি তার যুক্ত করে তার সাথে একটি ডিসি বাল্বের সংযোগ দিতে হবে । এখন
যদি আমরা এই পাত দুটিকে এমনভাবে খোলা স্থানে রাখি, যাতে ধাতুর প্রলেপ যুক্ত প্লেটটিতে
সূর্য্যের আলো এসে পড়ে । তবে লক্ষ করলে দেখা
যাবে বাল্বটি জ্বলে উঠছে । পাত দুটিকে ছায়াতে রাখলে বাল্বটি নিভে যাবে । আবার সূর্য্যের
আলোতে রেখে দিলে বাল্বটি পুনরায় জ্বলবে ।

এবার ব্যাখ্যা করা যাক, এমনটা কেন হচ্ছে ? ম্যাক্স
প্ল্যাঙ্ক বলেছিলেন- যখন কোন উৎস থেকে আলো বেড়িয়ে আসে তখন তা শক্তির প্যাকেট আকারে
আসে । অর্থাৎ আলো আসা মানে শক্তি আসা যার ক্ষুদ্রতম মান এক প্যাকেট শক্তির সমান ।
একইভাবে যখন সূর্য্য থেকে আলো আসে, তখন আমরা ধরে নিতে পারি, প্যাকেট প্যাকেট আকারে
শক্তি আসছে । এখন যদি পটাশিয়াম, রুবেডিয়াম কিংবা সিজিয়ামের প্রলেপ দেয়া প্লেটটিকে আমরা
সূর্য্যের আলোর উপস্থিতিতে রাখি, তবে সূর্য্যের আলোর শক্তি থেকে ধাতুগুলোর সর্বশেষ
শক্তিস্তরের ইলেকট্রনগুলো শক্তি শোষণ করে এবং নিউক্লিয়াসের আকর্ষন থেকে নিজেদেরকে
মুক্ত করে । ইলেকট্রনগুলো যদি এমন পরিমান শক্তি পায় যা তাদের নিউক্লিয়াসের আকর্ষন থেকে
মুক্ত হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তির চেয়ে বেশি, তবে সেই অতিরিক্ত শক্তি নিয়ে ইলেকট্রনগুলো
ধাতব প্রলেপ দেয়া প্লেট থেকে লাফ দিয়ে সামনে উপস্থিত থাকা প্রলেপ বিহীন প্লেটে এসে
পড়ে । এভাবে একের পর এক ইলেকট্রন যখন প্রলেপ বিহীন প্লেটে এসে পড়ে, তখন এই প্লেটে
ইলেকট্রনের আধিক্য দেখা যায় । ইলেকট্রনের এই আধিক্য কমাতে ইলেকট্রনগুলো তার বেঁয়ে
এগিয়ে আসতে থাকে এবং বাল্বের মধ্যদিয়ে চলে যায় । ধাতব প্রলেপ দেয়া প্লেট থেকে ক্রমাগত
ইলেকট্রন চলে যাওয়ায় এই প্লেটে ইলেকট্রনের ঘাটতি দেখা যায় । ফলে সেখানে ধনাত্মক
চার্জ উৎপন্ন হয় যা আসলে ইলেকট্রনের ঘাটতি । ফলে তার এবং বাল্ব দিয়ে বেড়িয়ে আসা
ইলেকট্রনগুলো পূনরায় ধাতব প্রলেপ দেয়া ধনাত্মক চার্জযুক্ত প্লেটে ফিরে আসে । এরপর তারা
পূনরায় শুরু থেকে গঠিত চক্রে অংশ নেয় । এর এভাবেই ধাতব প্লেট থেকে তারের মধ্যে দিয়ে
ইলেকট্রনের গতি থেকে আমরা চলমান তড়িৎ পাই । কারণ আমরা জানি, যেকোন তারের মধ্যদিয়ে
চার্জের গতি মানেই কারেন্ট ।

আর এভাবেই সূর্য্যের আলোর শক্তিকে ব্যবহার
করে আমরা সোলার সেলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ তৈরি করে থাকি । যা ব্যাখ্যা করার জন্য আলবার্ট
আইনস্টাইন নোবেল পুরস্কার পান ।

জিওন আহমেদ

Leave a Reply