কোয়ান্টাম
কম্পিউটারকে আমরা অনেকেই আমাদের সাধারণ কম্পিউটারগুলোর আপগ্রেড ভার্সন মনে করে
থাকি । কিন্তু মোমবাতি এবং ইলেকট্রিক লাইট উভয়ের কাজ আলো দেয়া হলেও, একটা মোমবাতি
যেমন একটা লাইট বাল্বের মত আলো দিতে পারে না, তেমনি ক্ল্যাসিক্যাল বা সাধারণ
কম্পিউটার থেকে কোয়ান্টাম কম্পিউটারের মধ্যে রয়েছে বিস্তর ব্যবধান । কোয়ান্টাম
কম্পিউটারের উচ্চ গতির কম্পিউটিং সক্ষমতার কারণে অনেক বড় বড় কোম্পানি বিপুল অর্থ
বিনিয়োগ করছে এই কম্পিউটারের জন্য । কিন্তু কি এমন বিশেষত্ব রয়েছে এই কম্পিউটারে ?

কোয়ান্টাম
কম্পিউটারকে বুঝতে হলে আমাদেরকে অনেক ক্ষুদ্র পরিসর তথা ইলেকট্রন, প্রোটন এবং
নিউট্রনের পরিসরে যেতে হবে । মাধ্যমিক থেকে আমরা জেনেছি, পরমাণুতে ইলেকট্রন সুনির্দিষ্ট
কিছু কক্ষপথে অবস্থান করে । কিন্তু আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানে পল ডিরাক ইলেকট্রনের
অবস্থান এবং আচরণ একটি অবিস্মরণীয় ধারণা দেন । তার উল্লেখিত সুপার পজিশন থিওরিতে তিনি
দেখান ইলেকট্রনরা আসলে সুনির্দিষ্ট কক্ষপথে থাকেনা । বরং এরা একটি নির্দিষ্ট একটি
পথে একই সাথে সবটুকু জায়গাতেই অবস্থান করে । বিষয়টা অনেকটা এমন, একটি ফাঁকা
রাস্তায় আপনাকে একা ছেড়ে দেয়া হল । এখন যেকেউ আপনাকে রাস্তায় খুজে পেতে চাইলে আপনার
সুনির্দিষ্ট একটি অবস্থান পাওয়ার কথা । কিন্তু আপনি যদি ইলেকট্রনের মত আচরণ করতে
পারেন, তবে একইসাথে রাস্তার সব স্থানেই আপনাকে খুজে পাওয়া যাবে । যাকে বলা হচ্ছে
ইলেকট্রনের সুপার পজিশন থিওরি । এখানে আপনি কোথাও নেই আবার সবখানেই আছেন ।

সাধারণ
কম্পিউটারগুলোতে সবকিছুই দুইটি বাইনারি ডিজিট 0 এবং 1 হিসেবেই কম্পিউটার কাজ করে থাকে
। অর্থাৎ হয় উপস্থিত, নয়তো অনুপস্থিত । কিন্তু ইলেকট্রনের এই সুপার পজিশন থিওরিকে
প্রয়োগ করে যদি কম্পিউটার তৈরি করা সম্ভব হয় তবে সেখানে একইসাথে তিনটি অবস্থানই
সম্ভব । 0, 1 কিংবা 0 ও 1 একই সাথে । ফলে সেই কম্পিউটারের কাজের গতি অনেক গুণ বেড়ে
যাবে । কিভাবে ? ধরুন আপনি ৫টি ভিন্ন ভিন্ন ফাইল রাখলেন । যাদের নাম বাইনারি ডিজিট
অনুসারে
0011, 0101, 1100, 1010 এবং 1111 । এখন আপনি যদি সার্চ করে সুনির্দিষ্ট
একটি ফাইল খুজে পেতে চান তবে প্রথমে 0 ডিজিট সার্চ করবে এবং পড়ে 1 ডিজিট সার্চ করবে
। এরপর এদের সার্চের সমন্বয়ে যার সাথে মিলে যাবে সেই ফাইলটি আপনার সামনে ওপেন হবে ।
কিন্তু যদি 0 এবং 1 আলাদা আলাদা ভাবে কাজ না করে একইসাথে কাজ করে, তবে একইসাথে সবগুলো
ফাইল স্ক্যান করে আপনাকে একেবারেই ফলাফল দেবে । তাতে করে কম্পিউটারের কাজের গতি অনেক
বেশি বেড়ে যাবে ।

তবে এখানে একটি
সমস্যা তৈরি হবে । সাধারণ কম্পিউটারে তাপমাত্রার পরিবর্তনের কারণে যেখানে ইলেকট্রনের
অবস্থানের উপর খুব বেশি প্রভাব ফেলত না, কোয়ান্টাম কম্পিউটারে সামান্য তাপমাত্রার পরিবর্তনের
কারণে ইলেকট্রনের গতিপথে অনেক পরিবর্তন আসবে । যেখান থেকে বড় ধরনের জটিলতা তৈরি হতে
পারে । তাই এখানে তাপমাত্রা একটি নির্দিষ্ট মানে স্থির রাখাটা অনেক বেশি জরুরী । তাই
পুরো ডিভাইসটিকে লিকুইড নাইট্রোজেনেও ডুবিয়ে রাখা হতে পারে । তাই সেক্ষেত্রে কাজের
গতি বাড়লেও ডিভাইসের আকার এবং দাম অনেক বেশি বেড়ে যাবে ।

জিওন আহমেদ

Leave a Reply