অর্ধ-পরিবাহী

যে সকল পদার্থের তড়িৎ পরিবহন ক্ষমতা পরিবাহী এবং অন্তরকের মাঝামাঝি তাদেরকে অর্ধ- পরিবাহী বলে। এদের আপেক্ষিক রোধ 10 ^-4 Ohm.m থেকে 10^6 Ohm*m এর মধ্যে। তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে পরিবাহীর রোধ বৃদ্ধি পায় কিন্তু অর্ধপরিবাহীর রোধ হ্রাস পায়।

শক্তি ব্যান্ড

কোনো কঠিন পদার্থের কেলাসে বিভিন্ন পরমাণুতে একই কক্ষপথে আবর্তনরত ইলেকট্রনগুলোর শক্তি যে সীমা বা পাল্লার মধ্যে অবস্থান করে, তাকে শক্তি ব্যান্ড বলে।

নিষিদ্ধ ব্যান্ড

নিষিদ্ধ ব্যান্ড শক্তির যে সীমার মধ্যে কোনো ইলেকট্রন থাকতে পারে না তাকে নিষিদ্ধ ব্যান্ড বলে।

যোজন ব্যান্ড

পরমাণুর সর্ববহিঃস্থ কক্ষপথের ইলেকট্রনগুলো যোজনী বন্ধনে অংশগ্রহণ করে বলে এদেরকে যোজন ইলেকট্রন বলে। একটি কেলাসে পরমাণুগুলোর যোজন ইলেকট্রনসমূহ যে শক্তি পাল্লার মধ্যে অবস্থান করে তাকে যোজন ব্যান্ড বলে। যোজন ব্যান্ড ইলেকট্রনদ্বারা পূর্ণ বা আংশিক পূর্ণ হতে পারে।

পরিবহন ব্যান্ড

কোনো কেলাসে সর্ব বহিঃস্থ শক্তি ব্যান্ড আংশিক পূর্ণ হলে ঐ ব্যান্ডের ইলেকট্রনগুলো তড়িৎ পরিবহনে অংশ গ্রহণ করে। এদেরকে পরিবহন ইলেকট্রন বলে। পরিবহন ইলেকট্রন যে শক্তি পাল্লার মধ্যে অবস্থান করে তাকে পরিবহন ব্যান্ড বলে।

অন্তরক

অন্তরকে যোজন ব্যান্ড পূর্ণ থাকে এবং পরিবহন ব্যান্ডে কোনো ইলেকট্রন থাকে না। পরিবহন ও যোজন ব্যান্ডের মধ্যে শক্তি ব্যবধান খুব বেশি থাকে।

বিশুদ্ধ বা অন্তর্জাত অর্ধ পরিবাহী

যেসব অর্ধ-পরিবাহী কোনো একটি নির্দিষ্ট মৌলিক পদার্থ দিয়ে গঠিত, অন্য কোনো মৌলিক পদার্থ ভেজাল হিসেবে থাকে না তাদেরকে বিশুদ্ধ বা অন্তর্জাত অর্ধ পরিবাহী বলে।

অবিশুদ্ধ বা বহির্জাত অর্ধ-পরিবাহী

যেসব অর্ধ-পরিবাহীতে পরিবাহিতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে সামান্য পরিমাণ সুবিধাজনক নির্দিষ্ট মৌলিক পদার্থ সুনিয়ন্ত্রিতভাবে ভেজাল দেয়া হয় তাদেরকে অবিশুদ্ধ বা বহির্জাত অর্ধ-পরিবাহী বলে।

ডোপায়ন

যে পদার্থ ভেজাল হিসেবে দেয়া হবে তার বাষ্প উত্তপ্ত অবস্থায় বিশুদ্ধ অর্ধ-পরিবাহীর মধ্য দিয়ে চালনা করা হয়। বিশুদ্ধ অর্ধ-পরিবাহীতে ভেজাল দেয়ার এ প্রক্রিয়াকে ডোপায়ন (doping) বলে।

p-টাইপ অর্ধ-পরিবাহী

বহিঃস্থ কক্ষপথে তিনটি যোজন ইলেকট্রন বিশিষ্ট পরমাণু বা পর্যায় সারণীর তৃতীয় গ্রুপের মৌল অতি সামান্য পরিমাণ সিলিকন বা জার্মেনিয়াম অর্ধ-পরিবাহীতে ভেজাল দেয়া হলে তাকে p-টাইপ অর্ধ-পরিবাহী বলে।

n-টাইপ অর্ধ-পরিবাহী

বহিঃস্থ কক্ষপথে পাঁচটি ইলেকট্রন আছে বা পর্যায় সারণীর পঞ্চম গ্রুপের মৌল অতি সামান্য পরিমাণ সিলিকন বা জার্মেনিয়াম অর্ধ-পরিবাহীতে অতি সামান্য পরিমাণ ভেজাল দেয়া হলে তাকে n-টাইপ অর্ধ-পরিবাহী বলে।

p-n জংশন বা অর্ধ-পরিবাহী ডায়োড

একটি p-টাইপ ও একটি n-টাইপ অর্ধ-পরিবাহী পরস্পরের সাথে যুক্ত করা হলে এ সংযোগস্থলকে p-n জংশন বলে। একে অর্ধ-পরিবাহী ডায়োডও বলে।

সম্মুখী বায়াস

তড়িৎ উৎসের ধনাত্মক ও ঋণাত্মক প্রান্তকে যথাক্রমে জংশনের p ও n- প্রান্তের সাথে যুক্ত করা হলে তাকে সম্মুখী বায়াস বলে। সম্মুখী বায়াসে জংশনের মধ্য দিয়ে যে তড়িৎ প্রবাহ চলে তাকে সম্মুখী প্রবাহ বলে।

বিমুখী বায়াস

তড়িৎ উৎসের ঋণাত্মক ও ধনাত্মক প্রান্তকে যথাক্রমে জংশনের p ও n- প্রান্তের সাথে যুক্ত করা হলে তাকে বিমুখী বায়াস বলে। বিমুখী বায়াসে জংশনের মধ্য দিয়ে যে তড়িৎ প্রবাহ চলে তাকে বিমুখী প্রবাহ বলে।

জেনার বিভব

বিমুখী বায়াসে যে বিভবের জন্য p-n জংশনের বিভব প্রাচীর ভেঙ্গে যায় বা বিনাশ হয় তাকে ভাঙ্গন বা বিনাশী বিভব (breakdown voltage) বা জেনার বিভব (Zener voltage) বলে।

গতীয় রোধ

একটি নির্দিষ্ট বায়াস বিভবে এর মানের ক্ষুদ্র পরিবর্তন ও আনুষঙ্গিক প্রবাহের মানের পরিবর্তনের অনুপাতকে ঐ নির্দিষ্ট বায়াস বিভবে ডায়োডের গতীয় রোধ বলে।

রেক্টিফায়ার

দিকপরিবর্তী প্রবাহকে একমুখী প্রবাহে পরিণত করাকে বলা হয় রেটিফিকেশন এবং যে বর্তনীর সাহায্যে দিকপরিবর্তী প্রবাহকে একমুখী প্রবাহে পরিণত করা হয়, তাকে বলা হয় রেক্টিফায়ার।

ট্রানজিস্টর

তিন প্রান্তবিশিষ্ট অর্ধপরিবাহী যন্ত্র, যার সাহায্যে বহির্মুখী প্রবহ, বিভব ও ক্ষমতা অন্তর্মুখী প্রবাহ দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা যায় এবং বিবর্ধক ও উচ্চ গতির সুইচ হিসাবে ব্যবহার করা যায় তাকে ট্রানজিস্টর বলে। অথবা, দুটি p-n জংশন যুক্ত অর্ধ-পরিবাহীকে ট্রানজিস্টর বলে।

pnp ট্রানজিস্টর

একটি n-টাইপ অর্ধ-পরিবাহীর পাতলা স্তরের দুই পাশে দুটি p-টাইপ অর্ধ-পরিবাহী যুক্ত করে pnp ট্রানজিস্টর তৈরি করা হয়।

npn ট্রানজিস্টর

একটি p-টাইপ অর্ধ-পরিবাহীর পাতলা স্তরের দুই পাশে দুটি n-টাইপ অর্ধ-পরিবাহী যুক্ত করে npn ট্রানজিস্টর তৈরি ব্যবহার করা হয়।

নিঃসারক

ট্রানজিস্টরের দুই পাশের একই জাতীয় অবিশুদ্ধ অর্ধ-পরিবাহীর যে অংশের ডোপায়ন অপর অংশ অপেক্ষা বেশি তাকে নিঃসারক বলে। এ অংশকে সম্মুখী বায়াস করা হলে এটি চার্জ বাহক নিঃসরণ করে।

সংগ্রাহক

ট্রানজিস্টরের দুই প্রান্তের একই জাতীয় অবিশুদ্ধ অর্ধ-পরিবাহীর যে অপেক্ষা কম তাকে সংগ্রাহক বলে। এ অংশকে বিমুখী বায়াস করা হলে এটি চার্জ বাহক সংগ্রহ করে।

পীঠ বা ভূমি

ট্রানজিস্টরের নিঃসারক ও সংগ্রাহকের মাঝের পাতলা অংশকে পীঠ বা ভূমি বলে। এটি নিঃসারক থেকে সংগ্রাহকে চার্জ বাহকের গমন নিয়ন্ত্রণ করে।

বিবর্ধক

যে তড়িৎ যন্ত্রের সাহায্যে দুর্বল তড়িৎ সংকেতকে সবল সংকেতে পরিণত করা হয়, তাকে বিবর্ধক বলে।

প্রবাহ বিবর্ধন গুণক বা প্রবাহ লাভ

আউটপুট প্রবাহের পরিবর্তন ইনপুট প্রবাহের পরিবর্তনের কত গুণ বা ইনপুট প্রবাহের সাপেক্ষে আউটপুট প্রবাহের পরিবর্তনের হারকে প্রবাহ বিবর্ধন গুণক বা প্রবাহ লাভ বলে।

বিভব লাভ

ট্রানজিস্টরের আউটপুট বিভবের পরিবর্তন ও ইনপুট বিভবের পরিবর্তনের অনুপাতকে বিভব লাভ বলে।

বাইনারি অপারেশন

এ পদ্ধতির ভিত্তি হচ্ছে 2। এ পদ্ধতিতে মাত্র দুটি অঙ্ক 0 ও 1 ব্যবহৃত হয়। এ অঙ্ক দুটিকে বলে বাইনারি বা সংক্ষেপে বিট।

সংখ্যা পদ্ধতি

সাংকেতিক চিহ্নের সাহায্যে কোনো কিছুর পরিমাণ গণনা ও হিসাব করার পদ্ধতিকে সংখ্যা পদ্ধতি বলে।

লজিক গেট

যৌক্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে সক্ষম ইলেকট্রনিক বর্তনীকে লজিক গেট বলে।