ধাতু হল বিদ্যুতের
পরিবাহী
সাধারণত ধাতব পদার্থের মধ্যে
বিদ্যুতের প্রবাহ বজায় রাখতে গেলে ক্রমাগত শক্তির যোগান দিয়ে যেতে হয় । অর্থাৎ এর
মধ্য দিয়ে ইলেকট্রনকে সঞ্চালন করার জন্য বিদ্যুৎবাহী তারের দুই প্রান্তে বিভব
প্রয়োগ করতে হয় । এক্ষেত্রে পরিবাহির এক পাশ থেকে ইলেকট্রনকে ধাক্কা দিয়ে অন্য পাশ
থেকে ইলেকট্রনকে আকর্ষণ করা হলে গতিপ্রাপ্ত ইলেক্ট্রনদের এই চলন থেকে বিদ্যুৎ
প্রবাহের সৃষ্টি হয় । বিদ্যুতের একটি নির্দিষ্ট প্রবাহ বজায় রাখতে হলে
ইলেক্ট্রনদের বাইরে থেকে কতখানি শক্তি যোগান দিয়ে যেতে হবে
,তা
নির্ভর করে ধাতুর রোধের ওপর । স্বল্প রোধের ধাতু দিয়ে তার বানালে এই শক্তি কম লাগে
,খরচও
বাঁচে

আগেই বলেছি, পরিবাহীদের রোধের অস্তিত্বের অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে যে, ধাবমান ইলেক্ট্রনদের নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষ ছাড়াও কঠিন পদার্থের ভেতর
সারিবদ্ধ আয়নদের সাথে ক্রমাগত ধাক্কা
যত
কমই হোক না কেন
,একটু
না একটু রোধ সবসময়ই উপস্থিত থাকবে
কারণ
পারিপার্শ্বিক অণু
পরমাণুর
বা আয়নের সাথে
,এমনকি
নিজেদের মধ্যেও
,ইলেক্ট্রনদের
কিছু না কিছু সংঘর্ষ ছাড়া ইলেকট্রন এক জায়গা থেকে অন্য যায়গায় যেতে পারেনা ।
তাপগতিবিদ্যার প্রথম ও দ্বিতীয় সূত্র এবং ধাতুর গঠনগত দিক থেকে এরকম ধারণা করা
ন্যায়সঙ্গত

কিন্তু গবেষণাগারের কিছু
পরীক্ষানিরীক্ষা প্রায়শই যেমন নতুন চমক সৃষ্টি করে
এক্ষেত্রেও
তাই হয়েছিল
১৯১১ সালে ঘটে গেল এক
যুগান্তকারী আবিষ্কার

নেদারল্যান্ডের লাইডেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ হাইক কামারলিং ওনেস গবেষণা
করছিলেন বিশেষ কিছু ধাতুর বিদ্যুৎ সঞ্চালন ক্ষমতা নিয়ে । তিনি লক্ষ্য করলেন
, খুব ঠাণ্ডা অবস্থায়(৪ কেলভিন বা -২৬৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায়) কঠিন
আকারের পারদের মধ্যে বিদ্যুৎ প্রবাহ চলে শূন্য রোধে । যেন পদার্থের ভেতর ইলেক্ট্রনের
সাথে পার্শ্ববর্তী অণু
, পরমাণু, আয়ন বা
ইলেকট্রন যা কিছু আছে তাদের বিন্দুমাত্র কোন ঘর্ষণ বা ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার
অস্তিত্ব নেই । কঠিন পারদ তখন পরিবাহী ছাড়িয়ে পরিণত হয়েছে বিদ্যুতের অতিপরিবাহীতে
ধাতুর
এই নতুন দশার নাম দেওয়া হল সুপারকন্ডাক্টার বা অতিপরিবাহী ।

ধাতুর মধ্যে ইলেকট্রনদের
এমন শুন্য বাঁধায় প্রবাহ কিভাবে সম্ভব হল
? প্রায়
চার দশক পর এর একটি সুষ্ঠু ব্যাখ্যা পাওয়া যায় ।

সুপারকন্ডাক্টিভিটী
ব্যাখ্যা করার জন্য ইলেক্ট্রনের ধর্ম নিয়ে যে ধারণা থাকা প্রয়োজন
,
সেগুলা তখনও অজানাই ছিল । সেগুলো এসেছে পরের যুগে
,কোয়ান্টাম তত্ত্ব
আবিষ্কার হওয়ার পরে

জিওন আহমেদ

Leave a Reply