উদ্ভিত বিজ্ঞানে আদর্শ কোষের সংজ্ঞা পড়তে
গিয়ে নিশ্চয়ই পরেছ, বাস্তব কোষের ক্ষেত্রে যেকোন কোষের মধ্যে সব উপাদান নাও থাকতে
পারে । অর্থাৎ এক বা একাধিক উপাদানের ঘাটতি থাকতে পারে । কিন্তু বইয়ে পড়ার সময় বা
কোষ সম্পর্কিত আলোচনার জন্য আমরা যে কোষ আঁকি, সে কোষে সকল উপাদান কোষটিতে
অন্তর্ভুক্ত করি । এই কোষটির বাস্তব অস্তিত্ব থাকতেও পারে আবার নাও থাকতে পারে,
তবে আলোচনাকে সরল করার জন্য এর প্রয়োজন আছে । এই ধরণের কোষকে বলা হয় আদর্শ কোষ । ঠিক
তেমনি বিশেষ কিছু শর্ত সাপেক্ষে গ্যাসকে আদর্শ গ্যাস বলা হয় ।

আদর্শ গ্যাস কি

যদিও বাস্তব গ্যাসের সাথে এর বৈসাদৃশ্য
রয়েছে । সেক্ষেত্রে আদর্শ গ্যাসকে এভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়, যে সকল গ্যাস আদর্শ
গ্যাসের মৌলিক স্বীকার্যগুলো মেনে চলে এবং অভ্যন্তরীণ শক্তি তাপমাত্রার উপর
নির্ভরশীল নয় তাদেরকে বলা হয় আদর্শ গ্যাস । অভ্যন্তরীণ শক্তির ব্যাপারটি তোমরা
ধীরে ধীরে বুঝতে পারবে । আপাতত জানা যাক, আদর্শ গ্যাসের মৌলিক স্বীকার্যগুলো কি ।

কোন স্থানে যেকোন গ্যাসের সামগ্রিক অবস্থা
বোঝার জন্য গ্যাস সমূহের কিছু চলরাশি জানা প্রয়োজন হয় । গ্যাসের এই চলরাশিগুলো হল-

  1. গ্যাসের ভর(m) বা ভর ও আণবিক ভরের(M) মাধ্যমে গ্যাসের মোল সংখ্যা(n)
  2. গ্যাসের চাপ(P)
  3. গ্যাসের আয়তন(V)
  4. গ্যাসের তাপমাত্রা(T)

এই চারটি রাশি জানা থাকলে ঐ স্থানের গ্যাস
সম্পর্কে সকল তথ্য জানা যায় । স্বীকার্যগুলো আলোচনার জন্য আমরা প্রথম চলরাশিটিকে
স্থির রাখবো । প্রথম চলরাশিটিকে ধ্রুবক ধরে বাকি তিনটি চলরাশি থেকে তিনটি সূত্র
আলোচনা করা হয় । যথা-
 

  1. বয়েলের সূত্র- তাপমাত্রাকে(T) স্থির রেখে, চাপ(P) ও আয়তনের(V)
    মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করে ।
     
  2. চার্লসের সূত্র- চাপকে(P) স্থির রেখে, আয়তন(V) ও তাপমাত্রার(T)
    মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করে ।
     
  3. গে-লুসাকের সূত্র- আয়তনকে(V) স্থির রেখে, চাপ(P) ও
    তাপমাত্রার(T) মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করে।

বয়েলের
সূত্র

রবার্ট বয়েলের সূত্রানুসারে নির্দিষ্ট ভরের
কোন গ্যাসের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত রাখলে বা তাপমাত্রা স্থির থাকলে, এর আয়তন চাপের
ব্যাস্তানুপাতিক
যেমনঃ একটি বেলুনে নির্দিষ্ট পরিমাণ গ্যাস নিয়ে তাপমাত্রার
পরিবর্তন না ঘটিয়ে মুখ বন্ধ করে দিয়ে এতে যত বেশি চাপ প্রয়োগ করা হবে, এর আয়তন ততই
ছোট হয়ে আসবে ।

চার্লসের সূত্র

জ্যাকুইস চার্লসের সূত্রানুসারেনির্দিষ্ট ভরের কোন গ্যাসের চাপ অপরিবর্তিত রাখলে বা চাপ
স্থির থাকলে, এর আয়তন 0 ডিগ্রি সেন্টিগ্রেট
 হতে প্রতি ডিগ্রি সেন্টিগ্রেট
তাপমাত্রা বৃদ্ধি বা হ্রাসের জন্য 
0 ডিগ্রি সেন্টিগ্রেট তাপমাত্রার আয়তনের 1/273 অংশ যথাক্রমে বৃদ্ধি বা হ্রাস পাবে ।

গে-লুসাকের সূত্র

গে-লুসাকের
সূত্রানুসারে
নির্দিষ্ট ভরের কোন গ্যাসের
আয়তন অপরিবর্তিত রাখলে বা আয়তন স্থির থাকলে, এর চাপ 
0 ডিগ্রি সেন্টিগ্রেট হতে প্রতি ডিগ্রি সেন্টিগ্রেট
তাপমাত্রা বৃদ্ধি বা হ্রাসের জন্য 
0 ডিগ্রি সেন্টিগ্রেট তাপমাত্রার চাপের 1/273 অংশ যথাক্রমে
বৃদ্ধি বা হ্রাস পাবে ।

বাস্তব জীবনকে ব্যাখা করার জন্য
আমরা সাধারণত থিওরি পড়ে থাকি । কিন্তু আমাদের তাত্ত্বিকভাবে আলোচিত গ্যাস তথা
আদর্শ গ্যাস এবং বাস্তব গ্যাসের মধ্যে অনেক ব্যবধান রয়েছে । আসলে আদর্শ গ্যাস বা
তাত্ত্বিক গ্যাস পড়ার সময় আমরা গ্যাসের অনেকগুলো বাস্তবিক আচরণকে অস্বীকার করে থাকি
। যেমন- বাস্তব গ্যাস অণুগুলোর আকার এবং আয়তন রয়েছে । যার জন্য গ্যাসকে ঠান্ডা
করলে আমরা তরল পাই । যার আকার এবং আয়তন উভয়ই রয়েছে । গ্যাসের আকার এবং আয়তন না
থাকলে একে তরল করা সম্ভবই হত না ।

আবার বাস্তব গ্যাস অণুগুলোর
মধ্যে পারস্পরিক আকর্ষণ বল রয়েছে । কিন্তু আদর্শ গ্যাসের ক্ষেত্রে এই আকর্ষণ বলকে
অস্বীকার করা হয় ।

প্রধানত এসব কারনেই, আদর্শ
গ্যাস এবং বাস্তব গ্যাসের মধ্যে অনেকটা ব্যবধান রয়েছে । তবে তা বাস্তবের সাথে
মিলানো যেতে পারে, যখন পাত্রে সামান্য পরিমান গ্যাস থাকে । সেক্ষেত্রে আমরা
গ্যাসের আয়তন টুকুকে বাদ দিয়েও কাংক্ষিত ফলাফল পাইতে পারি । আর এমনটা সম্ভব, যখন
পাত্রে উচ্চ তাপমাত্রা এবং নিম্নচাপ থাকবে । কারণ উচ্চ তাপমাত্রা এবং নিম্ন চাপে
পাত্রে খুব কম পরিমান গ্যাসের অণুই টিকে থাকতে পারে । 

জিওন আহমেদ

Leave a Reply