বিজ্ঞানে নোবেল পেয়েছেন অনেকেই। তবে তাদের মধ্যে সাত পরিবারের কথা আলাদা করে বলতে হয়। দুই প্রজন্ম ধরে নোবেল পুরস্কার ঘরে তুলেছে এই পরিবারগুলো। গত এক শতাব্দীতে সাত পরিবার এই সফলতা দেখিয়েছে । আসুন সেগুলো সম্পর্কে জেনে নেই । আশ্চর্যজনক বিষয় হল, এসব নোবেলজয়ী পরিবারের মধ্যে বেশিরভাগই পদার্থবিদ ছিলেন । আর তারা পদার্থবিজ্ঞানকে সম্মানের শীর্ষে নিয়ে এসেছেন ।

নোবেলজয়ী বোর পরিবার

(নীলস বোর, অউ নীলস বোর)

বাবা নীলস বোর এবং ছেলে অউ নীলস বোর

রাদার ফোর্ডের পরমাণুর গঠন সম্পর্কে ব্যাখ্যার পর নীলস হেনরিক ডেভিড বোর পদার্থের আনবিক গঠন এবং কোয়ান্টাম তত্ত্বের জন্য বিখ্যাত। বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদার্থবিদদের মধ্যে একজন তিনি । বোরের পারমাণবিক মডেল আমাদেরকে প্রথম পরমাণুর স্থিতিশীল মডেলের ধারণা দিয়েছিল। পরমাণুর জগতে গাণিতিক হিসাব নিকাশ তার হাত ধরেই আসতে শুরু করে৷ ১৯২২ সালে পরমাণুর গঠন ও পারমাণবিক বিকিরণ আবিষ্কারের জন্য পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পান এই বিজ্ঞানী।

নীলস বোর ১৯১২ সালে মারগ্রেথ নোরল্যান্ড নামক এক মেয়েকে বিয়ে করেন । এই দম্পতির একজন সন্তান ছিল অউ নীলস বোর । তিনিও একজন গুরুত্বপূর্ণ পদার্থবিজ্ঞানী হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন । এরপর তার ছেলে ১৯৭৫ সালে অউ নীলস বোর পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পান। পারমাণবিক নিউক্লিয়াসে যৌথ গতি ও কণার গতির মধ্যকার সম্পর্ক আবিষ্কারের জন্য বেন মোটেলসন এবং জেমস রেইনওয়াটারের সঙ্গে যৌথভাবে এই পুরস্কার পান তিনি।

কুরি পরিবার

(পিয়ের কুরি, মেরি কুরি ও ইরিন কুরি)

নোবেল জয়ী বাবা-মা পিয়ের কুরি এবং মেরি কুরির সাথে নোবেল মেয়ে জয়ী ইরিন কুরি

কুরি পরিবারকে বলা যায় খাঁটি গবেষক পরিবার। তার ওপর মেরি কুরি একমাত্র নারী, যিনি ১৯০৩ সালে পদার্থবিজ্ঞানে এবং ১৯১১ সালে রসায়নে—দুবার নোবেল পেয়েছেন। ১৯০৩ সালে তেজস্ক্রিয়তা আবিষ্কারের জন্য স্বামী-স্ত্রী পিয়ের কুরি, মেরি কুরি ও বিজ্ঞানী হেনরি বেকরেলকে যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়। ততদিনে দ্বিতীয় নোবেল পাওয়ার উপযুক্ত কাজ করে ফেলেছেন এই স্বামী-স্ত্রী। রেডিয়াম এবং পোলোনিয়াম আবিষ্কার করেন তাঁরা। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে ১৯০৬ সালে এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান পিয়ের কুরি। ফলে ১৯১১ সালে রেডিয়াম ও পোলোনিয়াম আবিষ্কারের জন্য রসায়নে মেরি কুরি এককভাবে নোবেল পান । পরের প্রজন্মে বাজিমাত করেন এই দম্পতির মেয়ে ইরিন জুলিয়ো কুরি। বিখ্যাত ফরাসী পদার্থবিদ ফ্রেদেরিক জোলিও-ক্যুরির সাথে বিয়ে হয় ইরিন জুলিয়ো কুরির সাথে । তেজস্ক্রিয় পরমাণু কৃত্রিমভাবে বানানোর উপায় আবিষ্কারের জন্য ১৯৩৫ সালে এই দম্পতি যৌথভাবে রসায়নশাস্ত্রে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন । ক্যুরি দম্পতির এ সাফল্যে অদ্যাবধি সফলতম নোবেল বিজয়ী এক দীর্ঘ্য পরিবারে আসীন রয়েছে।

ব্র্যাগ পরিবার

(হেনরি ব্র্যাগ ও লরেন্স ব্র্যাগ)

বাবা হেনরি ব্র্যাগ ও ছেলে লরেন্স ব্র্যাগ

ব্রাগস পরিবার বাবা-ছেলে নোবেল পেয়েছেন একসঙ্গে, একই বিষয়ে! এরকম ঘটনা ইতিহাসে দ্বিতীয়টি নেই। বাবা উইলিয়াম হেনরি ব্র্যাগ ও ছেলে উইলিয়াম লরেন্স ব্র্যাগ এক্স-রে ব্যবহার করে কেলাসের গঠন বিশ্লেষণে অবদানের জন্য ১৯১৫ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পান । সে সময় হেনরি ব্র্যাগের বয়স ছিল ৫৩ বছর, আর ছেলে লরেন্সের বয়স ছিল মাত্র ২৫ বছর। নোবেল পাওয়ার জন্য লরেন্সের বয়স কি অনেক কম বলে মনে হচ্ছে? আসলে পদার্থবিজ্ঞানে সবচেয়ে কম বয়সে নোবেলপ্রাপ্ত বিজ্ঞানীও তিনিই।

কর্নবার্গ পরিবার

(আর্থার কর্নবার্গ ও রজার ডি. কর্নবার্গ)

বাবা আর্থার কর্নবার্গ ও ছেলে রজার ডি. কর্নবার্গ এর সাথে তাদের পরিবার

আর্থার কর্নবার্গ নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন ১৯৫৯ সালে চিকিৎসাবিজ্ঞান ও শারীরতত্ত্বে। ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক এসিড (ডিএনএ) সংশ্লেষণ প্রক্রিয়া আবিষ্কারের জন্য তাঁকে সেভেরো ওচোয়ার সঙ্গে যুগ্মভাবে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়। তাঁর ছেলে রজার ডেভিড কর্নবার্গ নোবেল পুরস্কার পান রসায়নে ২০০৬ সালে ইউক্যারিওটিক সেল বা সুকেন্দ্রিক কোষে যে ট্রান্সক্রিপশন প্রক্রিয়া হয়, তার জৈবভিত্তি নিয়ে গবেষণার জন্য।

ইউলার পরিবার

(হ্যান্স ভন ইউলার-শেলপিন ও উলফ ভন ইউলার)

বাবা হ্যান্স ভন ইউলার-শেলপিন ও ছেলে উলফ ভন ইউলার

হ্যান্স ভন ইউলার-শেলপিন নোবেল পেয়েছিলেন ১৯২৯ সালে রসায়নে। অ্যালকোহলের গাঁজন প্রক্রিয়ায় অবদানের জন্য তাঁকে আর্থার হার্ডেনের সঙ্গে যুগ্মভাবে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়। উলফ ভন ইউলারের বাবা হ্যান্স যেমন নোবেলজয়ী রসায়নবিদ, তেমনি মা অস্ট্রিড ক্লিভ ছিলেন উদ্ভিদবিজ্ঞানী ও ভূতত্ত্ববিদ। উলফ নিজের কাজের পথ হিসেবে বেছে নিয়েছেন শারীরতত্ত্ব ও ওষুধবিজ্ঞান—বলা চলে, বাবা-মা দুজনের কাজের মিলন ঘটেছে তাঁর কর্মে। ১৯৪৬ সালে নোরাপিনেফ্রিন নামের একটি হরমোনকে তিনি স্নায়ুতন্ত্রের নিউরোট্রান্সমিটার বা উদ্দীপনাবাহক হিসেবে শনাক্ত ও আলাদা করার ওপর একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন। ১৯৭০ সালে এ কাজসহ অন্যান্য কাজের জন্য তাঁকে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়। 

সিয়েবন পরিবার

(কার্ল ম্যান সিয়েবন ও কাই এম. সিয়েবন)

বাবা কার্ল ম্যান সিয়েবন ও ছেলে কাই ম্যান সিয়েবন

কার্ল ম্যান সিয়েবন ১৯২৪ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পান এক্স-রে বর্ণালিবিষয়ক গবেষণায় অবদানের জন্য। বাবার যোগ্য উত্তরসূরী ছেলে কাই ম্যান সিয়েবন উচ্চরেজুল্যুশনের ইলেকট্রন বর্ণালি প্রক্রিয়ার একজন পথিকৃৎ। এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ১৯৮১ সালে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয় তাঁকে। 

থমসন পরিবার

(জে জে থমসন ও জর্জ প্যাজে থমসন)

বাবা জে জে থমসন এবং ছেলে জর্জ প্যাজে থমসন

ব্রিটিশ পদার্থবিজ্ঞানী জে জে থমসন ইলেকট্রন আবিষ্কারক হিসেবে বেশি পরিচিত। কিন্তু তিনি ১৯০৬ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পান গ্যাসের তড়িৎ পরিবাহিতা আবিষ্কারের জন্য। বাবা যতটা পরিচিত, ছেলে জর্জ প্যাজে থমসন ততটা পরিচিত নন অনেকের কাছেই। কেলাসের মধ্য দিয়ে ইলেকট্রনের অপবর্তনের পরীক্ষামূলক প্রমাণের জন্য তাঁকে ১৯৩৭ সালে পদার্থবিজ্ঞানে ক্লিনটন ডেভিসনের সঙ্গে যুগ্মভাবে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়।

This Post Has 2 Comments

  1. নামহীন

    Greate information…. Love that❤️

  2. Jeion Ahmed

    অনেক ধন্যবাদ । পদার্থবিজ্ঞান ডট কমের সাথেই থাকুন ।

Leave a Reply