উচ্চ মাধ্যমিক
থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত যেকোন বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী এটা সূত্র
অবশ্যই দেখে থাকবেন । তা হল-
 l×p
= h । এটি প্রতিপাদনে খুব একটা বেশি সময় দিতে কিংবা মাথা ঘামাতে হয়
না । অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে, এতে কি এমন আছে যার জন্য তাকে নোবেল পুরস্কার দেয়া
হয়েছিল ? আজকে আমি সেটা নিয়েই লেখার চেষ্টা করব ।

আমরা
সকলেই জানি যে, পদার্থবিজ্ঞান যাত্রা শুরু করেছিল ১৬০০ সালের দিকে বিখ্যাত
জ্যোতির্বিদ গ্যালিলিও এবং নিউটনের হাত ধরে । গ্যালিলিও এর নাম আসলেও এই
পদার্থবিজ্ঞান ছিল, নিউটনের সূত্রগুলো নিয়েই । এই পদার্থবিজ্ঞানে নিউটনের
সূত্রগুলোর বিশ্লেষণ এবং বাস্তব জীবনের কিছু প্রয়োগ দেখানো হত । তবে এই নিউটনের
সূত্রগুলোর কিছু মূল ভিত্তি ছিল । যা হল-

  • বস্তুর
    ভর যেকোন পরিস্থিতিতে একটি ধ্রুবক মান ।
  • সময়
    তার নিজের গতিতে এগিয়ে চলে ।
  • বস্তুর
    অবস্থান সকল পর্যবেক্ষকের জন্যই একই হবে ।

কিন্তু
বিংশ শতাব্দীতে এসে আলবার্ট আইনস্টাইন সাধারন বিশেষ আপেক্ষিক
তত্ত্বের মাধ্যমে তার এই মূল ভিত্তিগুলোকে বাস্তবিক এবং তাত্ত্বিকভাবে ভূল
প্রমাণিত করলেন । যার ফলে আমরা নিউটনিয়ান পদার্থবিজ্ঞানকে বাতিল করে আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানকে
গ্রহণ করলাম । নিউটনিয়ান পদার্থবিজ্ঞান যে পুরোপুরি বাতিল করা হয়েছিল, তা কিন্তু
নয় । আইনস্টাইন দেখিয়েছিলেন, বস্তুর প্রকৃত বা পরম অবস্থান সাপেক্ষে আমরা যদি
চিন্তা করি তাহলে নিউটনের ভিত্তিগুলো বর্জনীয় হলেও, যেকোন বাস্তবিক প্রসঙ্গ কাঠামো
সাপেক্ষে চিন্তা করলে নিউটনের সূত্রগুলো কার্যকর । উদাহরণ সরূপ- আমরা যদি এই
মহাবিশ্বে আমাদের অবস্থানকে চিন্তা করি, তাহলে নিউটনের সূত্র কার্যকর হয়না ।
কিন্তু আমরা যদি আমাদের পাশে থাকা টেবিলের সাপেক্ষে আমাদের অবস্থানকে চিন্তা করি,
তবে নিউটনের সূত্র কার্যকর হয় । আইনস্টাইন মূলত আমাদেরকে পারস্পরিক চিন্তাকে বাদ
দিয়ে পরম চিন্তাকে জাগ্রত করেছিলেন ।

কিন্তু
ততক্ষন পর্যন্ত বস্তু বা কণা এবং তরঙ্গকে সম্পূর্ণ আলাদাভাবে চিন্তা করা হত । আপনি
যদি আপনার পাশের বন্ধুর গতিবিধি নিয়ে আলোচনা করেন, তবে সেখানে বস্তুর সূত্র সমূহ
ব্যবহার করা হবে । আর যদি আলো নিয়ে আলোচনা করেন, তবে তরঙ্গের সূত্রগুলো ব্যবহার
করা হবে । কারণ আমাদের বাস্তবিক জীবনে কণা এবং তরঙ্গের আচরণ সম্পূর্ণ ভিন্ন ।
কিন্তু প্রথম বাকিবল পরিক্ষা থেকে আমরা জানতে পারি, আমাদের মধ্যেও তরঙ্গ ধর্ম দেখা
যেতে পারে । এই পরিক্ষা কিছুটা এমন, আমরা যদি একইসাথে দুইটি কাজে সমানভাবে
মনোনিবেশ করি তবে আমাদের আচরণেও তরঙ্গ ধর্ম দেখা যায় ।

উপরের
সূত্রের মাধ্যমে ডি-ব্রগলি এটা দেখিয়েছিলেন, মহাবিশ্বের সকল বস্তুতে দুইটি ধর্ম
আছে । এদের একটি হল- কণা ধর্ম এবং অন্যটি তরঙ্গ ধর্ম । তবে বস্তু সাপেক্ষে এই ধর্ম
দুইটির মান কম বা বেশি হতে পারে ।

  • বস্তুর
    ভর যত বেশি হবে, তার কণা ধর্ম তত বেশি হবে কিন্তু তরঙ্গ ধর্মের মান তত কম হবে ।
  • বস্তুর
    ভর যত কম হবে, তার তরঙ্গ ধর্ম তত বেশি হবে কিন্তু কণা ধর্মের মান তত কম হবে ।  

কিন্তু
কখনই কোন ধর্মের মান শুন্য হবেনা । বরং একটির মান ঠিক যতটা কমবে, অন্যটির মান ঠিক
গুণ বাড়বে । উল্লেখিত সূত্রে ডি-ব্রগলি এটাই দেখিয়েছিলেন, বস্তুর তরঙ্গ ধর্ম(তরঙ্গ
দৈর্ঘ্য) এবং কণা ধর্মের(ভরবেগ) গুণফল সর্বদা একটি ধ্রুবক সংখ্যা হবে । যা ম্যাক্স
প্ল্যাঙ্কের ধ্রুবক হবে । এই সূত্র থেকে এটাও দেখা যায়, এদের কোনটির মান কখনও
শুন্য হতে পারেনা ।

আসলে
আমাদের এবং আমাদের চারপাশের সকল বস্তুর ভর অনেক বেশি হওয়ায় সেগুলোর কণা ধর্ম অনেক
বেশি এবং তরঙ্গ ধর্ম অনেক কম হয় । তাই আমাদের আচরণ এবং গতিবিধি নিউটনিয়ান
বলবিদ্যার মত হয় । তাই আমরা এক্ষেত্রে তরঙ্গ ধর্ম হিসাব করিনা । কিন্তু যেসকল
বস্তুর ভর অনেক অনেক কম তাদের ক্ষেত্রে তরঙ্গ ধর্ম অনেক বেশি হওয়ায় তাদের গতিবিধি
জানতে অবশ্যই আমাদের তরঙ্গ ধর্মকেও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে । এরকম বস্তু হল-
ইলেকট্রন । যার ভর অনেক কম হওয়ায় এতে কণা ধর্ম এবং তরঙ্গ ধর্ম উভয়কেই হিসেবের
অন্তর্ভুক্ত করতে হয় । ইলেকট্রন আবিস্কারের পর থেকে এর গতিবিধি এবং দশা নিয়ে অনেকে
অনেকভাবে একে বিশ্লেষণ করতে চেষ্টা করেছেন । কিন্তু কেউ ইলেকট্রনকে কণা এবং কেউ
তরঙ্গ হিসেবে ধরে নিয়েছিলেন । কিন্তু ইলেকট্রন নিয়ে সকল রহস্যের উন্মোচন হয়েছে,
যখন আমরা জানতে পেরেছি- এর মধ্যে একই সাথে কণা এবং তরঙ্গ উভয় ধর্মই রয়েছে । তাই
ইলেকট্রন নিয়ে চূড়ান্ত সার্থকতার ক্রেডিট আমরা ডি-ব্রগলিকেই দেই । ইলেকট্রনের এই
দ্বিত্ব আচরণ আবিস্কারের পরপরই শ্রোডিঞ্জার তাত্ত্বিকভাবে ইলেকট্রনের অবস্থান এবং
শক্তিকে সংজ্ঞায়িত করেন । যা পদার্থবিজ্ঞানে আমাদের অনেক বড় সফলতা ।

জিওন
আহমেদ

Leave a Reply