প্রথম বিজ্ঞান শব্দটা শোনার সাথে সাথে
আমাদেরকে যে শব্দটা শুনতে হয়, সেটা হল-পরমাণু । এরপর বেড়িয়ে আসে, পরমাণুর মধ্যকার
ইলেকট্রন, প্রোটন এবং নিউটনের কথা । পরমাণুর মধ্যকার অনেক রহস্যই জানতে পেরেছে
আধুনিক বিজ্ঞান । তবে বিজ্ঞান এবং এর তত্ত্বগুলো কিছুটা পরিবর্তনশীল । আজকে আমরা
যে তত্ত্বটাকে পুরোপুরি সত্য বলে মানছি, কাল হয়তো নতুন একটা তত্ত্ব তার সীমাবদ্ধতা
এনে দেবে । অথবা সেটা মিথ্যা প্রমাণও করতে পারে । এমনটাই হয়েছিল, পরমাণু এবং এর
অভ্যন্তরীণ গঠন ব্যাখ্যা করার ক্ষেত্রে । একের পর এক পরমাণু মডেল দিয়ে বিজ্ঞানীরা
পরমাণুকে ব্যাখ্যা করতে চেষ্টা করেছেন । পরবর্তিতে অপরজন এসে সেটার সীমাবদ্ধতা
দেখিয়ে নতুন মডেল দিয়েছেন ।

পরমাণু সম্পর্কে একদম শুরুতে যিনি ধারনা
দিয়েছেন, তিনি হলেন জন ডাল্টন । সাধারণ এক স্কুল শিক্ষক হয়ে তিনি বস্তু সমূহের
গঠনের কথা চিন্তা করেছেন । তিনি এভাবে চিন্তা করেন, বস্তু সমূহকে ক্ষুদ্র হতে
ক্ষুদ্রতর করে কাটতে থাকলে, এমন একটা সময় আসবে যখন একে আর কাটা যাবেনা । যাকে তিনি
নাম দিলেন পদার্থের গঠনকারী কণা হিসেবে । ডেমোক্রিটাস যাকে নাম দেন- পরমাণু বা
অ্যাটম ।

এবার শুরু হল নতুন অনুসন্ধানের । এই পরমাণুর
ভিতর কি আছে ? চলে এলেন জে জে থমসন । পরমাণুর মডেল দিলেন ।

থমসনের পরমাণু মডেল

থমসন বললেন, পরমাণু দেখতে একটা তরমুজের মত ।
পুরো তরমুজটা একটা পরমাণু । যার মধ্যে আছে কিছু ইলেকট্রন, যাকে তরমুজের বীজগুলোর
সাথে তুলনা করা যায় । যারা সেই পরমাণুর তার মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, ঠিক যেমন তরমুজের
বীজগুলো তরমুজের মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে । আর হাইড্রোজেন পরমাণু দেখতে একটা
কিচমিচের মত । যার মধ্যে একটা মাত্র বীজ থাকে । যাকে হাইড্রোজেন পরমাণুর একমাত্র ইলেকট্রন
বিবেচনা করা যায় । তার এসব ব্যাখ্যার জন্য থমসনের এই মডেলকে বলা হয়- তরমুজ বা
কিচমিচ মডেল ।

থমসনের মডেল সবাইকে খুশি করতে পারলেন না ।
অনেকগুলো ত্রুটি রয়েই গেল । এবার চলেন রাদারফোর্ড । দুজন সহকারী- গাইগার এবং মার্সদেনকে
সাথে নিয়ে একটা পরীক্ষণ চালালেন । দেখতে চেষ্টা করলেন, এই পরমাণুর মধ্যে কি আছে ।
যার জন্য তিনি একটা পরমাণুর মধ্যদিয়ে আলফা রশ্মি চালালেন এবং তিনি চাঞ্চল্যকর তথ্যই
খুজে পেলেন ।

রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেল

  1. সকল পরমাণু অতিশয় ক্ষুদ্র
    গোলাকৃতি কণা । এর দুটি অংশ রয়েছে । একটি হল কেন্দ্র বা নিউক্লিয়াস এবং অন্যটি নিউক্লিয়াসের
    বাইরের অঞ্চল ।
  2. পরমাণুর কেন্দ্রস্থলে
    একটি ধনাত্মক চার্জবিশিষ্ট ভারী বস্তু বিদ্যমান । যাকে পরমাণুর কেন্দ্র বা নিউক্লিয়াস
    বলে । পরমাণুর মোট আয়তনের তুলনায় এই নিউক্লিয়াসের আয়তন অতি নগণ্য ।
  3. পরমাণুর প্রায় সবটুকু
    ভরই এর নিউক্লিয়াসে পুঞ্জীভূত অবস্থায় আছে । তাই মোটামুটিভাবে নিউক্লিয়াসের ভরই
     পারমাণবিক ভর বা পরমাণুটির সামগ্রিক ভর ।
  4. সৌরমন্ডলে সূর্যের চারদিকে
    আবর্তনীয় গ্রহসমুহের মত পরমাণুতে নিউক্লিয়াসের চতুর্দিকে কক্ষপথে কতগুলো ঋণাত্মক
    কণিকা সর্বদা ঘূর্ণায়মান থাকে । এদের
     ইলেকট্রন বলে ।
  5. পরমাণু বিদ্যুৎ নিরপেক্ষ
    । তাই এর কেন্দ্রে ধনাত্মক চার্জের সংখ্যা এবং নিউক্লিয়াসের চারদিকে পরিভ্রমণরত ঋণাত্মক
    চার্জযুক্ত ইলেকট্রনের সমান ।
  6. নিউক্লিয়াস ও ইলেকট্রনের
    মধ্যে বিরাজিত কেন্দ্রমুখী স্থির বিদ্যুৎ আকর্ষণ বল ও ঘূর্ণনের ফলে সৃষ্ট কেন্দ্রবিমুখী
    বলের মান সমান ও বিপরীতমুখী ।

রাদারফোর্ড পরমাণুর অনেক আচরণ এবং গঠন প্রায় পুরোপুরি ব্যাখ্যা করতে সক্ষম হয়েছিলেন
। কিন্তু তাতেও কিছু সীমাবদ্ধতা বের করলেন নিলস বোর । রাদারফোর্ডের সমচেয়ে বড় ত্রুটি
ছিল, তার মডেল অনুসারে পরমাণুর স্থায়িত্ব দেয়া সম্ভব হয়না । কিন্তু নিলস বোর তার মডেলের
মাধ্যমে পরমাণুকে স্থায়িত্ব দিতে সক্ষম হলেন ।

বোরের পরমাণু মডেল

নিলস বোর তার মডেল কুলম্বের স্থির তড়িৎ বলের সূত্র এনে পরমাণুকে স্থায়িত্ব
দিতে সক্ষম হলেন । পাশাপাশি তিনি পরমাণুর বর্নালী সম্পর্কে ধারনা দিলেন । এছাড়া
ইলেকট্রনগুলোর নিউক্লিয়াসের চারদিকে ঘুর্ণনের জন্য বৃত্তাকার রাস্তা বা শক্তিস্তরেরও
ধারনা দিয়েল । তিনি দেখালেন, পরমাণুর নিউক্লিয়াসের চারদিকে ঘুর্ণায়মান ইলেকট্রনগুলো
শক্তি শোষণ করে এক শক্তিস্তর থেকে তার উপরের শক্তিস্তরে যেতে পারে এবং শক্তি বিকিরণ
করে আবার নিচের শক্তিস্তরে আসতে পারে । ইলেকট্রনটি এই কাজের সক্ষম হলেও, এই শোষণ
এবং বিকিরণে একটি করে বর্নালী বা দাগের সৃষ্টি হয় । যাদেরকে শোষণ এবং বিকিরণ বর্নালী
বলা হয় ।

পরমাণুকে স্থায়িত্ব দিতে পারলেও যে বর্নালীর কথা তিনি তুলে ধরলেন, সেটাকে তিনি
পুরোপুরি ব্যাখ্যা করতে সক্ষম হলেন না । কারণ ইলেকট্রন শক্তি শোষণ বা বিকিরণ করে
এক শক্তিস্তর থেকে অন্য শক্তিস্তরে গেলে একটি করে বর্নালী তৈরি হওয়ার কথা থাকলেও
সেখানে অনেকগুলো বর্ণালী দেখা যায় । যার সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা নিলস বোর দিতে সক্ষম হননি
। তাই এবার প্রয়োজন হল- কোয়ান্টাম মডেলের ।

কোয়ান্টাম মডেল

এবার এই মডেলটি পরমাণুকে প্রায় পুরোপুরি ব্যাখ্যা করতে শুরু করলেন । কোয়ান্টাম
মডেলটি আবার দুটি প্রধান সূত্রের উপর প্রতিষ্ঠিত ।

  1. কণা তরঙ্গ দ্বিত্বতা । 
  2. হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তা নীতি ।

পরমাণুর মডেলটি সহ এখন প্রকৃতির সকল ঘটনায় পুঙ্খানুপুঙ্খ রুপে ব্যাখ্যা করতে
পারলেও, এই মডেল এখনও সহজলভ্যতা পায়নি । কারণ কম বেশি সবাই কোয়ান্টাম মডেলকে এড়িয়ে
যেতে চান । হয়তো এটাকে কিছুটা দুর্বোধ্য মনে করেন ।

জিওন আহমেদ

Leave a Reply