প্রসঙ্গ কাঠামো

কোনো বস্তুর অবস্থান, স্থিতি বা গতীয় অবস্থা নির্ণয়ের জন্য ত্রিমাত্রিক স্থানে যে সুনির্দিষ্ট স্থানাঙ্ক ব্যবস্থা বিবেচনা করা হয় এবং যার সাপেক্ষে বস্তুটির অবস্থান, স্থিতি বা গতীয় অবস্থা নির্ণয় করা হয় তাকে প্রসঙ্গ কাঠামো বলে।

জড় প্রবক্তা কাঠামো

যে প্রসঙ্গ কাঠামোতে নিউটনের গতিসূত্রগুলো প্রয়োগ করা যায়, তাকে জড় প্রসঙ্গ কাঠমো বলে।

আপেক্ষিক তত্ত্বের প্রথম ও দ্বিতীয় স্বীকার্য

আপেক্ষিক তত্ত্ব দুটি স্বীকার্যের উপর প্রতিষ্ঠিত। স্বীকার্য দুটি হচ্ছে-
আপেক্ষিকতার নীতি: সকল জড় প্রসঙ্গ কাঠামোতে পদার্থবিজ্ঞানের সূত্রগুলো একই থাকে।
আলোর দ্রুতি ধ্রুবতার নীতি: সকল জড় প্রসঙ্গ কাঠামোতে শূন্যস্থানে আলোর দ্রুতি c একই থাকে।

সময় সম্প্রসারণ বা দীর্ঘায়ন

পর্যবেক্ষকের সাপেক্ষে স্থির কোনো ঘটনা যেসময় ধরে ঘটতে দেখবে, ঘটনাটি পর্যবেক্ষকের সাপেক্ষে গতিশীল হলে অধিক সময় ধরে ঘটতে দেখবে অর্থাৎ সময় বিলম্বিত হবে। এ ঘটনাকে সময় সম্প্রসারণ বা কাল দীর্ঘায়ন বলে।

দৈর্ঘ্য সংকোচন

পর্যবেক্ষকের সাপেক্ষে স্থির কোনো দন্ডের দৈর্ঘ্য অপেক্ষা পর্যবেক্ষকের সাপেক্ষে দণ্ডটি দৈর্ঘ্য বরাবর গতিশীল হলে নির্ণীত দৈর্ঘ্য কম হবে অর্থাৎ দৈর্ঘ্য সংকুচিত হবে। এ ঘটনাকে দৈর্ঘ্য সংকোচন বলে।

ভরের আপেক্ষিকতা

পর্যবেক্ষক এবং বস্তুর মধ্যে আপেক্ষিক গতি থাকার কারণে বস্তুর ভর পরিমাপে যে ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয় তাকে ভরের আপেক্ষিকতা বলে।

মৌলিক বল

মৌলিক বল হচ্ছে এমন একটা বল যা সংস্পর্শ ব্যতীত পরস্পরের মিথস্ক্রিয়ায় একটি বস্তু অপর একটি বস্তুর ওপর প্রয়োগ করে।

মহাকর্ষ বল

যে কোনো দুইটি বস্তু পরস্পরকে একটি বল দ্বারা আকর্ষণ করে, একে মহাকর্ষ বল বলে। মৌলিক বলসমূহের মধ্যে এটি দুর্বলতম বল৷

তাড়িতচৌম্বক বল

দুটি আধানের মধ্যে ক্রিয়াশীল বলকে তাড়িত বল এবং দুটি চুম্বক মেরুর মধ্যে ক্রিয়াশীল বলকে চৌম্বক বল বলে। তাড়িত বল ও চৌম্বক বলকে একত্রে তাড়িতচৌম্বক বল বলে। এর সবলতা মাঝামাঝি ধরনের।

সবল নিউক্লিয় বল

যে আকর্ষণ বল প্রোটন-নিউট্রন তথা নিউক্লিয় কণা বা নিউক্লিয়নগুলোকে একত্রিত করে নিউক্লিয়াস গঠন করে তাকে সবল নিউক্লিয় বল বলে। এর পাল্লা 10^-15 m। মেসন নামক এক প্রকার মৌলিক কণা বিনিময়ের মাধ্যমে নিউক্লিয়নগুলোর মধ্যে সবল নিউক্লীয় বলের উদ্ভব ঘটে। মৌলিক বলসমূহের মধ্যে এটি সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী।

দুর্বল নিউক্লীয় বল

প্রোটন-নিউট্রন অনুপাত যথাযথ না হলে নিউক্লিয়াসের অস্থিতিশীলতা বা বিটা ক্ষয়ের জন্য যে বল দায়ী তাকে দুর্বল নিউক্লিয় বল বলে। মাধ্যমিক বোসন বিনিময়ের ফলে এ বলের উদ্ভব। এর পাল্লা 10^-17m এবং সবলতা সবল ও তাড়িতচৌম্বক বল অপেক্ষা কম কিন্তু মহাকর্ষ বল অপেক্ষা বেশি।

আলোর তেজকণাবাদ

তেজকণাবাদ অনুসারে, আলোক রশ্মি বা যেকোনো ধরনের বিকিরণ কখনই ধারাবাহিক তরঙ্গ নয়, সর্বত্রই তা বিচ্ছিন্নভাবে প্রবাহিত হচ্ছে; প্রত্যেক তেজকণা এক-একটি অবিভাজ্য একক।

ফোটন

আলোক রশ্মি বা যে কোনো ধরনের বিকিরণের শক্তি যে গুচ্ছ বা প্যাকেট বা কোয়ান্টা হিসেবে নির্গত হয় তাকে ফোটন বলে।

এক্স রশ্মি

দ্রুত গতিসম্পন্ন ইলেকট্রন কোনো শক্ত ধাতুকে আঘাত করলে তা থেকে উচ্চ ভেদনক্ষমতা সম্পন্ন এক প্রকার বিকিরণ নির্গত হয়, একে এক্স রশ্মি বলে।

আলোক তড়িৎ ক্রিয়া

যথোপযুক্ত উচ্চ কম্পাঙ্কবিশিষ্ট আলোক রশ্মি কোনো ধাতব পৃষ্ঠে আপতিত হলে তা থেকে ইলেকট্রন নির্গত হওয়ার ঘটনাকে তড়িৎ ক্রিয়া বা ফটো তড়িৎ ক্রিয়া এবং নির্গত ইলেকট্রনকে ফটো ইলেকট্রন বলে।

সূচন কম্পাঙ্ক

কোনো ধাতব পদার্থে সর্বনিম্ন যে কম্পাঙ্কের রশ্মি আপতিত হলে তা থেকে ফটো ইলেকট্রন নির্গত হয় বা যে কম্পাঙ্ক অপেক্ষা কম কম্পাঙ্কের রশ্মি আপতিত হলে তা থেকে ইলেকট্রন নির্গত হয় না সেই কম্পাঙ্ককে ঐ ধাতব পদার্থের সূচন বা প্রারম্ভ কম্পাঙ্ক বলে।

ডি ব্রগলীর তরঙ্গ

পদার্থ গঠনকারী বিচ্ছিন্ন কণাসমূহ কণাধর্মের পাশাপাশি যথোপযোগী অবস্থায় তরঙ্গ ধর্মও প্রকাশ করবে। এটি ডি ব্রগলী তরঙ্গ নামে পরিচিত।

কম্পটন প্রভাব

শক্তিশালী ফোটনের সাথে পদার্থ কণা ইলেকট্রনের সংঘর্ষ ঘটলে ফোটন ইলেকট্রনকে কিছু গতিশক্তি প্রদান করবে ফলে নিজে কিছু শক্তি হারাবে। এভাবে বিক্ষিপ্ত ফোটনের শক্তি আপতিত ফোটনের শক্তি অপেক্ষা কম হবে। এটিই কম্পটন প্রভাব নামে পরিচিত।

Leave a Reply