ইন্টারস্টেলার,
ইনসেপশন, দ্যা ডার্ক নাইট, ডানকির্ক, টেনেট ইত্যাদি মুভিগুলো দেখার পর যেকেউ এটা মেনে নিতে
বাধ্য হবে, সিনেমা জগতের আইনস্টাইন ছিলেন এই ক্রিস্টোফার নোলান
।  মুভিতে অসাধারণ কিছু শর্টই শুধু নয়, তার
মুভিগুলোতে তিনি বিজ্ঞানকে একটা করে নতুন প্রশ্ন ছুড়ে দেন । ইন্টারস্টেলার মুভিতে ব্ল্যাকহোলের
এত নিকট দিয়ে গমন, ইনসেপশন মুভিতে কল্পনার এক জগতের মধ্যে আর একটা কল্পনার জগত । এসব
দেখে যেকোন বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ একবার হলেও চিন্তায় পরে যাবে ।

সদ্য রিলিজ হওয়া
টেনেট মুভিতেও তিনি এমন প্রশ্নের উদয় ঘটিয়েছেন । যদিও এই মুভিতে অনেকগুলো প্রশ্নই তিনি
তুলেছেন, কিন্তু তার মধ্যে আমার কাছে যে প্রশ্নটি বেশি ভাবাচ্ছে, তা হল- এনট্রপিকে
ফরওয়ার্ড এবং রিভার্স ডিরেকশনে চালনা । এই মুভিতে বন্দুকের গুলি এবং বিস্ফোরণগুলোর
এনট্রপিকে ফরওয়ার্ড এবং রিভার্স দিকে চালনা করার কিছু দৃশ্য তুলে ধরা হয়েছে । যেখানে
টাইম ট্রাভেলের মত জটিলতাকে আমরা এখনও জয় করতে পারিনি, সেখানে ক্রিস্টোফার নোলান এনট্রপি
নিয়ে আবার এই নতুন প্রশ্ন জুড়ে দিলেন । টেনেট মুভিতে ইন্টারস্টেলার মুভির মত এখানেও
টাইম ট্রাভেল দেখানো হয়েছে, কিন্তু এখানে শুধু সেই টাইম ট্রাভেলেই এবার তিনি সীমাবদ্ধ
থাকেননি । বিষয়বস্তু একই হলেও ঠিক যেন নতুনত্ব নিয়েই আসতেই হবে । কেউ টাইম ট্রাভেল
করে অতিতে গেলে তার মাস্ক পড়ার বিষয়টা বড় কোন ইস্যু না হলেও, যৌক্তিক দৃষ্টিকোণ থেকে
এটি এই মুভিকে নির্দিধায় আকর্ষনীয় করে তুলেছে । অর্থাৎ যখন কোন
ব্যাক্তি বর্তমানে থাকে, তখন সে বেঁচে থাকার জন্য অক্সিজেন গ্রহণ করে এবং কার্বন
ডাই অক্সাইড ত্যাগ করে । তাই সে যদি কখনও অতিতে ফিরে যায়, সে অক্সিজেন পাবেনা ।
কারন সে তার জন্য রিজার্ভ করা অক্সিজেন আগেই শেষ করে এসেছে এবং তার বর্জ্র হিসেবে
কার্বন ডাই অক্সাইড ত্যাগ করে এসেছে । তাই যদি সে যদি পিছনে ফিরে যায়, তবে তাকে
কার্বন ডাই অক্সাইড গ্রহণ করতে হবে এবং অক্সিজেন ত্যাগ করতে হবে । যার জন্য তার হৃদপিণ্ডকে
উল্টা পাশে ক্রিয়া করতে হবে । যেহেতু তা সম্ভব নয়, তাই কেউ অতিতে ফিরে গেলে তার
নিজের জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেন নিয়ে যেতে হবে । আর পুরো মুভিতে যে বিষয়টা বেশি
ভাবায়, সত্যি কি ভবিষ্যতে এমন কোন জাতী আসতে পারে, যারা আমাদের এনট্রপির কারণে
ধ্বংস হবে বলে নিজেদের অস্তিত্বের সাথে আমাদের অস্তিত্বকে বিনষ্ট করে দিবে ? যদিও
কোন ব্যাক্তি বর্তমানে অবস্থান করে অন্য কারও অতিতে গুলি করার বা তাকে আক্রমণ করার
মত অসম্ভব কিছু দৃশ্য এই মুভিতে দেখা যায় । তবে ভিলেন স্যাতরের মত ক্যারেক্টার
আমাদের বর্তমানে রয়েছে । যে নিজে ক্যান্সারে মারা যাবে বলে, নিজের সাথে নিজের
বর্তমানের সবাইকে নিয়েই মরতে চায় ।

তাছাড়া
একই সাথে একদল অতিতে ফিরে গিয়ে এবং আর এক দল ভবিষ্যতে গিয়ে যুদ্ধের এক অসম্ভব
দৃশ্যকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে । যা হয়তো কোন মুভি মেকার আজ পর্যন্ত করতে পারেনি ।

সব
মিলিয়ে একজন প্রোটাগনিস্ট এবং একজন পাস্ট ট্রাভেলারের জীবনের অসাধারণ সমন্বয় এই
মুভিটি ।

জিওন আহমেদ

Leave a Reply