অনেকেই
হয়তো জেনে থাকবেন, একটা চুম্বককে আর একটা চুম্বকই শুধুমাত্র প্রভাবিত করতে পারে । সেটা
হতে পারে আকর্ষণ কিংবা বিকর্ষণ । অনেকেই হয়তো আমার এই কথার সাথে সম্মত হবেন না ।
বলবেন- একটা লোহা তো একটা চুম্বককে প্রভাবিত করতে পারে । কিন্তু লোহা কিন্তু সরাসরি
চুম্বককে প্রভাবিক করতে পারেনা । একটা লোহাকে যখন একটা চুম্বকের চুম্বক ক্ষেত্রের
মধ্যে আনা হয়, তখন সেই চুম্বক ক্ষেত্রে এসে লোহাটি নিজেও কিছুটা চুম্বকত্ব লাভ করে
এবং চুম্বক যে মেরুর কাছে লোহার যে অংশটি থাকে, সেই অংশটি চুম্বকের সেই মেরুর বিপরীত
মেরু হিসেবে আচরণ করে । ফলে চুম্বক কতৃক লোহা আকর্ষিত হয় ।

দুইটা
প্রমাণ দেখানো যেতে পারে । যথাঃ-

  1. আপনি
    যদি একটা দন্ড চুম্বককে মুক্তভাবে ঝুলিয়ে দেন, সেটা পৃথিবীর উত্তর দক্ষিণ মেরু
    বরাবর অবস্থান করে ।
  2. আপনি
    যদি এক খন্ড লোহাকে দীর্ঘদিন মাটিতে পুতে রাখেন, দেখবেন সেই লোহাটি কিছুটা চুম্বকে
    পরিণত হয়েছে ।

আগেই
বলেছি, একটা চুম্বককে শুধুমাত্র একটা চুম্বকই প্রভাবিক করতে পারে । তাহলে চুম্বকের
এই পরিবর্তন কিংবা আচরণ কোথা থেকে আসলো ? কোন চুম্বক ঝুলন্ত চুম্বককে উত্তর দক্ষিণ
বরাবর থাকতে বাধ্য করল ? কোন চুম্বক লোহাকে চুম্বকে পরিণত করল ? উত্তরটা কিছুটা
সরল । সেটা হল- পৃথিবী । পৃথিবী অবশ্যই বিশাল একটি চুম্বক ক্ষেত্র । যা আর একটা
চুম্বককে প্রভাবিত করছে । যাকে আমরা বলি, ভূ-চুম্বকত্ব ।

আমাদের
এই পৃথিবী নিজে বিশাল একটা চুম্বক ক্ষেত্র । যার উত্তর মেরু উত্তর দিকে । আর দক্ষিণ
মেরু দক্ষিণ দিকে । তাই আমরা যখন একটা চুম্বককে মুক্তভাবে ঝুলিয়ে এই, সেটার উত্তর
মেরু পৃথিবীর দক্ষিণ দিকে আর দক্ষিণ মেরু পৃথিবীর উত্তর দিক বরাবর অবস্থান করে । আবার
কোন ধাতুকে এই বিশাল চুম্বক ক্ষেত্রের সংস্পর্শে নিয়ে আসলে সেই ধাতুটি চুম্বকে পরিণত
হয় ।

ভূ-চুম্বকের
দিক কিন্তু পুরোপুরি ভৌগলিক উত্তর দক্ষিণ বরাবর নয় । এখানে কিছুটা বিচ্যুতি রয়েছে
। এই ভূ-চুম্বকের তিনটি উপাদান থাকে । যথাঃ-

  • বিচ্যুতি

ঝুলন্ত দন্ড চুম্বক ভৌগলিক অক্ষের সাথে আনুভূমিকভাবে যে কোণ উৎপন্ন করে, তাই যেকোন
স্থানে দন্ড চুম্বকের বিচ্যুতি কোণ ।  

  • বিনতি

ঝুলন্ত
দন্ড চুম্বক ভৌগলিক অক্ষের সাথে উলম্বভাবে যে কোণ উৎপন্ন করে, তাই যেকোন স্থানে
দন্ড চুম্বকের বিনতি কোণ ।  

  • চুম্বকত্বের
    আনুভূমিক উপাংশ

যেহেতু ভূ-চুম্বকের দিক সোজা ভৌগলিক অক্ষ বরাবর নয়, তাই ভূ-চুম্বকের
আনুভূমিক বরাবর আমরা যে উপাংশ পাই, তাই এর আনুভূমিক উপাংশ ।  

পৃথিবীর
যেকোন স্থানে ভূ-চুম্বকত্বের এই তিনটি উপাদান অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন
করে । এর মাধ্যমে যেকোন স্থানের ভূ-চুম্বকত্বের সকল উপাত্ত জানা যায় ।

জিওন আহমেদ

Leave a Reply