এর
আগের একটা আর্টিকেলে কৃষ্ণ গহ্বরের ঘটনা দিগন্ত নিয়ে লিখেছিলাম । দেখিয়েছিলাম, ঘটনা
দিগন্তে আলোক রশ্মিগুলো ঘটনা দিগন্ত থেকে বেড়িয়ে আসতে পারেনা । যাকে চোর পুলিশের
সাথে তুলনা করেছিলাম । যেখানে চোর পুলিশের থেকে সবসময় একধাপ এগিয়ে থাকে, কিন্তু
পুলিশ থেকে পালিয়ে যেতে পারেনা । এখন প্রশ্ন হল, যদি এই আলোর রশ্মিগুলো উল্টো পথে
ঘটনা দিগন্ত থেকে বেড়িয়ে যেতে বা পালিয়ে যেতে চায় তবে কি ঘটবে ? উত্তরটা আমাদের
চোর পুলিশের উদাহরণেই আছে । চোর যেকোন পথেই পালিয়ে যেতে যেমন পুলিশের হাতে ধরা
পড়বে, তেমনি ঘটনা দিগন্ত থেকে যখন কোন আলোক রশ্মি বেড়িয়ে যেতে উদ্যত হবে, তখন সেটি
কৃষ্ণ গহ্বরের কাছে ধরা পড়বে এবং কৃষ্ণ গহ্বর কতৃক শোষিত হবে । অর্থাৎ কৃষ্ণ গহ্বর
তাকে গিলে খাবে ।

এখন
দুইটা কৃষ্ণ গহ্বর যদি একে অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে একে অপরের সাথে লেগে যায়
। তাহলে কি ঘটবে ? দুইটা কৃষ্ণ গহ্বর যখন একে অপরের সাথে সংঘর্ষ ঘটিয়ে একে অপরের
সাথে মিলিত হবে তখন মিলিত কৃষ্ণ গহ্বরের ঘটনা দিগন্তের ক্ষেত্রফল এদের আলাদা আলাদা
ঘটনা দিগন্তের ক্ষেত্রফলের তুলনায় কিছুটা বেশি হবে ।

এনট্রপি
শব্দটা আমাদের সকলের কাছেই কম বেশি পরিচিত । সোজা কথায় এনট্রপি হল- একটি ঘটনার মোট
বজ্র বা উপজাত । আমরা যেকোন তাপগতীয় প্রক্রিয়া ঘটাই না কেন, সেখান থেকে কিছু
পরিমাণ শক্তির উপজাত আমাদের পরিপার্শে মিশে যায় । যাকে আমরা এনট্রপি বলি । আর তাপগতিবিদ্যার
দ্বিতীয় সূত্রে দেখানো হয়েছিল, আমাদের পরিপার্শের এনট্রপি প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে ।

কৃষ্ণ
গহ্বরের মতই যখন দুইটা ঘটনা একসাথে মিলিত হবে, তখন এদের সম্মিলিত ঘটনার এনট্রপি
হবে এদের আলাদা আলাদা এনট্রপির যোগফলের সমান । কিন্তু আমরা একটি কৃষ্ণ গহ্বরের
ভিতর মোট এনট্রপি কিংবা এনট্রপির পরিবর্তন পরিমাপ করতে পারিনা । যদি কোন পর্যবেক্ষক
একটি কৃষ্ণ গহ্বরের পাশে দাঁড়িয়ে তার এনট্রপি কিংবা এনট্রপির পরিবর্তন পরিমাপ করতে
পারত, তবে অনেক ভাল হত । তবে একটি কৃষ্ণ গহ্বরের এনট্রপি কিংবা এনট্রপির পরিবর্তন
জানা আমাদের জন্য খুব জরুরী ।


বিষয়ে স্টিফেন হকিং আবিস্কার করেছিলেন, কৃষ্ণ গহ্বরের ভিতর কোন বস্তু পড়লে এর ঘটনাদিগন্তের আয়তন বাড়ে । তার এই আবিষ্কারের পরপরই প্রিন্সটনের এক গবেষনা শিক্ষার্থী
জ্যাকব বেকেস্টাইন প্রস্তাব করেন, কৃষ্ণ গহ্বরের ঘটনা দিগন্তের আয়তন এর এনট্রপির
পরিমাপক । অর্থাৎ একটি কৃষ্ণ গহ্বরের ভিতর কোন বস্তু পড়লে এর ঘটনা দিগন্তের আয়তন
যে কিছুটা বাড়ে, তার কারণ এর ভিতর এনট্রপির পরিমাণ বৃদ্ধি ।

কিন্তু
যদি জ্যাকব বেকেস্টাইনের এই প্রস্তাব সঠিক হয়, তবে তার আরও কিছু ঘটনা ঘটা প্রয়োজন
। তা হল, কোন একটি কৃষ্ণ গহ্বরের এনট্রপি কিংবা এনট্রপির পরিবর্তন থাকলে তার
তাপমাত্রা থাকা উচিত । আবার কোন বস্তুর তাপমাত্রা অশুন্য না হয়ে কিছুটা হলেও
থাকলে, সেটি নির্দিষ্ট হারে বিকিরণ নিঃসৃত করবে । যা একটি কৃষ্ণ গহ্বরের পক্ষে
অসম্ভব । তাই আপাত দৃষ্টিতে বেকেস্টাইনের এই প্রস্তাব তাপগতিবিদ্যার দ্বিতীয়
সূত্রকে রক্ষা করে বলে মনে হলেও, এতে কিছুটা ত্রুটি রয়ে গেছে । মিল থাকলেও একটি
কৃষ্ণ গহ্বরেরঘটনা দিগন্তের আয়তনের সাথে এর এনট্রপির সম্পর্ক সম্ভব নয় । যা ১৯৭২
সালে স্টিফেন হকিং, ব্র্যানডন কার্টার, জিম বার্ডিনের একটা গবেষনা পত্রে দেখিয়েছিলেন

জিওন আহমেদ

Leave a Reply