“ঈশ্বর
পাশা খেলেন না ।” এমনটাই উত্তর দিয়েছিলেন আলবার্ট আইনস্টাইন । যখন তাকে বলা হয়েছিল-
এই মহাবিশ্ব দৈবচয়নের মাধ্যমে বা ঐশ্বরিক শক্তির মাধ্যমে পরিচালিত হয় । কিন্তু
স্টিফেন হকিং এর মত অনেক পদার্থবিদ এই মহাবিশ্বে সংঘটিত সকল ঘটনা সাপেক্ষে এটা মনে
করেন, ঈশ্বর কিছুটা জুয়াড়ি ধরনের । অনেকটা ক্যাসিনো খেলার মত । যেখানে প্রতিবার
একটি করে ছক্কা চালানো বা ডাইস ছোড়া বা চাকা ঘোড়ানো হয় । প্রতিবার চাকা ঘোড়ানোর
সময় ক্যাসিনোর মালিক এবং খেলোয়াড় টাকা হারানোর ঝুকিতে থাকেন । কিন্তু অনেকবার চাকা
ঘুড়িয়ে খেলার চুড়ান্ত ফলাফল ঠিক এমন হয়, যেখানে লাভ ক্যাসিনো মালিকের দিকেই থাকে ।
ঈশ্বরের কার্যক্রমগুলোকে তারা এরকম মনে করেন । যদিও ক্যাসিনোতে অনেক কম সংখ্যকবার
চাকা ঘুড়িয়ে বেশি টাকা বাজি ধরে খেললে খেলোয়াড়ের লাভের সম্ভবনা বেশি থাকে ।

আমাদের
এই মহাবিশ্ব ১০ থেকে ১৫ বিলিয়ন বছর আগে একটি বিন্দুতে পুঞ্জিভূত অবস্থায় ছিল । যার
ঘনত্ব ছিল অসীম । এরপর মহাবিস্ফোরণের তথা বিগ ব্যাং এর মাধ্যমে এর সূচনা ঘটে ।
অনেকটা একটা বাদামের মত । সেটা উন্মোচিত হল এবং এই মহাবিশ্বের সৃষ্টি হল । আর সেই
বাদামের গায়ে আমাদের বাস্তব সময়ে সংঘটি সকল ঘটনা লিপিবদ্ধ ছিল । কাজেই হ্যামলেট
ঠিকই বলেছিলেন, “আমরা একটা বাদামের খোসার মধ্যে আটকে গেলেও নিজেদেরকে অসীম স্থানের
সম্রাট মনে করতেই পারি ।” আর আদিম মহাবিশ্বের কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশনের মাধ্যমে
আমাদের আবির্ভাব ঘটে । আবির্ভাবের পর থেকে বর্তমান পর্যন্ত আমাদের সকল কার্যক্রম
এবং ঘটনার পিছনে উপযুক্ত কারণ এবং ধারাবাহিকতা বজায় থাকে । কোন ঐশ্বরিক হস্তক্ষেপের
উপস্থিতি ছাড়ায় । ঠিক যেমন মহামারী করোনা ভাইরাস চারদিকে ছড়ায় পড়ল । কোন না
কোনভাবে এর আবির্ভাব এবং বিস্তার আমাদের দ্বারাই সংঘঠিত হয়েছে । কাজেই এটা মনে করা
যৌক্তিক হবে যে- ঈশ্বর কিছুটা জুয়াড়ি ধরনের ।

পাঁচটি
স্ট্রিং তত্ত্বকে সংগবদ্ধ করে বিজ্ঞানীরা সার্বজনিন মহাকর্ষীয় তত্ত্ব বা এম তত্ত্ব
প্রস্তাব করেছিলেন । যাতে এই মহাবিশ্বে সংগঠিত সকল ঘটনার গানিতিক উত্তর থাকবে । যার
অনেকগুলো বৈশিষ্ট্যের মধ্যে উল্লেকযোগ্য ছিল, এটি হলে সবচেয়ে সহজ, বোধগম্য এবং সরল
একটি তত্ত্ব । যদিও অনেকেই মনে করে থাকেন, এই এম তত্ত্ব কোয়ান্টাম তত্ত্বের ভিতর
নিহিত আছে । কিন্তু কোয়ান্টাম তত্ত্বকে এখন পর্যন্ত এতটা সহজ সরল মনে হয়নি বলে এটা
অনেকেই আবার মেনে নিতে চান না । এই সহজ এম তত্ত্বে দশটি মাত্রার কথা উল্লেখ আছে ।
যার মধ্যে তিনটি মাত্রায় আমরা বিচরণ করছি । সহজ ভাষায় এই তিনটি হল- অক্ষাংশ, দ্রাঘিমা
এবং সমূদ্রপৃষ্ট হতে উচ্চতা । চতুর্থটি হল সময় । যাকে নিউটন এবং আইনস্টাইন ভিন্ন
ভিন্ন ভাবে সংজ্ঞায়িত করেছিলেন । এম তত্ত্ব অনুসারে দশটি মাত্রার মধ্যে সময় মাত্রা
সহ আর বাকি ছয়টি মাত্রা কুঞ্জিভূত অবস্থায় রয়েছে । অনেকটা জুস খাওয়া স্ট্র এর মত ।
যেখানে নলটি প্রসস্থ থাকলেই উপরের দিকে একটা বড় অংশ একটি বিন্দুতে চুপসে থাকে ।
কুঞ্জিভুত থাকে বিধায় এগুলোতে আমাদের বিচরণ আমাদের কাছে এক মাত্রা(সময়) বা একটি
রেখার মত মনে হয় । তাতে হয়তো সময় মাত্রা নিয়ে জটিলতা বেড়ে গেল । তবে এই দশ মাত্রা
নিয়ে আমাদের এখনও অনেক প্রশ্ন রয়েছে । সম্ভব হলে এগুলো নিয়ে অন্য কোন একদিন লেখা যাবে
। এখন বরং এই মাত্রাগুলোতে আমাদের অবস্থান জানা যাক ।

আমি এর
আগে একটা আর্টিকেলে লিখেছিলাম, আমাদের অস্তিত্ব কি আসলেই আছে ? আমরা যা দেখছি, তার
অস্তিত্ব কি আসলেই আছে ? নাকি ঈশ্বর বা অন্য কেউ আমাদেরকে নিয়ে কেউ জুয়া খেলছে ?
অথবা আমাদের কোন বাস্তব অস্তিত্ব আছে ? কিন্তু এমনটা সম্ভব নয় । কারণ অ্যানথ্রোপিক
প্রিন্সিপাল বা মানুষসদৃশ তত্ত্বে বলা হয়েছে, এমনটা হলে বিজ্ঞানের বর্তমান
অগ্রগতিটুকুতেই আমরা আমাদের অস্তিত্বের বাইরে আরও কারও অস্তিত্ব খুজে পেতাম । যদিও
আপাতভাবে অ্যানথ্রোপিক প্রিন্সিপালকে অনেক বিজ্ঞানীই মেনে নিতে চান না । তারা মনে
করেন, অ্যানথ্রোপিক প্রিন্সিপাল কিছুটা অস্পষ্ট । তবুও এতটুকু বলা চলে, আমাদের
অস্তিত্বের বাইরে যদি এমন কেউ থাকে যাদের মাত্রা আমাদের থেকে উচ্চতর, তারা আমাদের
কাছে দৃষ্টিগোচর হবেনা । এটাই নিম্নমাত্রা হিসেবে আমাদের সীমাবদ্ধতা । এখন বিজ্ঞান
আমাদের কয় মাত্রায় জয়ী করবে সেটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন ।

জিওন
আহমেদ

Leave a Reply