আমি আমার অনেকগুলো আর্টিকেলেই এই এম
তত্ত্বের কথা প্রায়ই বলে থাকি । অনেকেই এই এম তত্ত্ব নিয়ে একটু দ্বিধায় পরে যায় । এবার
আমি এম তত্ত্বটি নিয়ে একটু বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করব । প্রায়ই আমাদের মনে প্রশ্ন
জাগে, বিজ্ঞানের চূড়ান্ত সফলতা থেকে বিজ্ঞান এখন কতটা পিছিয়ে । যদিও এমন প্রশ্নের
উত্তর এমন হওয়া উচিত, বিজ্ঞানে চূড়ান্ত সফলতা বলতে কিছু নাই । আমাদের যেমন চাহিদার
শেষ নেই, তেমনি বিজ্ঞানেরও ইচ্ছের শেষ নেই । কিন্তু এই মূহুর্তে আমি এই উত্তরটি
দেব না ।

আসলে বিজ্ঞানের চূড়ান্ত সফলতা বলতে আমরা
আপাতভাবে এতটুকু বুঝে থাকি, বিজ্ঞান কবে আমাদের অস্তিত্ব, অস্তিত্বের কারণ, মহাবিশ্বের
সকল ঘটনা এবং বস্তুকে তাত্ত্বিকভাবে ব্যাখা করতে পারবে । সহজ ভাষায় অনেকটা এমন,
আমাদেরকে আর আলাদা করে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, ম্যাথ কিংবা জীববিজ্ঞান পড়তে হবেনা ।
সকল বিষয়ের, সকল প্রশ্নের উত্তর জানার সূত্র আমাদের হাতে থাকবে । এমনকি টাইম
ট্রাভেল, স্রষ্টা কিংবা মৃত্যুর মত কঠিন প্রশ্নের উত্তরও আমাদের জানা থাকবে । বিজ্ঞানের
চূড়ান্ত সফলতার প্রশ্নটি আসলে  হল,
বিজ্ঞানের এই সফলতা থেকে আমরা কতটা দূরে ?

এই প্রশ্নের উত্তর একেবারে না দিয়ে বলে
রাখি, বিজ্ঞানীরা এই প্রশ্নের উত্তর দেয়ার কিছু মানদণ্ড দ্বার করান । তা অনেকটা
এমন- আমরা এখন পর্যন্ত মৌলিক বল ৪টি বলে জানি । এরা হল- মহাকর্ষ বল, তড়িৎ চৌম্বকীয়
বল, সবল নিউক্লিয় বল এবং দূর্বল নিউক্লিয় বল । অর্থাৎ প্রকৃতিতে যত বল আছে, সকল বল
এই চারটি বল থেকে আসে । আর এই চারটি বল নিজেদের জায়গা থেকে আলাদা আলাদা । পদার্থবিদরা
মনে করেন, প্রকৃতিতে এই ৪ ধরনের বল থাকতে পারেনা । অবশ্যই এই চারটি বল, একটি মাত্র
বল থেকে আসে । কিন্তু সেটি আমরা এখনও আবিস্কার করতে পারিনি । তবে এটি নিয়ে
বিজ্ঞানী আবদুস সালাম, ওয়াইন বার্গ এবং গ্ল্যাসো সহ আরও অনেকেই কাজ করে যাচ্ছেন ।
তাদের এই নীতিকে আমরা বলের একিভূতকরণ নীতি বলে চিনি । যদিও তারা এ নিয়ে উল্লেখযোগ্য
সফলতা পেয়েছেন, কিন্তু চূড়ান্ত সফলতা থেকে আমরা এখনও অনেক পিছিয়ে ।

শুধু বল নয়, আমাদের ভৌত জগতে যত ঘটনা সংগঠিত
হয়, তাদের জন্য আমরা ভিন্ন ভিন্ন সূত্র ব্যবহার করে থাকি । কিন্তু একদল বিজ্ঞানী
মনে করেন, আমাদের ভৌত জগতের ঘটনাগুলোকে আলাদা আলাদা সূত্র ব্যবহার না করে একটি
মাত্র সূত্র দিয়ে ব্যাখা করা যাবে । যাকে আমরা এম তত্ত্ব বলছি । এই এম তত্ত্বের এক
একটি বিশেষ ক্ষেত্র এক একটি বিশেষ ঘটনাকে ব্যাখা করবে । কিন্তু মূল সূত্র একটিই
হবে । এমনকি এটি একই সাথে আমাদের অতিত, বর্তমান এবং ভবিষ্যতের সকল ঘটনাকে ব্যাখা
করতে পারবে ।

এখানে অনেকেই প্রশ্ন করে থাকেন, তাহলে কি এম
তত্ত্বে এই উত্তরটাও পাওয়া যাবে, বিগ ব্যাং বা মহাবিস্ফোরণের আগে কি ছিল ? আসলে
আমাদের কাছে এখন যতগুলো সূত্র আছে সেগুলো সবগুলোই বিগ ব্যাং এর মূহুর্তেই নাকোচ
হয়ে যায় । যেমনঃ হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তা নীতি থেকে আমরা জানি, একই সাথে আমরা একটি
কণার অবস্থান এবং ভরবেগ নিশ্চিতভাবে জানতে পারবোনা । অর্থাৎ কণার অবস্থান আমাদের
কাছে যত নিশ্চিত হতে থাকবে, কণার ভরবেগ তত অনিশ্চিত হতে থাকবে । এটি বিজ্ঞানে একটি
প্রতিষ্ঠিত সূত্র । যা কোয়ান্টাম তত্ত্বের গোড়াপত্তনের একটা বড় অংশ । বিগ ব্যাং এর
মূহুর্তে যদি আমরা সময় সহ সবকিছুকে শুন্য ধরি, তবে সেই মূহুর্তে একইসাথে বস্তুর
অবস্থান এবং ভরবেগ উভয়ই শুন্য হয়ে যায় । শুন্য হলেও এটি অবস্থান এবং ভরবেগের দুইটি
নিশ্চিত মান । অর্থাৎ এখানে অনিশ্চয়তা সূত্র নাকোচ হয়ে যায় । তাই আমরা এখনও এটা
নিশ্চিত না যে, এম তত্ত্ব মহাবিশ্বের সূচনা সম্পর্কে আমাদের কি বার্তা দেবে ।

ভৌত জগতের সকল ঘটনাই ব্যাখ্যা করতে সক্ষম এই
সূত্রটির কিছু বৈশিষ্ট্য এখন পর্যন্ত আমরা কল্পনা করে থাকি । তার মধ্যে অন্যতম
একটি হল- এটি সবচেয়ে সরল এবং বোধগম্য তত্ত্ব হবে । যেখানে যেকেউ সহজেই এটি বুঝতে
পারবে এবং প্রয়োগ করতে পারবে ।

কোয়ান্টাম তত্ত্বের নাম আমাদের কারোই অজানা
নয় । বলা হয়ে থাকে, আজ পর্যন্ত যে ঘটনাতেই আমরা কোয়ান্টাম তত্ত্ব প্রয়োগ করেছি,
তার ব্যাখা আমরা কোয়ান্টাম তত্ত্ব থেকে পেয়েছি । তাই অনেকেই মনে করেন, এম তত্ত্ব
কোয়ান্টাম তত্ত্বের মধ্যে নিহিত রয়েছে । কিন্তু আগেই বলেছি, এম তত্ত্ব হবে অত্যন্ত
সরল এবং বোধগম্য তত্ত্ব । কোয়ান্টাম তত্ত্ব সকল ঘটনাই ব্যাখা করতে পারলেও, এখন
পর্যন্ত একে কেউ সরল বলে স্বীকার করতে পারেনি । বলা হয়ে থাকে, যখন কেউ কোন
প্রশ্নের উত্তর দিতে সক্ষম হয়না, কিন্তু সে বুঝাতে চায়, সে এর উত্তর জানে, তখন সে
কোয়ান্টাম তত্ত্বের নাম বলে প্রশ্ন এড়িয়ে যায় । তাই কোয়ান্টাম তত্ত্বের মধ্যে এম
তত্ত্ব নিহিত, এমনটা মানতে বিজ্ঞানীরা এখনও নারাজ ।

প্রধানত নিজেদের অস্তিত্ব এবং কারণ সম্পর্কে
জানিনা বলে আমরা নির্বোধ প্রানী হিসেবে এখন পর্যন্ত পরিচিত । কিন্তু সরল এবং জটিল
যাই হোক না কেন, যেদিন আমরা এম তত্ত্ব জানতে পারবো, সেদিন হয়তো আমরা উন্নত এবং
বুদ্ধিমান প্রানী হিসেবে অন্য গ্রহের প্রানীর সাথে নিজেদের পরিচয় করতে পারবো ।

জিওন আহমেদ

Leave a Reply