আয়নীকরণ শক্তি কাকে বলে ?

গ্যাসীয় অবস্থায় কোনো মৌলের একটি পরমাণু থেকে একটি ইলেকট্রন অসীম দূরত্বে অপসারণ করে একটি ধনাত্মক আয়নে পরিণত করতে কিছু পরিমাণ শক্তির প্রয়োজন । কিন্তু যেহেতু একটি পরমাণুতে আমরা আলাদাভাবে এই কাজটি করতে পারবনা, তাই আমরা এক মোল পরমাণুর জন্য এই হিসাব করে থাকি । তাহলে- গ্যাসীয় অবস্থায় কোনো মৌলের এক মোল পরমাণু থেকে এক মোল ইলেকট্রন অসীম দূরত্বে অপসারণ করে এক মোল ধনাত্মক আয়নে পরিণত করতে যে পরিমাণ শক্তির প্রয়োজন তাকে ঔ মৌলের আয়নীকরণ শক্তি বলে ।

মৌল থেকে প্রথম এক মোল ইলেকট্রন নিয়ে এক মোল ধনাত্মক আয়নে পরিনত করতে যে পরিমাণ শক্তি প্রয়োজন তাকে প্রথম আয়নীকরণ শক্তি বলে । আবারও মৌল থেকে আরও এক মোল ইলেকট্রন নিয়ে দুই মোল ধনাত্মক আয়নে পরিনত করতে যে পরিমাণ শক্তি প্রয়োজন তাকে দ্বিতীয় আয়নীকরণ শক্তি বলে । একইভাবে মৌল থেকে আরও এক মোল ইলেকট্রন নিয়ে তিন মোল ধনাত্মক আয়নে পরিনত করতে যে পরিমাণ শক্তি প্রয়োজন তাকে তৃতীয় আয়নীকরণ শক্তি বলে । এভাবে চতুর্থ, পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম এবং অষ্টম আয়নীকরণ শক্তি পাওয়া যায় ।

প্রথম আয়নীকরণ শক্তির তুলনায় দ্বিতীয় আয়নীকরণ শক্তি বেশি কেন ? 

এক্ষেত্রে প্রথম মোল ইলেকট্রন গ্রহনের পর যেহেতু মৌলে ইলেকট্রনের ঘাটতি তৈরি হয়, তাই দ্বিতীয় মোল ইলেকট্রন নিতে প্রথম মোল ইলেকট্রনের তুলনায় বেশি পরিমাণ শক্তির প্রয়োজন হয় । একইভাবে দ্বিতীয় মোল ইলেকট্রন গ্রহনের পর যেহেতু মৌলে দুই মোল ইলেকট্রনের ঘাটতি তৈরি হয়, তাই তৃতীয় মোল ইলেকট্রন নিতে আরও বেশি শক্তির প্রয়োজন হয় । এজন্যই তৃতীয় আয়নীকরণ শক্তি দ্বিতীয় আয়নীকরণ শক্তির তুলনায় বেশি হয় । এভাবে ক্রমান্বয়ে একই মৌলের আয়নীকরণ শক্তি বাড়তে থাকে ।

আয়নীকরণ শক্তি
আয়নীকরণ শক্তির পর্যায়বৃত্ততা

আয়নীকরণ শক্তির পর্যায়বৃত্ততা

পর্যায় সারণিতে মৌলগুলো থেকে ইলেকট্রন নিতে কি পরিমাণ শক্তির প্রয়োজন হবে, অথবা তারা ইলেকট্রন ত্যাগ করতে কতটা আগ্রহী হবে তা নির্ভর করে তাদের থেকে নিকটস্থ নিষ্ক্রিয় গ্যাসীয় মৌলের পারমাণবিক সংখ্যাগত দূরত্বের উপর । কারণ প্রকৃতিতে যেমন সকল বস্তুই সর্বনিম্ন শক্তির অবস্থানে থাকতে যায়, তেমনি মৌলগুলোও নিকটস্থ নিষ্ক্রিয় গ্যাসের ইলেকট্রন বিন্যাস লাভ করতে চায় । যেমন সোডিয়াম চায়- একটি ইলেকট্রন ত্যাগ করে নিকটস্থ নিষ্ক্রিয় মৌল নিয়নের ইলেকট্রন বিন্যাস লাভ করতে, ক্লোরিন চায়- একটি ইলেকট্রন গ্রহণ করে নিকটস্থ নিষ্ক্রিয় মৌল আর্গনের ইলেকট্রন বিন্যাস লাভ করতে । কাজেই সোডিয়াম থেকে ইলেকট্রন নিতে কম শক্তির প্রয়োজন হবে, অপরদিকে ক্লোরিন থেকে ইলেকট্রন নিতে বেশি শক্তির প্রয়োজন হবে । আর এভাবেই পর্যায় সারণির একই পর্যায়ের বাম থেকে ডান দিকে গেলে আয়নীকরণ শক্তি বাড়তে থাকে ।

আবার একই গ্রুপের উপর থেকে নিচের দিকে আসতে থাকলে যেহেতু পরমাণুগুলোর আকার বাড়তে থাকে, তাই নিউক্লিয়াসের সাথে ইলেকট্রনের দূরত্ব বৃদ্ধির সাথে সাথে নিউক্লিয়াসের সাথে ইলেকট্রনের আকর্ষন বলও কমতে থাকে । পাশাপাশি পরমাণুর আকার বাড়তে থাকলে মধ্যবর্তী ইলেকট্রনের উচ্চ ঘনত্বের কারণে সর্বশেষ শক্তিস্তরের ইলেকট্রনগুলোকে নিউক্লিয়াস খুব বেশি আকর্ষন করতে পারেনা । ফলে সর্বশেষ শক্তিস্তর থেকে ইলেকট্রন নিতে কম শক্তির প্রয়োজন হয় । আর এভাবেই একই গ্রুপের উপর থেকে নিচের দিকে আসতে থাকলে মৌলগুলোর আয়নীকরণ শক্তি কমতে থাকে ।

Leave a Reply