শহরে একটা আবাসিক এলাকা স্বাভাবিক অবস্থায় কেমন থাকে ? সেখানে যতজন লোকের ধারণক্ষমতা আছে, আসলে কি ততজন লোক সেখানে থাকে ? নাকি তার বেশি থাকে ? না, স্বাভাবিক অবস্থায় সেই আবাসিক এলাকায় যতজন লোক বাস করতে পারে, তার চেয়ে কম লোক সেখানে বাস করে । কারণ হয়তো মানব প্রকৃতি কখনও শতভাগ পূর্ণতা পছন্দ করেনা । অর্থাৎ সেই আবাসিক এলাকায় যতজন লোকের আবাসস্থল করা সম্ভব, সেখানে তার চেয়ে কম লোক বাস করে । রসায়নে সম্পৃক্ত শব্দটার সাথে আমরা অনেকেই পরিচিত । সেটাকে যদি এই উদাহরণের সাথে জুড়ে দেই, তাহলে সংজ্ঞাটা খুব সহজেই বুঝাতে পারবো ।

আবাসিক এলাকাটিতে যতজন লোকের আবাসস্থল করা সম্ভব, যদি সেখানে ঠিক ততজন লোক বাস করে তবে আমরা সেই এলাকাটিকে সম্পৃক্ত বলতে পারি । আসলে সম্পৃক্ত কথাটির অর্থ হল- যতজনের বা যতগুলো বস্তুর ধারণক্ষমতা আছে, ততগুলো বস্তু উপস্থিত থাকা । যেমন আপনার পাকস্থলী এই মুহুর্তে যতটুকু খাবার ধারণ করতে পারে, আপনি যদি সেই পরিমাণ খাবার খান তবে বলতে পারি, আপনি খাবার দিয়ে সম্পৃক্ত । আর না খেলে অসম্পৃক্ত । 

কথা বলব পরিবেশের জলীয়বাষ্প নিয়ে । পরিবেশের তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে এর জলীয়বাষ্প ধারণক্ষমতা বাড়তেই থাকে । তাই তাপমাত্রা যতবেশি বৃদ্ধি পায়, ততবেশি পানি বাষ্পীভূত হতে থাকে । এদিক থেকে যেকোন একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় পরিবেশের একটি জলীয়বাষ্প ধারণক্ষমতা রয়েছে । কিন্তু ধারণক্ষমতার সমান জলীয়বাষ্প কখনও পরিবেশে উপস্থিত থাকেনা । কিছুটা কম থাকে । অর্থাৎ এই মূহুর্তে আপনার রুমের জলীয়বাষ্প ধারণক্ষমতা যদি ৫ কেজি হয়, তবে আপনার রুমে ৫ কেজি জলীয়বাষ্প উপস্থিত নেই । বরং তার চেয়ে কিছুটা কম আছে । হতে পারে সেটা ৪ কেজি । অর্থাৎ আপনার রুমটি জলীয়বাষ্প দিয়ে সম্পৃক্ত নয় । তাহলে কোন উপায়ে সেটাকে কি সম্পৃক্ত করা সম্ভব ? হ্যাঁ, সম্ভব ।

আগেই বলেছি, জলীয়বাস্প ধারণক্ষমতার সুইচটা হল- তাপমাত্রা । আপনার আপনার রুমের তাপমাত্রা যত বাড়াতে থাকবেন, আপনার রুপের জলীয়বাষ্প ধারণক্ষমতা তত বাড়তে থাকবে । আবার আপনি আপনার রুমের তাপমাত্রা যত কমাতে থাকবেন, আপনার রুপের জলীয়বাষ্প ধারণক্ষমতা তত কমতে থাকবে । তাহলে আপনি যদি আপনার রুমের তাপমাত্রা ধীরে ধীরে কমাতে থাকেন, তবে সেখানকার জলীয়বাষ্প ধারণক্ষমতা ধীরে ধীরে কমতে থাকবে এবং সেটা এক সময় ৫ কেজি থেকে নেমে ৪ কেজিতে চলে আসবে । ধারণক্ষমতা ৪ কেজিতে নামার সাথে সাথে তাপমাত্রা কমানো বন্ধ করে দিন । তাহলে এই মূহুর্তে আপনার রুমের জলীয়বাষ্প ধারণক্ষমতা ৪ কেজি, আর আপনার রুমে ৪ কেজি জলীয়বাষ্পই উপস্থিত ছিল । তাহলে এখন আমরা আপনার রুমটিকে জলীয়বাষ্পে সম্পৃক্ত বলতে পারি । তাপমাত্রা কমাতে কমাতে যে তাপমাত্রায় এসে আপনার রুমটা তার ভিতরে উপস্থিত জলীয়বাস্পটুকু (৪ কেজি) দিয়েই সম্পৃক্ত হয়ে গেল, সেই তাপমাত্রাকেই আসলে শিশিরাংক বলা হয় । শুনতে শিশিরের মত শোনালেও শিশিরাংক আসলে একটি তাপমাত্রার নাম । তবে তাপমাত্রা কমানোর সময় অবশ্যই আপনার রুমটিকে পুরোপুরি বন্ধ করা নিতে হবে । কারণ ধারণক্ষমতা কমানোর বা তাপমাত্রা কমানোর সময় আপনার রুমের জলীয়বাষ্প বাইরে চলে যেতে পারে । তাতে আপনি কখনও সম্পৃক্ত অবস্থা বা শিশিরাংক পাবেন না ।

একটা উদাহরণ দেয়া যেতে পারে । ধরে নিচ্ছি আপনার রুমের এই মূহুর্তে তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড । এই তাপমাত্রায় আপনার রুমের জলীয়বাষ্প ধারণক্ষমতা ৫ কেজি । কিন্তু আপনার রুমে জলীয়বাষ্প রয়েছে ৪ কেজি । এখন যদি আপনি রুমের দরজা জানালা বন্ধ করে এর তাপমাত্রা ধীরে ধীরে কমাতে থাকেন, তবে এর জলীয়বাষ্প ধারণক্ষমতা কমতে থাকবে । মনে করি, তাপমাত্রা কমিয়ে ২০ ডিগ্রিতে আনায় ধারণক্ষমতা ৪ কেজি হল । এতে আপনার রুমের ধারণ ক্ষমতা এবং উপস্থিত জলীয়বাষ্প সমান হয়ে গেল । তাহলে আপনার রুমটি এখন জলীয়বাষ্প দ্বারা সম্পৃক্ত । তাই আমরা বলতে পারি, আপনার রুমের শিশিরাংক ২০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড । আপনি যদি আপনার রুমের তাপমাত্রা এর চেয়েও কমিয়ে ফেলেন তবে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত জলীয়বাস্প কুয়াশার ন্যায় জমতে শুরু করবে ।

মনে রাখবেন, সম্পৃক্ত করার আগে অর্থাৎ স্বাভাবিক অবস্থায় আপনার রুমের জলীয়বাস্পের চাপ যত ছিল, সম্পৃক্ত করার পর অর্থাৎ শিশিরাংকেও আপনার রুমের জলীয়বাস্পের চাপ তত হবে । কারণ এতে অণুর সংখ্যার তথা জলীয়বাস্পের পরিমানের কোন পরিবর্তন ঘটেনি ।

This Post Has One Comment

  1. আব্দুল্লাহ আল ফাহিম শাহরিয়ার

    অসাধারণ ব্যাখ্যা। এমন সুন্দরভাবে বোঝানোর জন্য ধন্যবাদ। 🤓🤓

Leave a Reply