তাপ

যা সিস্টেমের মধ্যে প্রবেশ করলে বা সিস্টেম হতে নির্গত হলে সিস্টেমের তাপগতীয় চলরাশির পরিবর্তন ঘটে তাকে তাপ বলে।

তাপমাত্রা

তাপমাত্রা হচ্ছে এমন একটি মৌলিক রাশি, যা দ্বারা কোনো বস্তু কতটুকু ঠান্ডা বা গরম তা জানা যায়।

সিস্টেম

পদার্থের একটি অংশ যাকে আলাদা করে নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়, আবার ভৌত অবস্থা বিশ্লেষণের ক্ষেত্রেও পদার্থের একটি অংশকে আলাদাভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়। পদার্থের এ অংশকে সিস্টেম বলে।

অভ্যন্তরীণ শক্তি বা অন্তঃস্থ শক্তি

বাহ্যিক গতিশক্তি ও বিভব শক্তি ব্যতিত কোনো সিস্টেমের শক্তির আরো একটি অংশ থাকে তাকে সিস্টেমের অভ্যন্তরীণ শক্তি বলে। অভ্যন্তরীণ শক্তি সিস্টেমের একটি ধর্ম। এটি শুধু সিস্টেমের তাপমাত্রার ওপর নির্ভরশীল।

তাপগতিবিদ্যার প্রথম সূত্র

যদি তাপকে সম্পূর্ণরূপে কাজে বা কাজকে সম্পূর্ণরূপে তাপে রূপান্তরিত করা যায়, তবে কাজ তাপের সমানুপাতিক।

তাপগতীয় প্রক্রিয়া

যে প্রক্রিয়ায় কোনো সিস্টেমের তাপগতীয় চলরাশি বা স্থানাকের পরিবর্তন হয় তাকে তাপগতীয় প্রক্রিয়া বলে।

সম-চাপ প্রক্রিয়া

যে প্রক্রিয়ায় কোনো গ্যাসীয় সিস্টেমের আয়তন ও তাপমাত্রার পরিবর্তন ঘটে কিন্তু চাপ অপরিবর্তিত থাকে তাকে সম-চাপ প্রক্রিয়া বলে।

সম-আয়তন প্রক্রিয়া

যে প্রক্রিয়ায় কোনো গ্যাসীয় সিস্টেমের চাপ ও তাপমাত্রার পরিবর্তন ঘটে কিন্তু আয়তন অপরিবর্তিত থাকে তাকে সম-আয়তন প্রক্রিয়া বলে।

সমোষ্ণ প্রক্রিয়া

যে প্রক্রিয়ায় কোনো গ্যাসীয় সিস্টেমের আয়তন ও চাপ পরিবর্তিত হয় কিন্তু তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকে তাকে সমোষ্ণ প্রক্রিয়া বলে।

বুদ্ধতাপীয় প্রক্রিয়া

যে প্রক্রিয়ায় কোনো গ্যাসীয় সিস্টেমের চাপ ও আয়তনের পরিবর্তন হয় কিন্তু পরিবেশের সাথে তাপের কোনো আদান-প্রদান হয় না তাকে বুদ্ধতাপীয় প্রক্রিয়া বলে।

মোলার তাপধারণ ক্ষমতা

এক মোল কোনো পদার্থের তাপমাত্রা এক কেলভিন বৃদ্ধি করতে প্রয়োজনীয় তাপকে ঐ পদার্থের মোলার তাপধারণ ক্ষমতা বলে।

স্থির চাপে গ্যাসের মোলার তাপধারণ ক্ষমতা, Cp

চাপ স্থির রেখে এক মোল গ্যাসের তাপমাত্রা এক কেলভিন বৃদ্ধি করতে যে তাপের প্রয়োজন হয় তাকে স্থির চাপে গ্যাসের মোলার তাপধারণ ক্ষমতা Cp বলে।

স্থির আয়তনে গ্যাসের মোলার তাপধারণ ক্ষমতা, Cv

আয়তন স্থির রেখে এক মোল গ্যাসের তাপমাত্রা এক কেলভিন বৃদ্ধি করতে যে তাপের প্রয়োজন হয় তাকে স্থির আয়তনে গ্যাসের মোলার তাপধারণ ক্ষমতা Cv বলে।

তাপগতিবিদ্যার দ্বিতীয় সূত্র: প্লাকের বিবৃতি

এমন একটি ইঞ্জিনের পরিকল্পনা করা কখনোই সম্ভব নয়, যার পূর্ণ আবর্তনে কেবল একটি তাপীয় উৎস হতে তাপ সংগৃহীত হবে এবং অন্যত্র কোনো পরিবর্তন ব্যতীত সংগৃষীত তাপের সবটুকুই কাজে রূপান্তরিত করা যাবে।

কেলভিনের বিবৃতি

কোনো বস্তু বা উৎস হতে তাপ সংগ্রহ করার ফলে যখন এর তাপমাত্রা পারিপার্শ্বিকের বস্তুগুলোর মধ্যে শীতলতম বস্তুর তাপমাত্রা অপেক্ষাও কম হয় তখন আর কোনো যান্ত্রিক ব্যবস্থার সাহায্যেই (ইঞ্জিন কর্তৃক) তা হতে তাপ সংগ্রহ করে কাজ করা সম্ভব নয়।

ক্লসিয়াসের বিবৃতি

কোনো যন্ত্রের পক্ষেই বাইরের জগতে পরিবর্তন সৃষ্টি ব্যতীত এর পূর্ণ আবর্তনে একটি তাপীয় উৎস হতে তাপ সংগ্রহ করে ঐ তাপ উষ্ণতর অন্য কোনো উৎসে চালনা করা সম্ভব নয়।

তাপ ইঞ্জিন

যে যন্ত্র তাপ শক্তিকে যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তরিত করতে পারে বা যে যন্ত্র তাপশক্তির বিনিময়ে কাজ করতে পারে তাকে তাপ ইঞ্জিন বলে।

ইঞ্জিনের দক্ষতা

সরবরাহকৃত তাপের যতটুকু অংশ কোনো ইঞ্জিন কাজে রূপান্তরিত করতে পারে তাকে ঐ ইঞ্জিনের দক্ষতা বলে।

প্রত্যাবর্তী প্রক্রিয়া

যেসব তাপগতীয় প্রক্রিয়া পরিবর্তনের পর বিপরীতমুখী হয়ে প্রত্যাবর্তন করতে পারে এবং সম্মুখবর্তী ও পশ্চাত্ত্বতী পরিবর্তনের ক্ষেত্রে প্রতিটি স্তরে তাপ, কাজ ও অন্তঃস্থ শক্তির পরিবর্তন সমান ও বিপরীত হয় সেই সব প্রক্রিয়াকে প্রত্যাবর্তী প্রক্রিয়া বলে।

অপ্রত্যাবর্তী প্রক্রিয়া

যেসব পরিবর্তন বিপরীতমুখী হয়ে প্রত্যাবর্তন করতে পারে না তাদেরকে অপ্রত্যাবর্তী প্রক্রিয়া বলে।

কার্নোর প্রত্যাবর্তী ইঞ্জিন

১৮৩২ সালে সাদী কার্নো সকল দোষ ত্রুটি মুক্ত একটি আদর্শ ইঞ্জিনের পরিকল্পনা করেন। ইঞ্জিনের আবর্তনের প্রতিটি পর্যায়ে কার্যকর পদার্থের পরিবর্তন প্রত্যাবর্তী প্রক্রিয়ায় ঘটে বলে একে কার্নোর প্রত্যাবর্তী ইঞ্জিন বলে।

এনট্রপি

রুদ্ধতাপীয় প্রক্রিয়ায় কোনো সিস্টেমের যে তাপগতীয় ধর্ম বা চলরাশি ধ্রুব থাকে তাকে এনট্রপি বলে। অথবা, তাপশক্তি কাজে রূপান্তরের অযোগ্যতাকেও এনট্রপি বলা যায়। অথবা, কোনো সিস্টেমের এনট্রপি এর বিশৃঙ্খলতার পরিমাপ।

হিমায়ক

হিমায়ক হলো একটি শীতলীকরণ যন্ত্র যাতে নিম্ন তাপমাত্রা সৃষ্টি করে খাদ্য বা অন্যান্য পচনশীল সামগ্রী সংরক্ষণ করা যায়।

এনট্রপি ও দ্বিতীয় সূত্র

প্রকৃতিতে সেই সব পরিবর্তন স্বতঃস্ফূর্তভাবে ঘটে যে প্রক্রিয়ায় এনট্রপির মোট পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।

তাপীয় মৃত্যু

এনট্রপি বৃদ্ধি পেতে পেতে এমন একদিন আসবে যখন এনট্রপির মান সর্বোচ্চে পৌঁছবে এবং সকল বস্তুর তাপমাত্রা সমান হবে। ফলে তাপ থাকবে ঠিকই, কিন্তু কাজ করার মতো কোনো শক্তিই আর পাওয়া যাবে না। এ অবস্থাকে বিশ্বের তাপীয় মৃত্যু বলে।

Leave a Reply