তড়িৎ প্রবাহের চৌম্বক ক্রিয়া

কোনো পরিবাহীর মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহিত হলে এর চারপাশে চৌম্বক ক্ষেত্রের সৃষ্টি হওয়াকে তড়িৎ প্রবাহের চৌম্বক ক্রিয়া বলে।

ফ্লেমিং-এর ডান হহ নিয়ম

একটি তড়িৎবাহী তারের তড়িৎ প্রবাহের দিকে ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রসারিত করে অর্ধ মুষ্টিবদ্ধ করা হলে অন্যান্য অঙ্গুলির প্রান্ত উৎপন্ন চৌম্বক ক্ষেত্রের দিক নির্দেশ করবে।

বায়োট-স্যাভার্টের সূত্র

নির্দিষ্ট মাধ্যমে কোনো পরিবাষীর ক্ষুদ্র দৈর্ঘ্যের ভিতর দিয়ে তড়িৎ প্রবাহের ফলে এর আশ- পাশের কোনো বিন্দুতে সৃষ্ট চৌম্বক ক্ষেত্রের মান পরিবাহীর দৈর্ঘ্যের সমানুপাতিক, পরিবাহীর মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহের সমানুপাতিক, পরিবাহীর মধ্যবিন্দু ও ঐ বিন্দুর সংযোজক সরলরেখা পরিবাহীর মধ্যবিন্দুতে স্পর্শকের সাথে যে কোণ উৎপন্ন করে তার sine এর সমানুপাতিক এবং পরিবাহীর মধ্যবিন্দু হতে ঐ বিন্দুর দূরত্বের বর্ণের ব্যস্তানুপাতিক।

অ্যাম্পিয়ারের সূত্র

কোনো বন্ধ পথ বরাবর চৌম্বক ক্ষেত্রের রৈখিক যোজিত ফল, পথটি দ্বারা বেষ্টিত ক্ষেত্রফলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত মোট তড়িৎ প্রবাহের u0 গুণ।

গতিশীল চার্জের ওপর চৌম্বক বল

একটি পরখ চার্জকে যেকোনো বেগে একটি চৌম্বকক্ষেত্রের মধ্যে নিক্ষেপ করা হলে এর ওপর একটি চৌম্বক বল সর্বদা এর গতির দিকে সমকোণে ক্রিয়া করে। এটিই গতিশীল চার্জের ওপর চৌম্বক বল।

ফ্লেমিং-এর বাম হন্ত নিয়ম

চৌম্বক ক্ষেত্রের সাথে লম্বভাবে গতিশীল চার্জের ওপর ক্রিয়াশীল চৌম্বক বলের দিক নির্দেশের জন্য ফ্লেমিং একটি নিয়ম প্রদান করেন। বাম হাতের তর্জনী, মধ্যমা ও বৃদ্ধাঙ্গুলি পরস্পর সমকোণে প্রসারিত করে যদি তর্জনীকে চৌম্বক ক্ষেত্র B-এর দিকে এবং মধ্যমাকে ধনাত্মক চার্জের বেগ v-এর দিকে স্থাপন করা হয় তবে বৃদ্ধাঙ্গুলি চৌম্বক বল F-এর দিক নির্দেশ করবে। গতিশীল চার্জ ধনাত্মক না হয়ে ঋণাত্মক হলে চৌম্বক বলের দিক বিপরীত হবে।

চৌম্বক ক্ষেত্র

কোনো চৌম্বক ক্ষেত্রের দিকের সাথে সমকোণে এক কুলম্ব ধনাত্মক চার্জ প্রতি সেকেন্ডে এক মিটার বেগে গতিশীল হলে এর ওপর ক্রিয়াশীল চৌম্বক বলের মান হচ্ছে ঐ চৌম্বক ক্ষেত্র B এর মান এবং চৌম্বক ক্ষেত্রে স্থাপিত চুম্বকের উত্তর মেরুর ওপর যে দিকে চৌম্বক বল ক্রিয়া করে সে দিকই হচ্ছে চৌম্বক ক্ষেত্রের দিক।

টেসলা

কোনো চৌম্বক ক্ষেত্রের দিকের সাথে লম্বভাবে এক কুলম্ব ধনাত্মক চার্জ প্রতি সেকেন্ডে এক মিটার বেগে গতিশীল হলে যদি এর ওপর ক্রিয়াশীল চৌম্বক বলের মান এক নিউটন হয়, তবে ঐ চৌম্বক ক্ষেত্রের মান এক টেসলা।

লরেঞ্জ বল

কোনো স্থানে একই সময়ে তড়িৎ ক্ষেত্র ও চৌম্বক ক্ষেত্র বিদ্যমান থাকলে সেখানে একটি গতিশীল চার্জের ওপর যে লব্ধি বল ক্রিয়া করে তাকে লরেঞ্জ বল বলে।

হল প্রভাব ও হল বিভব

কোনো পাত আকারের তড়িৎবাহী পরিবাহীকে চৌম্বক ক্ষেত্রের সাথে লম্বভাবে স্থাপন করা হলে তড়িৎ প্রবাহ ও চৌম্বক ক্ষেত্র উভয়ের সাথে লম্ব বরাবর দুই বিপরীত পৃষ্ঠে একটি বিভব পার্থক্য সৃষ্টি হয়, এ ঘটনাকে হল প্রভাব এবং উৎপন্ন বিভব পার্থক্যকে হল বিভব বা হল ভোল্টেজ বলে।

অ্যাম্পিয়ার

শূন্যস্থানে এক মিটার দূরত্বে অবস্থিত অসীম দৈর্ঘ্যের এবং উপেক্ষণীয় প্রস্থচ্ছেদের দুটি সমান্তরাল সরল পরিবাহীর প্রত্যেকটিতে যে পরিমাণ তড়িৎ প্রবাহ চললে পরস্পরের মধ্যে প্রতি মিটার দৈর্ঘ্যে 2×10-7 নিউটন বল ক্রিয়া করে তবে তাকে এক অ্যাম্পিয়ার বলে।

চৌম্বক মধ্যতল

কোনো স্থানে মুক্তভাবে ঝুলন্ত স্থির চুম্বকের চৌম্বক অক্ষ বরাবর এবং ভূ-পৃষ্ঠের সাথে লম্বভাবে কল্পিত তলকে ঐ স্থানের চৌম্বক মধ্যতল বলে।

ভৌগোলিক মধ্যতল

কোনো স্থানে ভৌগোলিক উত্তর ও দক্ষিণ মেরু বরাবর এবং ভূ-পৃষ্ঠের সাথে লম্বভাবে কল্পিত তলকে ঐ স্থানের ভৌগোলিক মধ্যতল বলে।

বিচ্যুতি

কোনো স্থানে মুক্তভাবে স্থাপিত চুম্বক শলাকা ভৌগোলিক উত্তর-দক্ষিণ থেকে যে কোণে বিচ্যুত হয় বা চৌম্বক মধ্যতল ভৌগোলিক মধ্যতলের সাথে যে কোণে অবস্থান করে তাকে ঐ স্থানের বিচ্যুতি বলে।

বিনতি

কোনো স্থানে চৌম্বক মধ্যতলে ভারকেন্দ্রগামী অনুভূমিক অক্ষের সাপেক্ষে উল্লম্বতলে মুক্তভাবে ঘূর্ণনক্ষম একটি চুম্বক শলাকা অনুভূমিকের সাথে যে কোণে নত হয় বা ভূ-চৌম্বক ক্ষেত্র অনুভূমিকের সাথে যে কোণে অবস্থান করে তাকে ঐ স্থানের বিনতি বলে।

ভূ-চৌম্বক ক্ষেত্রের অনুভূমিক উপাংশ

কোনো স্থানে চৌম্বক মধ্যতলে অনুভূমিক দিকে ভূ-চৌম্বক ক্ষেত্রের উপাংশকে ঐ স্থানের ভূ- চৌম্বক ক্ষেত্রের অনুভূমিক উপাংশ বলে।

চুম্বকায়ন

একক আয়তনে চৌম্বক ভ্রামককে চুম্বকায়ন বলে।

ডায়াচৌম্বক পদার্থ

যেসব পদার্থ শক্তিশালী চুম্বক দ্বারা ক্ষীণভাবে বিকর্ষিত হয় বা চৌম্বকক্ষেত্রে স্থাপন করা হলে প্রযুক্ত চৌম্বকক্ষেত্রের বিপরীতে সামান্য চুম্বকত্ব সৃষ্টি হয় তাদেরকে ডায়াচৌম্বক পদার্থ বলে।

প্যারাচৌম্বক পদার্থ

যেসব পদার্থ শক্তিশালী চুম্বক দ্বারা ক্ষীণভাবে আকর্ষিত হয় বা চৌম্বকক্ষেত্রে স্থাপন করা হলে। প্রযুক্ত চৌম্বকক্ষেত্রের দিকে সামান্য চুম্বকত্ব সৃষ্টি হয় তাদেরকে প্যারাচৌম্বক পদার্থ বলে।

ফেরোচৌম্বক পদার্থ

যেসব পদার্থ চুম্বক দ্বারা প্রবলভাবে আকর্ষিত হয় এবং চৌম্বকক্ষেত্রে স্থাপন করা হলে চুম্বকায়নকারী ক্ষেত্রের দিকে শক্তিশালী চুম্বকত্ব সৃষ্টি হয় তাদেরকে ফেরোচৌম্বক পদার্থ বলে।

এন্টিফেরোচৌম্বক পদার্থ

এ সকল পদার্থের অণুগুলোর স্থায়ী চৌম্বক ভ্রামক বিদ্যমান। এরা মূলত অনিয়ত প্যারাচৌম্বক পদার্থ। সকল তাপমাত্রার সাথে এদের (km-1) এর মান পরিবর্তিত হয়।

কুরী তাপমাত্রা

যে তাপমাত্রায় কোনো ফেরোচৌম্বক পদার্থ প্যারাচৌম্বক পদার্থে পরিণত হয় তাকে উক্ত পদার্থের কুরী তাপমাত্রা বলে।

হিসটেরেসিস লুপ

প্রযুক্ত চৌম্বকক্ষেত্র বৃদ্ধির সময় ফেরোচৌম্বক পদার্থের চুম্বকায়ন যে হারে বৃদ্ধি পায় চৌম্বকক্ষেত্র হ্রাসের সময় একই হারে হ্রাস পায় না। অর্থাৎ ফেরোচৌম্বক পদার্থ বিচুম্বকায়িত হতে শৈথিল্য প্রদর্শন করে। এ ঘটনাকে হিসটেরেসিস বলে এবং চুম্বকায়ন রেখার পূর্ণ চক্রকে হিসটেরেসিস লুপ বলে।

স্থায়ী চুম্বক

ফেরো বা ফেরিচৌম্বক পদার্থকে উত্তপ্ত করলে এর ডোমেইন ভেঙ্গে অণুচুম্বকগুলো ইতস্তত বিক্ষিপ্তভাবে সজ্জিত হয়। এ অবস্থায় একে শীতল করলে অণুগলো সম্পূর্ণ সারিবদ্ধ অবস্থায় কঠিন অবস্থা প্রাপ্ত হয়। এদের স্থায়ী চুম্বক বলে।

তড়িৎ চুম্বক

একটি বৃত্তাকার কুণ্ডলী বা সলিনয়েডের মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহিত হলে এর মধ্যে চৌম্বক ক্ষেত্র সৃষ্টি হয়। একে তড়িৎ চুম্বক বলে।

Leave a Reply