সম্প্রতি হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তা নীতি এবং আমাদের ভবিষ্যদ্বাণী করা নিয়ে অনেক
কথাই লিখেছি । যেখানে দেখিয়েছি, কোয়ান্টাম তত্ত্ব বা হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তা নীতি
অনুসারে কণাগুলোর অবস্থান এবং ভরবেগের নিশ্চিত কোন মান আমাদের জানা থাকেনা । আর
যার জন্য আমরা কোন কণার ভবিষ্যদ্বাণী করতে অসামর্থ ছিলাম ।

এটা ছিল আমাদের জন্য সোজা পথ । কিন্তু কণাদের বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ জানা আমাদের
জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন ছিল । তাই সোজা পথে কাজ না হওয়ায়, পদার্থবিজ্ঞানকে বাঁকা
পথকে অনুসরণ করতে হয় । সেই পথটা হল- যখন আমরা কোন কিছু সম্পর্কে প্রকৃত সত্যটি
জানিনা, তখন তার সম্ভবনা নির্ণয় করে তা নিয়ে কাজ করা হয় । এতে চূড়ান্ত ফলাফলটিও
সম্ভবনা রূপেই পাওয়া যায় । কিন্তু তাতে আবার সমসম্ভব্য সবগুলো ঘটনার সম্ভবনার
গাণিতিক রূপটি সামনে নিয়ে আসতে পারলে, সত্যটি আরও স্পষ্টভাবে সামনে চলে আসে ।

পদার্থবিজ্ঞানে এই বাঁকা পথটির নাম হল- ওয়েভ ফাংশন বা তরঙ্গ ফাংশন ।
পদার্থবিদরা যখন দেখলেন, আমরা কোন কণার অবস্থান এবং ভরবেগ সম্পর্কে নিশ্চিত মান
জানিনা, তখন তারা বস্তুর অবস্থান এবং ভরবেগের প্রকৃত মানের একটা সম্ভবনার কথা
চিন্তা করলেন । কোন কণার অবস্থান এবং ভরবেগের প্রকৃত মানের এই সম্ভবনাটির নাম
তরঙ্গ ফাংশন । তরঙ্গ ফাংশন হল- স্থানের প্রতিটি বিন্দুতে একটি সংখ্যা । যা যেকোন
বিন্দুতে কণাটি পাওয়া যাবে কিনা তার সম্ভবনা প্রকাশ করে । আর একটি বিন্দু থেকে আর
একটি বিন্দুতে তরঙ্গ ফাংশন যে হারে পরিবর্তিত হয়, তা সম্ভব্য বিভিন্ন কণার ভরবেগ
কত হবে তা জানায় । তাই এক্ষেত্রে অবস্থানের অনিশ্চয়তার তুলনায় ভরবেগের অনিশ্চয়তা
অনেক কম হয় ।

একটি কণার বর্তমান সম্পর্কে যা কিছু জানা সম্ভব তাই আছে তরঙ্গ ফাংশনে । তাই ল্যাপ্লাসের
ধারণামতে আমাদের একটি কণার ভবিষ্যদ্বাণী করার স্বপ্ন একেবারে বৃথা যায়নি । অর্থাৎ
আমরা কণাদের কিংবা আমাদের অতিত এবং ভবিষ্যৎ জানার স্বপ্নকে আর ফেলে দিতে পারিনা । তাই
তরঙ্গ ফাংশন আমাদের কাছে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রাশি । বিজ্ঞানী শ্রোডিঙ্গার
এই ওয়েভ ফাংশনকে ব্যবহার করে একটি সমীকরণ দ্বার করান । যার সাহায্যে তিনি কোথায়
ইলেকট্রন থাকতে পারে এবং কোথায় পারেনা, তা নির্ণয় করেছিলেন । যা বাস্তবের সাথে
পুরোপুরি মিলে গিয়েছিল । বিংশ শতাব্দীতে এটাও আমাদের একটি অনেক বড় অর্জন ।

জিওন আহমেদ

Leave a Reply